শীতে ডাস্ট অ্যালার্জি থেকে দূরে রাখবে স্মার্ট উপায়
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:০৪ এএম
অনেকের বাড়িঘর বা আশপাশের কিছু জায়গায় ধুলাবালির দেখা যায়! বাড়ি ঘরে থাকার নিরাপদ পরিবেশ খুব একটা থাকে না। আর এর ফলে শীতের এই সময়ে তাদের মধ্যে অনেকেরই ডাস্ট অ্যালার্জি দেখা দেয়।
ডাস্ট অ্যালার্জি (ধূলিকণা থেকে সৃষ্ট) অনেকের একটি সাধারণ সমস্যা, যা জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে। ক্রমাগত হাঁচি, সর্দি, চোখ চুলকানো বা শ্বাসকষ্ট—এই সবই হতে পারে আপনার ঘরের ভেতরে থাকা অদৃশ্য ধূলিকণার কারসাজি।
তবে চিন্তার কিছু নেই। সঠিক লাইফস্টাইল এবং কিছু স্মার্ট অভ্যাস আপনার অ্যালার্জিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ডাস্ট অ্যালার্জির সঙ্গে মোকাবিলা করার কার্যকরী কৌশলগুলো।
ঘরকে বানান অ্যালার্জি মুক্ত
ডাস্ট অ্যালার্জির মূল কারণ হলো ধুলার মাইট। এই ক্ষুদ্র জীবগুলো গরম ও আর্দ্র পরিবেশে, বিশেষত বিছানাপত্রে জন্মায়। এদের নিয়ন্ত্রণ করাই হলো প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
বিছানাপত্রের বিশেষ যত্ন
বিছানার কভার ব্যবহার করতে হবে। বালিশ, তোষক ও লেপের ওপর অ্যালার্জি-প্রুফ কভার ব্যবহার করুন। এই কভারগুলো মাইট ও তাদের বর্জ্য পদার্থকে আটকে রাখে। এ ছাড়া প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার বিছানার চাদর, বালিশের কভার ও কম্বল গরম পানিতে ধুয়ে নিন।
ঘরের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ
ধুলোর মাইট আর্দ্রতা ভালবাসে। আপনার ঘরের আর্দ্রতা ৫০% এর নিচে রাখার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে একটি হিউমিডিফায়ার (আর্দ্রতা শোষণকারী যন্ত্র) ব্যবহার করতে পারেন।
কার্পেট ও ভারী পর্দা
কার্পেট, ভারী কম্বল বা ঘন পর্দা ধুলোর মাইট এবং অন্যান্য অ্যালার্জেনদের জন্য আদর্শ আবাস। সম্ভব হলে কার্পেট সরিয়ে শক্ত কাঠ, টাইলস বা লিনোলিয়ামের মেঝে ব্যবহার করুন। জানলায় সহজে ধোওয়া যায় এমন হালকা ব্লাইন্ড বা পর্দা ব্যবহার করুন।
পরিচ্ছন্নতার স্মার্ট রুটিন
নিয়মিত ঘর পরিষ্কার করা জরুরি, কিন্তু সেই পরিচ্ছন্নতা হতে হবে সঠিক উপায়ে।
সঠিক ভ্যাকুয়াম ক্লিনার
সাধারণ ঝাড়ু ব্যবহার করলে ধুলো আরো বেশি বাতাসে ছড়ায়। এর পরিবর্তে এইচইপিএ (হাই-ইফিসিয়েন্সি পার্টিকুলেট এয়ার) ফিল্টার যুক্ত ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন। এটি সূক্ষ্ম ধূলিকণাকে শোষণ করে, যা অ্যালার্জির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
ভেজা কাপড় ব্যবহার
আসবাবপত্র ও অন্যান্য জিনিস মোছার জন্য শুকনা কাপড়ের পরিবর্তে ভেজা কাপড় বা মপ ব্যবহার করুন। এতে ধুলো বাতাসে ওড়ার সুযোগ পায় না।
মাস্ক পরুন
যখন ঘর পরিষ্কার করবেন বা ভ্যাকুয়াম করবেন, তখন নাকে ও মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন, যাতে অ্যালার্জেন সরাসরি আপনার শ্বাসনালিতে প্রবেশ না করতে পারে। পরিষ্কারের পর কমপক্ষে ২০ মিনিট ঘর থেকে দূরে থাকুন।
বিশুদ্ধ বাতাসের দিকে নজর
বাড়ির ইনডোর বাতাসের গুণমান উন্নত করা অত্যন্ত জরুরি। এর জন্য এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরে একটি এইচইপিএ ফিল্টার যুক্ত এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন, যা বাতাস থেকে পরাগ, ধুলার মাইটের বর্জ্য এবং অন্যান্য অ্যালার্জেন ফিল্টার করে দেবে। এ ছাড়া ঘরের ভেতরের ডাস্টবিন নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং বাইরে রাখুন।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন
যদি কেউ লক্ষ্য করেন যে লাইফস্টাইল পরিবর্তন করার সত্ত্বেও অ্যালার্জির উপসর্গগুলো মারাত্মক আকার ধারণ করছে, তাহলে একজন অ্যালার্জিস্ট বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। তারা সঠিক পরীক্ষা করে প্রয়োজনমতো অ্যান্টিহিস্টামিন, নেজাল স্প্রে বা অ্যালার্জি শট (ইমিউনোথেরাপি) এর মতো চিকিৎসা শুরু করতে পারেন।
মনে রাখবেন, ডাস্ট অ্যালার্জি জীবনের একটি অংশ হতে পারে। কিন্তু আপনার জীবনযাত্রার নিয়ন্ত্রক হতে পারে না। সামান্য সচেতনতা এবং কিছু স্মার্ট পরিবর্তন আপনাকে দেবে একটি স্বচ্ছন্দ, হাঁচি-মুক্ত জীবন।