শীতকালে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কেন বাড়ে?
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৩৪ পিএম
দরজায় নাড়ছে শীত। গরমের মাঝেই শীতের আমেজ পাওয়া যাচ্ছে। আর শীতকাল মানেই উৎসব আর উষ্ণতার আমেজ। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, শীতের সময়ে অন্যান্য ঋতুর তুলনায় হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। মানুষের শরীরের তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপে যে পরিবর্তন আসে, সেটাই এ ঝুঁকির মূল কারণ। সে জন্য শীতকালে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে শীতকালে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়ে—
শীতকালে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ার প্রধান কারণ কিছু শারীরিক প্রক্রিয়া দায়ী। প্রথমত রক্তনালি সংকুচিত হওয়া। ঠান্ডার সংস্পর্শে এলে শরীর দ্রুত তাপ ধরে রাখার চেষ্টা করে। এর ফলে ত্বকের নিচের রক্তনালিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। এ প্রক্রিয়াটিকে ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন বলা হয়। এর ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং হৃৎপিণ্ডকে রক্ত পাম্প করার জন্য বেশি চাপ দিতে হয়।
আর রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যায়। শীতে রক্ত কিছুটা ঘন হয়ে যায় এবং প্লেটলেটগুলো বেশি আঠালো হয়ে ওঠে। এর ফলে রক্তনালির ভেতর সহজে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বাড়ে, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তৈরি করে থাকে।
এ ছাড়া ভিটামিন ডি'র অভাবও একটি বড় কারণ। শীতকালে সূর্যের আলোর অভাব হয়। ফলে শরীরে ভিটামিন ডি'র ঘাটতি দেখা যায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ডি'র অভাব কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
আবার শারীরিক পরিশ্রম ও ঠান্ডা বাতাসও হার্ট অ্যাটাকের একটি বড় কারণ। খুব ভোরে বা সন্ধ্যার পর তীব্র ঠান্ডায় হাঁটতে বের হলে বা ভারি কাজ করলে ঠান্ডা বাতাস সরাসরি ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং শরীর দ্রুত শীতল হয়ে যায়। এটি হৃৎপিণ্ডের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
এবার জেনে নিই নিরাপদ থাকার কৌশল—
শীতকালে হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে নিম্নোক্ত সতর্কতা মেনে চলা জরুরি। কারণ এসবে নিয়ন্ত্রণ না করলে আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি সম্মুখীন হবেন।
১. নিজেকে উষ্ণ আমেজে রাখুন
পর্যাপ্ত পরিমাণে গরম কাপড়— মাফলার, কান ঢাকা টুপি এবং গ্লাভস ব্যবহার করুন। আর ঘর উষ্ণ রাখুন। ঘরের তাপমাত্রা আরামদায়ক রাখুন। খুব ভোরে বা সন্ধ্যার পর তীব্র ঠান্ডায় বের হওয়া এড়িয়ে চলুন।
২. নিয়মিত ব্যায়াম
সকালে খুব ভোরে ঠান্ডায় ব্যায়াম না করে দিনের উষ্ণতম সময় দুপুরবেলা ব্যায়াম করুন। ইনডোরে করুন। এ ছাড়া ঠান্ডা খুব বেশি হলে বাইরে না গিয়ে ঘরে হালকা ব্যায়াম করুন। আর সবসময় ভারি পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলুন।
ভিটামিন ডি'র ঘাটতি পূরণের জন্য ডিম, ফ্যাটি ফিশ কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন। আর শীতে পিপাসা কম লাগলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন, যাতে রক্ত পাতলা থাকে।
এ ছাড়া অতিরিক্ত মদপান শরীরকে সাময়িকভাবে উষ্ণতার অনুভূতি দিলেও, এটি রক্তনালিকে হঠাৎ প্রসারিত করে এবং দ্রুত শরীরকে শীতল করে দিতে পারে, যা হৃৎপিণ্ডের ওপর চাপ ফেলে।
৪. নিয়মিত চেকআপ
আবার যাদের হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, তারা নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন। প্রয়োজনে শীতের শুরুতেই ওষুধ সমন্বয় করে নেওয়া খাওয়ার ব্যবস্থা করুন।