Logo
Logo
×

লাইফস্টাইল

সূর্য কেন অস্ত যাওয়ার সময় কমলা বা লাল হয়

Icon

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৩৩ পিএম

সূর্য কেন অস্ত যাওয়ার সময় কমলা বা লাল হয়

​সূর্যাস্ত বা সূর্যোদয়ের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য কে না উপভোগ করে? আকাশে যখন কমলা, লাল, গোলাপী বা সোনালী রঙের ছটা খেলা করে, তখন তা এক অসাধারণ দৃশ্যের সৃষ্টি করে। কিন্তু দিনের বেলায় যে সূর্যকে আমরা হলুদ বা সাদা দেখি, অস্ত যাওয়ার সময় কেন তার রং এমন নাটকীয়ভাবে পাল্টে যায়? এর মূল কারণটি লুকিয়ে আছে পদার্থবিজ্ঞানের একটি ঘটনায়, যার নাম 'র‍্যালে স্ক্যাটারিং' (Rayleigh Scattering)।

​১.  বায়ুমণ্ডল এবং আলোর বিচ্ছুরণ (Rayleigh Scattering)

​সূর্যের আলো হলো আসলে সাতটি ভিন্ন রঙের আলোর সমষ্টি (বেগুনি, নীল, আকাশি, সবুজ, হলুদ, কমলা, ও লাল)। এর মধ্যে প্রতিটি রঙের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বা ঢেউয়ের দৈর্ঘ্য আলাদা।

নীল আলোর বৈশিষ্ট্য: বেগুনি এবং নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে ছোট।

লাল আলোর বৈশিষ্ট্য: লাল এবং কমলার আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বড়।

যখন সূর্যের আলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, তখন বায়ুমণ্ডলে থাকা নাইট্রোজেন, অক্সিজেন এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র কণাগুলির সাথে ধাক্কা খায়। এই ধাক্কার ফলে আলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনাকেই বলে র‍্যালে স্ক্যাটারিং।

নিয়মটি হলো: তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত ছোট, বিচ্ছুরণ তত বেশি হবে।

দিনের বেলায় যখন সূর্য মাথার ওপরে থাকে, তখন নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ছোট হওয়ায় এটি বায়ুমণ্ডলের কণা দ্বারা সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ে। এই কারণেই দিনের বেলা আমরা চারদিকে আকাশকে নীল দেখি।

​২.  দীর্ঘ পথযাত্রা: লাল রঙের রহস্য

​সূর্যাস্তের সময় সূর্যের আলো কেন লাল বা কমলা দেখায়, এর ব্যাখ্যা র‍্যালে স্ক্যাটারিং-এর নিয়মের মধ্যেই নিহিত।

আলোর পথের পরিবর্তন: যখন সূর্য দিগন্তের কাছাকাছি চলে আসে (অর্থাৎ, সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সময়), তখন সূর্যের আলোকরশ্মিকে আমাদের চোখে পৌঁছানোর জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি পথ পাড়ি দিতে হয়।

নীল আলোর বিদায়: এই দীর্ঘ পথে, ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো বিশেষ করে নীল, বেগুনি এবং সবুজ বায়ুমণ্ডলের কণা দ্বারা বারবার ধাক্কা খেয়ে এত বেশি ছড়িয়ে পড়ে যে তা আমাদের চোখ পর্যন্ত আর পৌঁছাতে পারে না। অর্থাৎ, নীল আলো পথেই হারিয়ে যায় বা বিচ্ছুরিত হয়ে যায়।

লাল আলোর টিকে থাকা: অন্যদিকে, লাল এবং কমলা আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বড় হওয়ায় তারা বায়ুমণ্ডলের কণা দ্বারা কম বিচ্ছুরিত হয়। ফলে, যখন অন্যান্য রঙের আলো পথেই হারিয়ে যায়, তখন এই অপেক্ষাকৃত বড় তরঙ্গদৈর্ঘ্যের লাল এবং কমলা আলোই সবচেয়ে কম বাধা পেয়ে সরাসরি আমাদের চোখে এসে পৌঁছায়।

​এই কারণেই সূর্যাস্তের সময় দিগন্তের সূর্যকে কমলা, লাল বা রক্তিম দেখায়।

৩.  ধূলিকণা এবং বায়ুদূষণের প্রভাব

.আকাশে যখন ধূলিকণা, ধোঁয়া, বা মেঘের কণা বেশি থাকে, তখন সূর্যাস্তের রং আরও তীব্র এবং উজ্জ্বল দেখায়।

.এই কণাগুলো বড় হওয়ায় এরা লাল এবং কমলা আলোকেও কিছুটা ছড়িয়ে দিতে পারে, যা রঙের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দেয়।

.আর্দ্রতা এবং ধোঁয়াপূর্ণ সন্ধ্যায় এই কারণে প্রায়শই সবচেয়ে নাটকীয় লাল-কমলা সূর্যাস্ত দেখা যায়।

রাতে ঘুম কম হলে কমতে পারে পুরুষের শুক্রাণুর মান

সংক্ষেপে বলা যায়, সূর্যাস্তের লাল রং প্রকৃতির একটি সহজ পাঠ, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, পৃথিবী নামের এই গ্রহে আমরা আলো এবং বায়ুমণ্ডলের এক চমৎকার মিথস্ক্রিয়ার মধ্যে বাস করি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার