Logo
Logo
×

লাইফস্টাইল

ব্রেইন স্ট্রোক: কিভাবে হয়, যা জানা জরুরি

Icon

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:১৪ পিএম

ব্রেইন স্ট্রোক: কিভাবে হয়, যা জানা জরুরি

আমাদের মস্তিষ্ক একটি গাড়ির ইঞ্জিনের মতো। হোক তা কথা বলা, লাফানো বা নিশ্বাস নেওয়া—সবকিছুর শক্তি যোগায় এটি। কিন্তু যখন এই ইঞ্জিন পর্যাপ্ত জ্বালানি পায় না তখন কী ঘটে? এই ইঞ্জিন অস্থিরভাবে কাজ করে, থেমে থেমে কাজ করে ও পুরোপুরি থেমে যায়।

মসৃন যাত্রার জন্য একটি ইঞ্জিনের যেমন ধারাবাহিক জ্বালানি প্রয়োজন, তেমনই মস্তিষ্কের প্রয়োজন সার্বক্ষণিক রক্ত ও অক্সিজেন প্রবাহ।

বিশ্ব জুড়ে মৃত্যুর অন্যতম একটি কারণ স্ট্রোক। গ্লোবাল বারডেন ডিজিজের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী ৬৭ লাখ ৯০ হাজার মানুষের স্ট্রোকে মৃত্যু হয়।

ছবি: বিবিসি বাংলা

বাংলাদেশে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ৭৩ জনের মৃত্যু হয় স্ট্রোকে। মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম স্ট্রোক। হৃদপিণ্ডের রক্তনালীতে ক্লট বা ব্লকজনিত হৃদরোগে মৃত্যু ও ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) বা শ্বাসকষ্টজনিত দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুসের রোগে মৃত্যুর পরেই স্ট্রোকে মৃত্যুর অবস্থান।

স্ট্রোক কী?

মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হলে স্ট্রোক হয়। ঘাড়ের উভয় পাশে দুটি রক্তনালি বা ধমনী হৃদপিণ্ড থেকে মস্তিষ্কে রক্ত পৌঁছে দেয়। রক্তনালীগুলো ছোট ছোট শাখায় বিভক্ত হয়ে মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহ করে।যখন মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়, তখন অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত ও পুষ্টি পৌঁছাতে পারে না, যার ফলে মস্তিষ্কের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং স্ট্রোক ঘটে।

স্ট্রোক যে নির্দিষ্ট স্থানে ঘটে, তা নির্ধারণ করে দেয় কোন ধরনের শারীরিক প্রভাব এর ফলে দেখা দেবে। এমনটা ঘটার কারণ হলো মস্তিষ্কের প্রত্যেক পাশ (ডান বা বাম) শরীরের বিপরীত পাশের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।

নির্দিষ্টভাবে বললে, মস্তিষ্কের ডান পাশ শরীরের বাম পাশ এবং মস্তিষ্কের বাম পাশ শরীরের ডান পাশ নিয়ন্ত্রণ করে।

যার ফলে মস্তিষ্কের ডান পাশে স্ট্রোক হলে শরীরের বাম পাশে উপসর্গ দেখা দেবে এবং বাম পাশে স্ট্রোক হলে প্রভাব পরবে শরীরের ডান পাশে।

স্ট্রোক হয়েছে কিনা তা কীভাবে বোঝা যায়?

মুখ, হাত বা পায়ের হঠাৎ দুর্বলতা বা অসারতা স্ট্রোকের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

১. শরীরের এক পাশে মুখ, হাত বা পা অসাড় হয়ে যাওয়া।

২. কথা বলতে বা বুঝতে বিভ্রান্তি বা সমস্যা হওয়া।

৩. এক বা দুই চোখে দৃষ্টি বিভ্রান্তি (দৃষ্টিশক্তি কমা/ঝাপসা দেখা/ দুটো করে দেখা)।

৪. হাঁটতে সমস্যা হওয়া, মাথা ঘোরানো বা ভারসাম্য হারানো।

৫. তীব্র মাথাব্যথায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়া 

ছবি: বিবিসি বাংলা

স্ট্রোকের ধরন

স্ট্রোক মূলত দুই ধরনের।

১. ইস্কেমিক স্ট্রোক: যখন রক্তনালীগুলো সরু হয়ে যায় বা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়, তখন রক্ত এবং পুষ্টির সরবরাহ ব্যাহত হয়। যার ফলে অক্সিজেন এবং পুষ্টির অভাবের ফলে মস্তিষ্কের কোষ এবং টিস্যুতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়।

একইভাবে, জমাটবাধা একটি রক্ত কণা কোনো এক স্থানে থেকে মস্তিষ্কের দিকে চলে গেলে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। সেটি সরু ধমনীতে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে।

২. হেমোরেজিক স্ট্রোক: সরু রক্তনালী ফেটে মস্তিষ্কের টিস্যুতে রক্তক্ষরণ হয়, যার ফলে মস্তিষ্কের কোষ ও টিস্যু পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি পায় না।

একইভাবে, রক্তপাতজনিত স্ট্রোক (এইচএস) ঘটতে পারে যখন রক্তনালীর কোনো দুর্বল স্থান ফেটে মস্তিষ্ক ও খুলির মধ্যে রক্ত বের হয়।

জেন্ডার ও স্ট্রোক: কে বেশি ঝুঁকিতে?

২০২৩ সালে বিশ্বে নারীর চেয়ে বেশি সংখ্যক পুরুষ স্ট্রোকে মারা গেছেন। পুরুষ মারা যান ৩৫ লাখ এবং নারী মারা যান ৩২ লাখ ৯০ হাজার।

কিন্তু বাংলাদেশে বহু বছর ধরে স্ট্রোকজনিত মৃত্যুর হার পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে বেশি ছিল। ২০১০ সালের দিকে এ ব্যবধান কিছুটা কমে এলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আবার তা বেড়েছে। ২০১২ সালের পর থেকে, পুরুষদের মধ্যে স্ট্রোকজনিত মৃত্যুহার নারীদের চেয়ে কম দেখা গেছে।

গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ (জিবিডি)-এর ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, এ প্রবণতা বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে স্ট্রোকজনিত মৃত্যুহার পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনার ওয়েক ফরেস্ট ইউনিভার্সিটির নিউরোলজির অধ্যাপক ড. শেরিল বুশনেল বলেন, স্ট্রোকজনিত মৃত্যুহারের আঞ্চলিক পার্থক্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লিঙ্গবৈষম্যের প্রতিফলন। যেমন স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থানে পুরুষের তুলনায় নারীর সীমিত সুযোগ স্ট্রোকে তার মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াতে পারে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে নারীদের স্ট্রোকে মৃত্যুহার বেশি দেখা যাওয়ার কারণ মূলত: তারা পুরুষদের তুলনায় বেশি দিন বাঁচেন।

মেনোপজ ও স্ট্রোকের মধ্যে কি কোনও সম্পর্ক রয়েছে?

একাধিক গবেষণা বলছে, মেনোপজ ও স্ট্রোকের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক রয়েছে। শ্রীলঙ্কার ন্যাশনাল স্ট্রোক এ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ডা. গামিনি পাথিরানা বলেন, সারা পৃথিবীতে মেনোপজের পর নারীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।

২০২১ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দাবি করা হয়, ৫০ থেকে ৫৪ বছর বয়সে মেনোপজ হওয়া নারীদের তুলনায় ৪০ বছর হওয়ার আগে মেনোপজ হওয়া নারীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে পরবর্তী জীবনে।

তাদের বিশ্বাস, স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ার সঙ্গে এস্ট্রাডিয়ল নামের এক ধরনের হরমোনের মাত্রা কমার সম্পর্ক থাকতে পারে। এ হরমোন রক্তনালীর ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে অথবা এমন কিছু শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে, যা স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়ায়।

ড. বুশনেল তার গবেষণায় মেনোপজ এবং স্ট্রোকের মধ্যে যোগসূত্র অনুসন্ধান করেছেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, মেনোপজ পরবর্তী মহিলাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে মূলত বয়সজনিত কারণে, যেমন রক্তচাপ বৃদ্ধি, পেটের স্থূলতা, ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং উচ্চ কোলেস্টেরল। মেনোপজের পরে এস্ট্রোজেন কমে যাওয়াও একটি ভূমিকা পালন করতে পারে, কারণ এস্ট্রোজেন অল্পবয়সী নারীদের ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষামূলক হতে পারে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার