হরর সিনেমা হতে পারে থেরাপি, কীভাবে কাজ করে জানেন?
বিবিসি বাংলা
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০১:২৯ পিএম
মানুষ স্বাভাবিকভাবেই ভয় পায়। তবে আশ্চর্যের বিষয়, অনেকেই স্বেচ্ছায় ভয় উপভোগ করতে ভালোবাসেন। জম্বি, দানব বা অদৃশ্য আতঙ্ক-ভৌতিক সিনেমার হরর দৃশ্য দেখলেও অনেকেই এক ধরনের মানসিক শান্তি অনুভব করেন। সিনেমা দেখার সময় ভয়ে কাঁপলেও শেষে মন হালকা হয় এবং বাস্তব জীবনের দুশ্চিন্তা সাময়িকভাবে দূরে সরে যায়।
শুনতে অবাক লাগলেও বিজ্ঞান বলছে-হরর সিনেমা দেখা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। বিশেষ করে যারা উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তায় ভোগেন, তাদের জন্য ভয়ও হতে পারে এক ধরনের ‘থেরাপি’।
মনোবিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ভীতিকর সিনেমা আমাদের উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী কোল্টান স্ক্রিভনার বলেন, ‘ভয়ঙ্কর গল্প আমাদের মস্তিষ্ককে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হতে প্রস্তুত করে’।
এছাড়া ভীতিকর গল্প বা সিনেমা নিরাপদ পরিবেশে ভয় অনুভবের সুযোগ দেয়। এতে আবেগ নিয়ন্ত্রণ শেখা যায় এবং বাস্তব জীবনের চাপ সামলানো সহজ হয়।
তার গবেষণায় দেখা গেছে, ভৌতিক সিনেমার দর্শকদের তিন ভাগে ভাগ করা যায়- অ্যাড্রেনালিন জাঙ্কিজ: যারা ভয়ে রোমাঞ্চ খোঁজেন।
হোয়াইট নাকলারস: যারা ভয়ের মধ্য দিয়ে আনন্দ পান। নিজেদের ভয়কে জয় করার অনুভূতি উপভোগ করে।
ডার্ক কোপার্স: যারা ভয়কে নিরাপত্তার অনুভূতি হিসেবে দেখেন।
ডেনমার্কের একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ভৌতিক সিনেমা দেখেন তারা সংকটের সময় মানসিকভাবে বেশি স্থিতিশীল থাকেন। এমনকি কোভিড-১৯ মহামারির সময়ও তারা তুলনামূলকভাবে বেশি ধৈর্য ধরতে পেরেছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মার্ক মিলার বলেন, ভয়ঙ্কর গল্প আমাদের মস্তিষ্ককে ভবিষ্যৎ কল্পনা করতে সাহায্য করে, যা অনিশ্চয়তা সামলাতে সুবিধা দেয়।
শিশুদের উদ্বেগ কমানোর জন্য নেদারল্যান্ডসে তৈরি হয়েছে মাইন্ডলাইট নামের একটি ভিডিও গেম, যেখানে ভয়কে থেরাপির অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, গেম খেলার পর শিশুদের উদ্বেগ অনেক কমে গেছে।
হরর সিনেমার মানসিক উপকারিতাগুলো হলো
১. নিরাপদ ভয় অনুভব করা হরর সিনেমার ভয় বাস্তব নয়। শরীর ভয় পাওয়া প্রতিক্রিয়া দেখায়-হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, অ্যাড্রেনালিন নিঃসৃত হয়-কিন্তু মস্তিষ্ক জানে আপনি নিরাপদ। এটি মানসিক অনুশীলনের মতো কাজ করে এবং বাস্তব জীবনের চাপ সামলাতে সাহায্য করে।
২. চিন্তা থেকে বিরতিহরর সিনেমা এত মনোযোগ কাড়ে যে নিজের দুশ্চিন্তা ভুলে গিয়ে সব মনোযোগ সিনেমায় চলে যায়। এটি মানসিকভাবে একটি বিরতি-যা উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।
৩. ভয় সহ্য করার অভ্যাস তৈরি যারা বাস্তব জীবনে ভয় এড়িয়ে যান, তারা হরর সিনেমার মাধ্যমে নিরাপদ পরিবেশে ভয় অনুভব করতে পারেন। এতে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে ভয় সহ্য করতে শেখে। তবে যদি কেউ অতিরিক্ত ভয় বা দুঃস্বপ্নে ভোগে, তবে এমন সিনেমা দেখা থেকে বিরত থাকা উচিত।