গোসলের আগে না পরে, কখন খাবার খাওয়া ভালো? কী বলছে বিজ্ঞান
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৪৫ পিএম
খাওয়া ও গোসলের সঙ্গে কম-বেশি সব মানুষেরই সম্পর্ক রয়েছে। যা একজন মানুষের প্রতিদিনই করতে হয়। এসব শ্বাস-প্রশ্বাস ও ঘুমের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। তবে খাওয়া ও গোসল দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজ হলেও এ নিয়ে নানা মতামত রয়েছে। একটির সঙ্গে অন্যটি সম্পর্কিত বলে বিশ্বাস অনেকের।
খাওয়া ও গোসল অবশ্য সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ওপর প্রভাব ফেলে। এরপরও অনেকেরই বিশ্বাস, গোসল করার পরই খাবার খাওয়া ভালো। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে কী শীতকালে গোসলের আগে খাওয়া হলে স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা হবে, বড় ধরনের না হলেও ছোট ধরনের সমস্যা? গোসলের পর খাওয়া উচিত কিনা, এ নিয়ে বিজ্ঞান কী বলছে, তা জানিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এনডিটিভি। এ ব্যাপারে জেনে নেয়া যাক-
আয়ুর্বেদিক দৃষ্টিকোণ : গোসলের পরই খাবেন না
আয়ুর্বেদ অনুযায়ী গোসলের পরপরই খাবার খাওয়া ঠিক নয়। গোসল শরীরকে ঠান্ডা করে এবং শরীরের অগ্নিকে দুর্বল করে, যা খাদ্য ভাঙার জন্য প্রয়োজনীয় হজমশক্তি। গোসল করা হলে এটি হাইপোথার্মিক ক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে, শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা কমায় এবং স্নায়ুতন্ত্রকে শিথিল করে। রক্ত প্রবাহ পাকস্থলী থেকে অন্যান্য অংশে সরে যায়। ফলে হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়। এটি সম্ভাব্যতার অস্বস্তি, অ্যাসিডিটি বা পেট ফাঁপা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে প্রোটিন, ফাইবার বা চর্বি সমৃদ্ধ ভারি খাবার খান। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই অভ্যাস আপনার বিপাককে প্রভাবিত করতে পারে। এ কারণে স্বাস্থ্য বেড়ে যাওয়া এবং ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়।
বিকল্প উপায়গুলো:
গোসলের পর অন্তত ২০ থেকে ৬০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর খাবার গ্রহণ করুন। এতে শরীরের তাপমাত্রা স্থিতিশীল হয় এবং অগ্নি পুনরুজ্জীবিত হয়। অথবা খাবারের আগে উষ্ণ পানিতে গোসল করুন। কারণ, এটি হাইপারথার্মিক প্রভাব বাড়ায়, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, বিষাক্ত পদার্থ দূর করে এবং কোর ঠান্ডা না করেই পাচনতন্ত্রকে প্রস্তুত করে।
কিছু বিশেষজ্ঞরা ভালো শক্তি ও স্বচ্ছতার জন্য সকালের নাশতার আগে গোসলের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যা মূলত প্রাকৃতিক চক্রের সঙ্গে দৈনন্দিন ছন্দকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে সহায়তা করে।
আধুনিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ: কোনো পার্থক্য নেই:
বৈজ্ঞানিকভাবে গোসলের পরপরই খাবার খাওয়া হলে অধিকাংশ সুস্থ মানুষের হজমের ওপর খুব একটা সরাসরি প্রভাব পড়ে না। কেননা, গোসলের কারণে শরীরের তাপমাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে পুষ্টির ভাঙন বা এনজাইমের কার্যক্রমের সম্পর্ক থাকার জোরোলো কোনো প্রমাণ নেই। বিশেষ করে উষ্ণ গোসল, রক্ত সঞ্চালন ও হৃদস্পন্দনকে হালকাভাবে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে, যা ভরা পেটে অবিলম্বে খাওয়া হলে অস্বস্তিকর বোধ হতে পারে। কিন্তু ত্বকে রক্তের প্রবাহ অস্থায়ী এবং এটি পেটের রক্ত সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে না। আবার গ্যাসট্রিক দূর করার গতিও কমায় না। তবে গোসলের পর মূল তাপমাত্রা কমায় হজমের সময় তাপ নিয়ন্ত্রণেরে ওপর সূক্ষ্মভাবে চাপ সৃষ্টি করতে পরে।
গোসলের পর ভারি ও ক্যালোরি ঘনযুক্ত খাবার খাওয়া হলে পেট ফাঁপার ঝুঁকি বাড়তে পারে। কেননা, তাড়াহুড়ো করে খাওয়া, খারাপ ভঙ্গি দায়ী থাকতে পারে। ঠান্ডা পানিতে অল্প সময়ের মধ্যে রক্তনালী সংকুচিত হয়। বিপরীতে গরম পানিতে রক্তনালী প্রসারিত হয়। এসবের কোনোটিই ক্ষুদ্রান্তের শোষণকে ব্যাহত করে না।
সময়সূচি:
ঠান্ডা পানিতে গোসলের পর ২০-৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এই সময় শরীরের তাপমাত্রা স্থিতিশীল হবে এবং ভাতকে খারাপ করবে না। আর উষ্ণ পানিতে গোসলের পর ১০-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এটি শরীরকে শিথিল করতে সহায়তা করবে এবং অগ্নিকে ভিজিয়ে দেবে না।
হজমশক্তি ভালো করার উপায়:
খাবার খাওয়ার সময় ভালো করে চিবিয়ে খেতে হবে। সোজা হয়ে বসতে হবে। সকাল যদি তাড়াহুড়ো করে কাটাতে হয়, তাহলে নাশতার আগে সম্ভব হলে গরম পানিতে গোসল করাকে অগ্রাধিকার দিতে পারেন।