Logo
Logo
×

লাইফস্টাইল

সবজি দেখলেই আতঙ্কিত হন? তাহলে আপনারও আছে ‘ল্যাকানোফোবিয়া’

Icon

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০১:২১ পিএম

সবজি দেখলেই আতঙ্কিত হন? তাহলে আপনারও আছে ‘ল্যাকানোফোবিয়া’

খাবারের প্লেটে সবজি দেখলে অনেকের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়। কিছু মানুষ বাজারে গেলে সবজি বিক্রির জায়গা এড়িয়ে চলেন, আবার কেউ সবজি দেখলেই নিজের মন-মেজাজের পরিবর্তন অনুভব করেন। এটি একটি অস্বাভাবিক মানসিক সমস্যা, যার নাম ‘ল্যাকানোফোবিয়া’। গ্রিক শব্দ ‘ল্যাকনো’ মানে সবজি এবং ‘ফোবোস’ মানে ভয় বা ঘৃণা। এটি একটি বিরল ফোবিয়া।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, শস্য, ফল ও সবজিসমৃদ্ধ খাবার মানসিক উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে, কিন্তু প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অতিরিক্ত চিনি উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়। তবে ল্যাকানোফোবিয়ায় আক্রান্ত কিছু মানুষ এতটা ভয় পান যে, তাদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের ফোবিয়ায় আক্রান্ত। নারীরা পুরুষদের তুলনায় দুইগুণ বেশি আক্রান্ত হন। ল্যাকানোফোবিয়া মূলত পুষ্টিহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সবজি না খাওয়ার ফলে শরীর প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ থেকে বঞ্চিত হয়, যা মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলে। 

আরও পড়ুন
ল্যাকানোফোবিয়ার লক্ষণ হলো, অনেক সময় সবজি দেখলেই মানুষের যুক্তি কাজ করে না। কিছু মানুষ সবজি এড়িয়ে চলে, কেউ ভাবেন সবজি স্বাস্থ্যকর নয়, আবার কেউ সবজির অস্তিত্বকেই অস্বীকার করেন। এসব কারণে আতঙ্ক এবং প্যানিক অ্যাটাকও হতে পারে।

এই ফোবিয়ার নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি, তবে পরিবেশ এবং বংশগতির প্রভাব তা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যাদের পরিবারে মানসিক সমস্যা রয়েছে, তাদের মধ্যে এ ধরনের ফোবিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। ট্রমাটিক ঘটনা বা মানসিক আঘাতও এই ভয়কে উস্কে দিতে পারে, তাই চিকিৎসায় রোগীর পরিবেশ ও পারিবারিক ইতিহাস জানা গুরুত্বপূর্ণ।

ল্যাকানোফোবিয়ার চিকিৎসায় একক কোনো পদ্ধতি কার্যকর নয়। দুই ব্যক্তির ক্ষেত্রেই ভিন্ন ভিন্ন প্রয়োজন, লক্ষ্য ও প্রতিক্রিয়া থাকে। চিকিৎসকরা সাধারণত একাধিক থেরাপি এবং ওষুধের মাধ্যমে সেরা পদ্ধতি নির্ধারণ করেন।

> এক্সপোজার থেরাপি হচ্ছে সবচেয়ে প্রচলিত এবং কার্যকর পদ্ধতি, যেখানে রোগীকে ধীরে ধীরে তার ভয়ঙ্কর বিষয় বা পরিস্থিতির মুখোমুখি করা হয়, যেমন সবজি দেখা, ছোঁয়া বা রান্না করা। এর মাধ্যমে রোগীকে তার অযৌক্তিক ভয়কে প্রশমিত করতে সাহায্য করা হয়।

> ডায়ালেকটিক্যাল বিহেভিয়ার থেরাপি (ডিবিটি) আবেগ নিয়ন্ত্রণ শিখিয়ে মানসিক চাপ কমায়। এর মধ্যে ‘হাফ স্মাইলিং’ নামক কৌশল রয়েছে, যার মাধ্যমে ভয় অনুভব করার সময় হাসি দিয়ে প্রতিক্রিয়া পরিবর্তন করা হয়। 

আরও পড়ুন
> মাইন্ডফুলনেস ও মেডিটেশন নিয়মিত অনুশীলন উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, মনোযোগ বাড়ায় এবং প্যানিক অ্যাটাকের সময় শান্ত থাকতে সহায়তা করে।

> কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (সিবিটি) রোগীর চিন্তা এবং আচরণ বিশ্লেষণ করে তাকে শেখানো হয়, কীভাবে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা ভেঙে ফেলতে হবে।

> ব্যায়ামও উদ্বেগ কমাতে অত্যন্ত কার্যকর, যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার বা সাইক্লিং, যা সেরোটোনিন বাড়িয়ে মানসিক প্রশান্তি আনে। তবে অপুষ্টির কারণে যারা সমস্যায় আছেন, তাদের ব্যায়াম শুরুর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সবশেষে বলা যায়, ল্যাকানোফোবিয়া কোনো নিরাময়হীন সমস্যা নয়। সঠিক চিকিৎসা, সময় এবং মানসিক সমর্থনের মাধ্যমে এটি জয় করা সম্ভব। গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রথমে পদক্ষেপ নেওয়া এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার