কোন কোন খাবার মানুষের শরীরে সুগন্ধ এবং দুর্গন্ধ তৈরি করে?
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:২০ এএম
আপনি জানেন কি রসুন, মাংসসহ নানা ধরনের খাবার এবং এমনকি উপবাস (ফাস্টিং) আপনার শরীরের গন্ধ বা ঘ্রাণকে পরিবর্তন করতে পারে।
আবার অন্য একজন ব্যক্তির কাছে আপনি ঠিক কতটা আকর্ষণীয় সে বিষয়েও প্রভাব ফেলে বিভিন্ন খাবার।
প্রতিটি মানুষের আঙুলের ছাপ যেমন ইউনিক বা অনন্য, তেমনি প্রতিটি মানুষের শরীরের ঘ্রাণও অনন্য।
আমাদের ব্যক্তিত্ব যেমন: আমরা ঠিক কতটা বহির্মুখী বা সংবেদনশীল এবং আমাদের মানসিক অবস্থা এবং স্বাস্থ্যসহ সবকিছুই কিন্তু শরীরের ঘ্রাণকে প্রভাবিত করতে পারে।
স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব স্টারলিং এর সোশাল সাইকোলোজির অধ্যাপক ক্রেইগ রবার্টস বলেন, " গত কয়েক দশকের গবেষণায় এটা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, আমাদের ঘ্রাণশক্তি আমাদের জিন, হরমোন, স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যবিধির অভ্যাসের মাধ্যমে গঠিত হয়।"
তিনি বলেন, " আমরা পুরুষ বা মহিলা, তরুণ বা বৃদ্ধ, সুস্থ বা অসুস্থ, সুখী অথবা দুঃখী যাই হই না কেন, ঘ্রাণেই আমাদের শরীরের সেই অবস্থার প্রতিফলন হয়।"
এগুলোর অনেক কিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, কিন্তু কিছু বিষয়কে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
যেসব বিষয় আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের ডায়েট বা খাদ্যাভ্যাস।
আমরা যেসব খাবার খেয়ে থাকি সেগুলো কেবল আমাদের শরীরের ঘ্রাণই পরিবর্তন করে না বরং অন্য কারো কাছে আমরা ঠিক কতটা আকর্ষণীয় হবো সেটিও নির্ধারণ করে।
এই খাতের গবেষণা ধীরে ধীরে নতুন নতুন আবিষ্কারের দিকে যাচ্ছে।
বিংহ্যামটনের স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউইয়র্কের হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস স্টাডিজের সহকারি অধ্যাপক লিনা বেগডাসি ব্যাখ্যা করেছেন যে, খাবার প্রধানত দুই উপায়ে আমাদের শরীরের ঘ্রাণকে প্রভাবিত করে।
এই দুটি উপায়ের একটি হলো ডাইজেস্টিভ সিস্টেম বা পাচনতন্ত্র এবং আরেকটি হলো আমাদের ত্বকের উপরের চামড়ার মাধ্যমে।
প্রথম উপায়ে, যখন আমাদের খাবার হজম হয় তখন অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া এই খাবারটা ভেঙে ফেলে।
এই প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে খাবারে অবস্থিত রাসায়নিক এবং ব্যাকটেরিয়া গ্যাস তৈরি করে যেগুলো আনস্টেবল বা অস্থির অণু।
যা কিনা শরীর থেকে খাবার গ্রহণের সময় একই ফর্মে বা আকারে নির্গত হয়। এই কারণে প্রায়ই মানুষের মুখের দুর্গন্ধ হয়। এই অবস্থাকে বলা হয় 'হ্যালিটোসিস'।
পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বব্যাপী প্রায় এক-তৃতীয়াংশ প্রাপ্তবয়স্ক কোনো না কোনোভাবে এই রোগে ভুগে থাকেন। যদিও এর অন্যান্য কারণও থাকতে পারে।
দ্বিতীয় উপায়ে ত্বকের মাধ্যমে শরীরের ঘ্রাণ প্রভাবিত হয়।
যখন খাবারের রাসায়নিক উপাদানগুলো শরীরে হজম হয় এবং ভেঙ্গে যায় তখন রক্তের মাধ্যমে এদের কিছু অংশ শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে যায়।
এই পদার্থগুলোর কিছু অংশ ত্বকের মাধ্যমে ঘাম রূপে নির্গত হয়। সেখানে তারা ত্বকের ব্যাকটেরিয়ার সাথে মিলিত হয়ে দুর্গন্ধ তৈরি করে।
এটা লক্ষ্যণীয় যে, ঘামের নিজস্ব কোনো ঘ্রাণ নেই। কিন্তু যখন ঘাম ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসে তখনই এটা দুর্গন্ধ তৈরি করে।
বিভিন্ন ধরনের খাবারে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক যৌগ থাকে। যা শরীরের বিভিন্ন অংশকে প্রভাবিত করে।
কিন্তু প্রায়ই সবসময়ই সালফারের কারণে তীব্র বা জোরালো এবং অপ্রীতিকর তীব্র দুর্গন্ধ হয়।
কিন্তু মজার বিষয় হলো, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নির্দিষ্ট কিছু সালফারযুক্ত যৌগ কখনো কখনো একজন মানুষকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে।
ফলমূল এবং শাকসবজী
ব্রোকলি, বাঁধাকপি, ব্রাসেলস স্প্রাউটস এবং ফুলকপি হেলদি ডায়েট বা স্বাস্থ্যকর খাবারের অংশ হিসেবে বিবেচিত।
কিন্তু এগুলোতে সালফার যৌগ বেশি থাকে। এ কারণেই প্রায়ই এগুলো থেকে পচা ডিমের মতো গন্ধ পাওয়া যায়।
নিউট্রিশনাল থেরাপিস্ট কেরি বেসনের মতে, যখন এই সালফারযুক্ত যৌগগুলো রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং ত্বকের ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসে তখনই ঘামে তীব্র বা অপ্রীতিকর গন্ধ হয়।
ক্রুসিফেরাস সবজীর মতো রসুন এবং পেঁয়াজও আমাদের নিঃশ্বাস এবং ঘামের গন্ধকে প্রভাবিত করে।
কারণ যখন এই খাবারগুলো হজম হয় তখন এগুলো ডায়ালাইল ডাইসালফাইড এবং অ্যালাইল মিথাইল সালফাইডের মতো দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী যৌগ তৈরি করে।
(এই ক্রুসিফেরাস সবজী বলতে মূলত বোঝায়, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রোকলির মতো সবজি যেগুলোতে ফুলের চারটি পাঁপড়ি ক্রুশ বা ক্রসের মতো আকার ধারণ করে।)
বিভিন্ন সময়ে শরীর থেকে এই যৌগগুলো নির্গত হয়।
কিছু কিছু যৌগ গ্রহণের পরপরই নির্গত হয় অন্যদিকে অ্যালাইল মিথাইল সালফাইড প্রায় ৩০ মিনিট পরে সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছায়।
মজার বিষয় হলো, বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, রসুন মুখে দুর্গন্ধ তৈরি করতে পারে কিন্তু এটি শরীরের ঘামের ঘ্রাণকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘাম সংগ্রহ করার জন্য ৪২ জন পুরুষ তাদের বগলের নিচে ১২ ঘণ্টাব্যাপী সুতির প্যাড পড়েছিলেন।
তাদের মধ্যে কেউ কেউ অল্প পরিমাণে রসুন খেয়েছিলেন, কেউ আবার বেশি খেয়েছিলেন। আবার কেউ কেউ রসুনের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করেছিলেন।
এরপর ৮২ জন নারীকে ওই প্যাডের ঘ্রাণ নিয়ে রেটিং দিতে বা মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছিল।
প্যাডের এই গন্ধ ঠিক কতখানি মনোরম, কতখানি আকর্ষণীয়, কতটা ডমিনেটিং বা প্রভাবশালী এবং কতখানি তীব্র তার ওপর ভিত্তি করে রেটিং দেওয়া হয়েছিল।
ফলাফলে দেখা গেছে, যারা কম রসুন খেয়েছেন তাদের ঘামের গন্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো পার্থক্য দেখা যায়নি।
কিন্তু যারা বেশি রসুন খেয়েছেন তাদের অনেক বেশি আকর্ষণীয় এবং আকাঙ্ক্ষিত বলে রেটিং দেওয়া হয়েছিল।
এমনকি যারা গার্লিক সাপ্লিমেন্ট বা রসুনের পরিপূরক গ্রহণ করেছিলেন তাদেরও আরো আকর্ষণীয় বলে রেটিং করা হয়েছিল।
এই গবেষণা পরিচালনাকারী গবেষক জ্যান হেভলক চেক রিপাবলিকের চার্লস ইউনিভার্সিটিতে হিউম্যান এথিকস অ্যান্ড কেমিকেল কমিউনিকেশন বা মানব নীতিশাস্ত্র এবং রাসায়নিক যোগাযোগ বিভাগে কাজ করেন।
তারা বলেন, " আমরা গবেষণার ফলাফলে সত্যি এতোই বিস্মিত হয়েছি যে তিনবার আমরা গবেষণাটির পুনরাবৃত্তি করেছি।"
জন হাউলেট-প্যাকার্ড বিশ্বাস করেন, রসুনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
সম্ভবত এই কারণেই নারীরা বেশি রসুন খাওয়া পুরুষদের ঘ্রাণ পছন্দ করেন।
বিভিন্ন উপায়ে কিছু সবজী আমাদের ঘ্রাণ শক্তিকে প্রভাবিত করে।
উদাহরণস্বরূপ: অ্যাসপারাগাস গাছে অ্যাসপারাগাস এসিড নামে যৌগ থাকে। যখন শরীরে এটা হজম হয় তখন তা মিথানেথিওল এবং ডাইমেথাইল সালফাইড যৌগ তৈরি করে।
এই কেমিকেল বা রাসায়নিকগুলোই আমাদের শরীরের ঘাম এবং প্রস্রাবের স্বতন্ত্র ঘ্রাণের জন্য দায়ী।
সালফার যৌগগুলো খুবই উদ্বায়ী যৌগ অর্থাৎ এরা সহজেই বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।
এমনকি এগুলোর গন্ধ বাথরুমেও সহজেই চিহ্নিত করা যায় বা পাওয়া যায়। এই গন্ধ সাধারণত পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয় বা টিকে থাকে।
সবার মধ্যে এই ঘ্রাণ পাওয়া যাবে বিষয়টি এমন নয়।
বিভিন্ন গবেষণায় বিভিন্ন ফলাফল পাওয়া গেছে।
১৯৫০ এর দশকে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০ শতাংশেরও কম মানুষ এই ঘ্রাণ অনুভব করেছেন।
অন্যদিকে, ২০১০ সালে পরিচালিত এক গবেষণায় পাওয়া গেছে, ৯০ শতাংশের বেশি অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে এই গন্ধ উপস্থিত ছিল।
এর থেকে বোঝা যায়, এটা সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট নয়।
মজার বিষয় হলো, সবাই এই ঘ্রাণ শনাক্ত করতে পারে না। কারো শরীরে প্রস্রাবের মতো গন্ধ হবে কিনা তা তার জেনেটিকস বা বংশগতির ওপর নির্ভর করে।
তবে যখন সব ধরনের ফল এবং সবজী খাওয়ার কথা আসে, তখন এগুলো বেশি খেলে শরীরের ঘ্রাণ আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে।
অস্ট্রেলিয়াতে ২০১৭ সালে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব পুরুষরা অনেক বেশি ফল এবং সবজী খান তাদের শরীর থেকে অনেক মনোরম, ফলের স্বাদের মতো এবং মিষ্টি ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
এই গবেষণায় আরো দেখা গেছে, যাদের ত্বকের রং হালকা হলুদ অর্থাৎ যাদের ক্যারোটিনয়েডের পরিমাণ বেশি, তাদের অন্যরা বেশি আকষর্ণীয় বলে মনে করে।
(গাজর, কুমড়া, টমেটো এবং পেঁপের মতো ফলের মধ্যে ক্যারোটিনয়েড পাওয়া যায়)
যারা তাদের খাদ্যাভ্যাসে বা ডায়েটে পরিমিত পরিমাণে চর্বি, মাংস, ডিম এবং টফু রেখেছিলেন তাদের ঘামে বেশি মনোরম ঘ্রাণ ছিল।
বিপরীতে যারা কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেয়েছিলেন তাদের কম আকর্ষণীয় হিসেবে রেটিং বা মূল্যায়ন করা হয়েছিল।
মাছ এবং মাংস
মাংস এবং মাছও শরীরের দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে। কারণ শরীর প্রাণিজ প্রোটিনকে অ্যামাইনো এসিড এবং চর্বিতে রূপান্তরিত বা ভেঙে ফেলে।
এই অ্যামাইনো এসিড এবং চর্বি ঘামে নির্গত হয় এবং ত্বকের ব্যাকটেরিয়ার সাথে মিলিত হয়ে দুর্গন্ধ তৈরি করে।
উদাহরণস্বরূপ: মাছ এবং বিনস বা মটরশুঁটি জাতীয় খাবার শরীরে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ এতে ট্রাইমিথাইলামাইন থাকে যেটি একটি অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত যৌগ।
নিউট্রিশনাল থেরাপিস্ট কেরি বেসন বলেন, এটি 'ট্রাইমেথাইলামাইনুরিয়া' নামের একটি স্বাস্থ্যগত অবস্থা। যেটি মাছের সিনড্রোম নামেও পরিচিত।
মিজ বেসন বলেন, এই পরিস্থিতি তৈরি হয় যখন শরীর ট্রাইমেথাইলামাইনকে গন্ধহীন যৌগে রূপান্তরিত করতে পারে না।
তিনি বলেন, " এটা শরীরে তীব্র গন্ধের কারণ হয় " কিন্তু এটা খুবই বিরল অবস্থা।
উদাহরণস্বরূপ, ২০২৫ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০ মাস বয়সী একটি শিশুর ট্রাইমেথাইলামিনুরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছিল।
মাছ খাওয়ার পর শিশুটি পচা মাছের মতো ঘ্রাণ পেতে শুরু করে। যদিও এই অবস্থা স্থায়ী কিছু ছিল না এবং যথাযথ চিকিৎসার পর ওই শিশুটি সুস্থ হয়েছিল।
মাংস খাওয়া কি আমাদের আরো আকর্ষণীয় করে তোলে?
জন হিউলিচেকসের গবেষক দল ২০০৬ সালে এই বিষয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করে।
বিজ্ঞানীরা ৩০ জন পুরুষের ওপর একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। যারা দুই সপ্তাহ ধরে হয় মাংস জাতীয় খাবার অথবা মাংসবিহীন খাবার খেয়েছিলেন।
নারীরা তাদের নিজেদের সুগন্ধি কতটা মনোরম, আকর্ষণীয়, অনুপ্রেরণাদায়ক এবং তীব্র বলে মনে করেছেন সেটির ওপর ভিত্তি করে রেটিং বা মূল্যায়ন করেছেন।
যেসব পুরুষ মাংস ছাড়া খাবার খেয়েছেন তাদের শরীরের ঘ্রাণ আরো বেশি আকর্ষণীয়, বেশি মনোরম এবং কম তীব্র বলে মনে হয়েছে।
হিউলিচুক বলেন, " আমরা অবাক হয়েছি যারা মাংস খান তাদের মুখে দুর্গন্ধ যারা মাংস খান না তাদের তুলনায় কিছুটা কম ছিল।"
তারা যা আশা করেছিল বিষয়টি তা ছিল না কারণ মানব বিবর্তন জুড়ে মানুষের খাদ্য তালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল মাংস।
যদিও বর্তমান জটিল, শিল্পোন্নত সমাজের মানুষদের মতো মাংস খাওয়ার প্রচলন, প্রাচীন মানুষদের ততটা ছিল না।
হিউলিচুক বলেন, " আমাদের বিবর্তনের সময় প্রতিদিন মাংস খাওয়া কমন বিষয় ছিল না।"
কফি এবং ওয়াইন
বিংহ্যামটনের স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউইয়র্কের হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস স্টাডিজের সহকারি অধ্যাপক লিনা বেগডাসি বলেন, অ্যালকোহল বিশেষত যারা প্রচুর পরিমাণে এবং মাঝেমধ্যেই সেবন করেন তাদের পেটে এবং ঘামে উভয় ক্ষেত্রেই দুর্গন্ধ হতে পারে।
যখন আপনার শরীর লিভারে অ্যালকোহলকে ভেঙে ফেলে তখন এটি 'এইসটালডিহাইড' নামে একটি বিষাক্ত যৌগ নির্গত করে।
এর অ্যালকোহলের মতো ঘ্রাণ সহজেই চেনা যায়।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০ থেকে ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ কর্মকর্তারা নিঃশ্বাসের ঘ্রাণের ওপর ভিত্তি করে বলতে পারেন কেউ মদ্যপান করেছে কিনা।
কিন্তু এটা নির্ভর করে অ্যালকোহল গ্রহণের পরিমাণের ওপর।
অ্যালকোহল আপনাকে পানি শূন্য করে এবং লালা অথবা শ্লেষ্মা উৎপাদন কমিয়ে দেয় যেটি মুখের ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে এবং মুখে দুর্গন্ধের কারণ হয়।
উদাহরণস্বরূপ, একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে, ২৩৫ জন মানুষের মধ্যে যারা মুখের দুর্গন্ধের কথা জানিয়েছেন, তারা প্রতিদিন অ্যালকোহল পান করেছিলেন। তাদের নিঃশ্বাসে উদ্বায়ী সালফার যৌগের মাত্রা বেশি ছিল।
যেসব পুরুষরা বিয়ার পান করেন এবং যারা বিয়ারের পরিবর্তে পানি পান করেন তাদের নিয়ে ২০১০ সালে আরেকটি গবেষণা পরিচালিত হয়।
এতে দেখা গেছে, মশারা বিয়ার পানকারী পুরুষদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়েছে।
কফি এবং চায়ে পাওয়া ক্যাফেইন অ্যাপোক্রাইন গ্রন্থিগুলোকে (ঘামগ্রন্থি) উদ্দীপিত করতে পারে। যেটা শরীরের বিভিন্ন অংশে যেমন: বগলের নিচে, পেটে এবং দুই উরুর মাঝে উৎপন্ন হয়।
নিউট্রিশনাল থেরাপিস্ট কেরি বেসন জানান, ঘামের এই বৃদ্ধি ব্যাকটেরিয়ার বেড়ে ওঠার জন্য আরো অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারে। যা কিনা শরীরের দুর্গন্ধকে আরো খারাপ করে তুলতে পারে।
আবার আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘামে ক্যাফেইনের অণু পাওয়া যায় কিন্তু এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।
এমন কোনো প্রমাণও নেই যে, ক্যাফেইন শরীরের ঘ্রাণকে প্রভাবিত করে।
স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব স্টারলিং এর সোশাল সাইকোলোজির অধ্যাপক ক্রেইগ রবার্টস বলেন, " আমরা স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং সব স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মতোই সামাজিক মিথষ্ক্রিয়ার সাথে অবশ্যই ঘ্রাণ সম্পর্কিত।"
রবার্টস ঘ্রাণ এবং সামাজিক মিথষ্ক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করেন।
অসংখ্য কারণ, বিভিন্ন ফলাফল
মানুষ আপনাকে ঠিক কতটা আকষর্ণীয় মনে করে সেটি নির্ধারণকারী অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি হলো মানুষের শরীরের ঘ্রাণ।
রবার্টস মনে করেন, মানুষের চেহারা, আচরণ এবং কথা বলার মতো অন্যান্য সামাজিক ইঙ্গিত থেকে ঘ্রাণের প্রভাবকে আলাদা করা খুবই কঠিন।
তবুও বৈজ্ঞানিকভাবে এই বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা পরস্পরবিরোধী ফলাফল দিয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, হিউলিচেক একটি গবেষণা পরিচালনা করেছিলেন।
যেটিতে পুরুষরা নারীদের বগলের ঘামের গন্ধ কতটা মনোরম, আকর্ষণীয় এবং তীব্র সেটির ওপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করেছিলেন।
এই গবেষণার কিছু নারী সাধারণ খাবার - দাবারই খেয়েছিলেন। অন্যদিকে কেউ কেউ ৪৮ ঘণ্টাব্যাপী ফাস্টিং বা উপবাস করেছিলেন।
যদিও এই দুই দলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো পার্থক্য ছিল না।
কিন্তু যেসব নারীরা উপবাস করেছেন তাদের ঘামের ঘ্রাণ যারা উপবাস করেননি তাদের চাইতে বেশি আকর্ষণীয়।
হিউলিচুক বলেন, " এটাও এমন কিছু ছিল যা আমরা প্রত্যাশা করিনি।"
কিন্তু একটি স্পষ্ট উত্তরের জন্য অন্যান্য পরীক্ষায়ও একই ফলাফল প্রয়োজন।
এমনকি আপনার ঘামে দুর্গন্ধ থাকলেও সুইজারল্যান্ডে ২০১৮ সালে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, উপবাস বা অনাহারে থাকা মানুষের নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ আরও খারাপ হয়।
অসংখ্য গবেষণা এবং এগুলোর ফলাফল মি. রবার্টস এবং হিউলিচুকের মতো গবেষকদের বুঝতে সাহায্য করেছে, খাবার কিভাবে আমাদের শরীরের গন্ধ এবং উপলব্ধিকে প্রভাবিত করে তার স্পষ্ট কোনো উত্তর নেই।
বরং আরো প্রচুর পরিমাণে পরিবর্তনশীলতা রয়েছে।
হিউলিচুক বলেন, " অনেক সুগন্ধযুক্ত যৌগ আছে এবং তাদের বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই আমরা জানি না কিভাবে তারা আমাদের শরীরের গন্ধকে প্রভাবিত করে।"
সূত্র: বিবিসি বাংলা