Logo
Logo
×

লাইফস্টাইল

মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে গেছে ওষুধ? কিভাবে বুঝবেন

Icon

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৩৬ এএম

মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে গেছে ওষুধ? কিভাবে বুঝবেন

চিকিৎসাবিজ্ঞানের অন্যতম আবিষ্কার ওষুধ। আমরা অনেক সময় বুঝতেই পারি না যে ভুল জায়গায় রাখা ওষুধ কত সহজেই নষ্ট হয়ে যায় বা কার্যকারিতা হারায়। অনেকেই মনে করেন যে ওষুধ প্যাকেটের ভেতরে থাকলে সেটা পুরো মেয়াদ পর্যন্ত ঠিকই কাজ করবে। কিন্তু, সত্যিটা একদম তার বিপরীত।

ওষুধ এক ধরনের সেনসিটিভ কেমিক্যাল কম্পাউন্ড, যা তাপ, আর্দ্রতা, আলো এবং ভুল জায়গায় রাখলে খুব দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে অ্যান্টিবায়োটিক, ইনসুলিন, থাইরয়েড বা হার্টের ওষুধ মেয়াদের আগেই কার্যক্ষমতা হারাতে পারে।

অনেক বাড়িতে একটি প্রচলিত অভ্যাস হলো, ওষুধ বাথরুমের ক্যাবিনেটে বা রান্নাঘরের ড্রয়ারে রাখা। এই দুই জায়গাতেই ওষুধ রাখা অনুচিত।

বাথরুমে গরম পানি ব্যবহারের কারণে আর্দ্রতা বাড়ে। এই আর্দ্রতা  ট্যাবলেট ভেঙে যাওয়া, ফুলে ওঠা বা ট্যাবলেটের রাসায়নিক গঠন নষ্ট হওয়ার কারণ।

রান্নাঘরে চুলা, ওভেন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি থেকে উৎপন্ন তাপ ওষুধকে দ্রুত অকেজো করে দিতে পারে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, অনেক সময় ওষুধ দেখতে একেবারে স্বাভাবিক লাগে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে সেই ওষুধের শক্তি কমে যায়। এতে রোগী বুঝতেই পারেন না কেন চিকিৎসা হলেও কাজ হচ্ছে না।

অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে ভুল স্টোরেজ মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করে। সামান্য বেশি তাপমাত্রায় এগুলোর রাসায়নিক গঠন ভেঙে যায়, ফলে ইনফেকশন কমার পরিবর্তে আরো বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।

ইনসুলিন সবচেয়ে সেনসিটিভ ওষুধগুলোর একটি, এটাকে সবসময় নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখতে হয়। রুম টেম্পারেচারে অনেকক্ষণ থাকলে ইনসুলিন কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে, আর একবার ফ্রিজিং পয়েন্টে পৌঁছালে সেটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়।

ট্যাবলেট, ক্যাপসুল বা সিরাপই শুধু নয়—হার্টের ওষুধ, থাইরয়েডের ওষুধ, স্টেরয়েড, বায়োলজিক ইনজেকশন, এমনকি প্রো-বায়োটিকও তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার জেরে নষ্ট হয়। যে কারণে ফার্মাসিউটিক্যাল কম্পানিগুলো ওষুধের প্যাকেটে লিখে দেয়, ‘ঠাণ্ডা ও শুষ্ক স্থানে রাখুন’ বা ‘সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখুন’। কিন্তু আমাদের বড় একটা অংশ এই নির্দেশ পড়েনই না, পড়লেও মানেন না।

অনেকেই ওষুধ গাড়ির ভেতরের গ্লাভ বক্সে বা ব্যাগে দিনের পর দিন রেখে দেন। একটি পার্ক করা গাড়ির ভেতর গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৫০–৬০ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে যেতে পারে, যা বেশিরভাগ ওষুধের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। যারা ভ্রমণ করেন, তাদের জন্য এটা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ শুধু কয়েক ঘণ্টার অতিরিক্ত তাপমাত্রাই ওষুধের সুস্থতা নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।

আরেকটি বড় ভুল হলো, ব্লিস্টার প্যাক থেকে সব ট্যাবলেট বের করে আলাদা কৌটায় রাখা। ব্লিস্টার প্যাক আসলে ওষুধকে আর্দ্রতা ও অক্সিজেন থেকে রক্ষা করার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা। একবার ট্যাবলেট বের করে নিলে এই সুরক্ষা নষ্ট হয়ে যায় এবং ওষুধ দ্রুত ক্ষয় হয়ে যায়। তাই ওষুধ সবসময় মূল প্যাকেটেই রাখা উচিত এবং লেবেল ঠিকভাবে রেখে দেওয়া জরুরি। ওষুধের লেবেলে স্টোরেজ নির্দেশ, এক্সপায়ারি, ব্যাচ নম্বর-সহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে যা ভুলভাবে রাখলে সহজেই হারিয়ে যেতে পারে।

অনেক সময় ক্রিম বা অয়েন্টমেন্ট চরম গরমে আলাদা হয়ে যায়, সিরাপ ঘন হয়ে যায়, আর সফট জেল ক্যাপসুল আঠার মতো লেগে যায়। এই পরিবর্তনগুলো দেখা গেলেও ওষুধের কিছু পরিবর্তন দেখা যায় না। এ কারণে নিয়মিতভাবে প্যাকেট খুলে ওষুধের গন্ধ, রং বা গঠন বদলেছে কি না, খেয়াল রাখা দরকার।

কিছু ওষুধ যেমন নত্রো-গ্লিসারিন বা কিছু ভিটামিন আলোয় সংবেদনশীল। অর্থাৎ, সরাসরি সূর্যের আলো পড়লে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই খোলা তাক, জানালার পাশে বা গাড়িতে এই ওষুধগুলো রেখে দেওয়া একদমই অনুচিত।

ওষুধ রাখার জায়গা বেছে নিন

ঠিকমতো ওষুধ সংরক্ষণ করতে হলে ঘরের এমন একটি জায়গা বেছে নিন, যা ঠাণ্ডা, শুকনা ও আলোহীন। শোবার ঘরের আলমারি, ড্রয়ার বা বসার ঘরের কোনো উঁচু তাক—এগুলো সাধারণত নিরাপদ। একইসঙ্গে ওষুধ শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা অবশ্যই জরুরি। ফ্রিজে রাখার প্রয়োজন হলে ফ্রিজের মেইন কম্পার্টমেন্টে রাখুন, কখনো ফ্রিজের দরজায় রাখবেন না। কারণ সেখানে তাপমাত্রা ওঠানামা বেশি হয়।

 সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার