Logo
Logo
×

লাইফস্টাইল

সেন্টমার্টিন যেতে চান, কোথায় মিলবে ট্রাভেল পাশ?

Icon

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৫৮ এএম

সেন্টমার্টিন যেতে চান, কোথায় মিলবে ট্রাভেল পাশ?

প্রবাল প্রাচীর ঘেরা বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ এবং অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য সেন্টমার্টিন (St. Martin's Island)। এখন থেকে এই স্বর্গীয় দ্বীপটি ভ্রমণ করতে হলে পর্যটকদের জন্য ট্রাভেল পাশ (Travel Pass) সংগ্রহ করা বাধ্যতামূলক। পরিবেশ সুরক্ষার স্বার্থে এই নতুন বিধি আরোপ করা হয়েছে, যার ফলে ট্রাভেল পাশ ছাড়া কেউ আর সেন্টমার্টি দ্বীপে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন না। সেন্টমার্টিন ট্রাভেল পাশ (St. Martin's Travel Pass) ব্যবস্থার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ রোধে দ্বীপে প্রবেশকারী পর্যটকদের ওপর আরোপ করা হয়েছে প্লাস্টিক নিষেধাজ্ঞা।

পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটক প্রবেশাধিকার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ শুরু করেছে সরকার। নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২ হাজার পর্যটককে দ্বীপে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। পাশাপাশি, ট্রাভেল পাশ ও যাত্রাপথেও এসেছে বড় পরিবর্তন। পর্যটকদের প্রশ্ন—কোথায় এই ট্রাভেল পাশ ও টিকিট পাওয়া যাবে? ভ্রমণের ক্ষেত্রেই বা কোন কোন নিয়ম মানতে হবে।

সেন্ট মার্টিন ট্রাভেল পাশ যেভাবে মিলবে (How to get the St. Martin Travel Pass)

সেন্ট মার্টিনে (St. Martin's Island) প্রবেশের জন্য ট্রাভেল পাশ বাধ্যতামূলক করা হলেও অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জনপ্রিয় অ্যাপ স্টোর গুগল প্লে স্টোর ভিজিট করে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের (Bangladesh Tourism Board) কোনো অ্যাপ এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। অ্যাপটি এখনো নির্মাণের পর্যায়ে থাকায় পর্যটকদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

ট্রাভেল পাশ নিয়ে বিভ্রান্তি দূর: টিকিটই এখন কিউআর কোডযুক্ত পাশ

দ্বীপ ভ্রমণে সরকারি ট্রাভেল পাশ (Travel Pass St. Martin) বাধ্যতামূলক করা হলেও এটি সংগ্রহ নিয়ে পর্যটকদের মধ্যে সৃষ্ট বিভ্রান্তি দূর হয়েছে।

পাশ পাওয়ার প্রক্রিয়া: অনুমোদিত জাহাজের টিকিটের সঙ্গেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিউআর কোডযুক্ত ট্রাভেল পাশ জেনারেট হয়ে যায়। কর্ণফুলী ক্রুজ লাইনের টিকেটিং কর্মকর্তা সাইফুল আলম জানান, পর্যটকদের শুধু অনুমোদিত জাহাজ কর্তৃপক্ষ বা ট্রাভেল এজেন্টের কাছ থেকে টিকিট কিনতে হবে এবং যাত্রার আগে কিউআর কোডসহ প্রিন্ট করা টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট বাতিল বলে গণ্য হবে।

অনলাইনে সেন্ট মার্টিন ট্রাভেল পাশ সংগ্রহের নিয়ম

নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, পর্যটকদের একটি নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে এই পাশ সংগ্রহ করতে হবে। সেন্ট মার্টিন ট্রাভেল পাশ সংগ্রহের নিয়ম (St. Martin's Travel Pass Collection) নিম্নরূপ হবে:

অ্যাপ ডাউনলোড: বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড কর্তৃক প্রস্তুতকৃত অ্যাপসটি প্রথমে ডাউনলোড ও ইনস্টল করতে হবে।

জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নিবন্ধন: অ্যাপে প্রবেশ করার পর জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে।

তথ্য সরবরাহ: নিবন্ধনের পরেই প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত তথ্য সরবরাহ করতে হবে।

অনলাইন সংগ্রহ: এই ধাপগুলো পেরোলে পর্যটকরা অনলাইনেই নিজেদের ট্রাভেল পাশ সংগ্রহ করতে পারবেন।

নতুন রুট ও অনুমোদিত জাহাজের তালিকা (List of new routes and approved ships to St. Martin)

পর্যটকদের জন্য যাত্রা শুরু ও গন্তব্যের ক্ষেত্রে এসেছে বড় পরিবর্তন। টেকনাফ থেকে কোনো জাহাজ পর্যটক পরিবহন করছে না। পর্যটকদের জন্য যাত্রা শুরু এবং রাত্রীযাপনের ক্ষেত্রেও এসেছে স্পষ্ট নির্দেশনা:

যাত্রার স্থান: এখন জাহাজ ছাড়ছে কক্সবাজার বিমানবন্দরের পাশের নুনিয়ারছড়া ঘাট (Nuniarchhara Ghat) থেকে। টেকনাফ থেকে কোনো জাহাজ পর্যটক পরিবহন করছে না।

অনুমোদিত জাহাজ: চলতি মৌসুমে পর্যটক পরিবহনের জন্য ছয়টি জাহাজ অনুমোদন পেয়েছে। এগুলো হলো—এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বার আউলিয়া, এমভি বে ক্রুজ, এমভি কাজল, কেয়ারি সিন্দাবাদ এবং কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন।

রাত্রীযাপন: নভেম্বর মাস বাদ দিয়ে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে দ্বীপে রাত্রীযাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

সময়সূচি: কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টায় জাহাজ ছাড়বে এবং পরদিন বিকেল ৩টায় সেন্টমার্টিন থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হবে। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এই সূচিতে জাহাজ চলাচল করবে।

সেন্টমার্টিন ভ্রমণে পরিবেশ সুরক্ষায় ১২ দফা নির্দেশনা: নিষিদ্ধ প্লাস্টিক, আলো ও শব্দ (12-point guidelines for traveling to St. Martin)

দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশ মন্ত্রণালয় পর্যটকদের জন্য ১২ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। সেন্টমার্টিন পরিবেশ বিধি (St. Martin's Environmental Rules) কঠোরভাবে মানা বাধ্যতামূলক:

প্লাস্টিক ও বর্জ্য: পলিথিন বহন করা এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান বা শ্যাম্পুর মিনি প্যাক এবং ৫০০ মিলি বা ১ লিটারের প্লাস্টিকের বোতল) সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

প্রাণী ও উদ্ভিদ: সামুদ্রিক কচ্ছপ, পাখি, প্রবাল, কাঁকড়া, ঝিনুক-শামুকসহ কোনো প্রাণীর ক্ষতি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

নিয়ন্ত্রণ: সৈকতে রাতে আলো জ্বালানো, উচ্চ শব্দ করা এবং বারবিকিউ পার্টি করা নিষিদ্ধ।

অন্যান্য: কেয়া বনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা কেনাবেচা এবং সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ সব ধরনের যান্ত্রিক যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে সোমবার (১ ডিসেম্বর) থেকে পুনরায় চালু হয়েছে কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল। একই সঙ্গে পর্যটকদের জন্য শুরু হচ্ছে দ্বীপটিতে রাত্রীযাপনের সুযোগ, যা আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বহাল থাকবে। এই সীমিত সময়ের মধ্যেই গত এক বছরের লোকসান পুষিয়ে নিতে পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু করেছে দ্বীপবাসী। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের হোটেল, রিসোর্ট এবং দোকানপাটগুলোতে এখন চলছে সংস্কারের ধুম। প্রশাসন এবার পরিবেশবান্ধব (Eco-Tourism) উপকরণ ব্যবহারে জোর দেওয়ায় স্থানীয়রা গাছ, বাঁশ ও ছন দিয়ে রিসোর্টগুলোর সংস্কারকাজ দ্রুতগতিতে চালিয়ে নিচ্ছেন।

রিসোর্ট মালিক সমিতির কর্মকর্তা আবদুর রহিম জিহাদী জানান, দ্বীপে দুই শতাধিক ছোট-বড় রিসোর্ট রয়েছে। আগামী দুই মাসের জন্য ভ্রমণকারীদের সুবিধার্থে এসব রিসোর্টের সংস্কার দ্রুতগতিতে চলছে। এটি একটি ভালো সিদ্ধান্ত যে, প্রশাসন এখন ইকো-ট্যুরিজম আদলে কাজ করতে নির্মাণসামগ্রী দ্বীপে আনতে বাধা দিচ্ছে না। এদিকে, টানা এক বছর ধরে পর্যটকবিহীন অবস্থায় পড়ে থাকা বিনোদন স্পটগুলোতে চলছে ধোয়ামোছার কাজ। আগামী দুই মাস পর্যটকদের আতিথেয়তার প্রস্তুতি নিয়ে দ্বীপবাসী এখন অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছে।

সাবেক ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান, যিনি ‘হীরাঝিল’ নামে একটি রিসোর্টের মালিক, হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “গেল বছর থেকে নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন আমার পথে বসার অবস্থা।” অন্তত তিন মাসের জন্য দৈনিক দুই হাজার পর্যটকের রাত যাপনের অনুমতি থাকলে দ্বীপের পর্যটন ব্যবসায়ীরা কোনো রকমে জীবন ধারণ করতে পারতেন।

নতুন করে পর্যটন শুরু হলেও অবকাঠামোগত সমস্যা নিয়ে দ্বীপবাসীর চিন্তার শেষ নেই। সব মিলিয়ে, সীমিত সময়ের জন্য দরজা খোলা সেন্ট মার্টিন দ্বীপ এখন চরম ব্যস্ততায়। দ্বীপবাসীর আশা, এই দুই মাসের পর্যটন স্রোত তাঁদের আর্থিক সংকটের কিছুটা হলেও সমাধান দেবে।

তথ্য অনুযায়ী, আগামী বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আবারও ৯ মাসের জন্য দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। তাই এবারের মৌসুমে দ্বীপে ভ্রমণের সময়সূচি এবং পর্যটক উপস্থিতিও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার