জীবন বীমার পেনশন বীমা পলিসি কি হালাল?
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১৩ পিএম
প্রশ্ন: সরকারি জীবন বীমার পেনশন বীমা সম্পর্কে জানতে চাই। এটা কি বৈধ হবে? অনেকেই বলে এটা সুদ হবে না। অন্যান্য সরকারি পেনশনের মত এটা।
উত্তর: বর্তমান জীবন বীমা করপোরেশন সুদভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। এটি শরীয়ত মেনে পরিচালিত হয় না। কাজেই এর পেনশন পলিসিতে টাকা রাখা এবং পাওয়া হালাল হবে না।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহ তাআলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। (সুরা বাকারাহ ২৭৫)
রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, জেনে-শুনে এক দিরহাম পরিমাণ সুদ খাওয়া আল্লাহর নিকট ৩৬ জন নারীর সঙ্গে ব্যভিচারের চাইতে অধিক গুনাহের কাজ। (মুসনাদে আহমাদ ২১৪৫০)
তাছাড়া জীবন বীমা করপোরেশনের ব্যক্তিগত পেনশন বীমা পলিসি জীবনের ঝুঁকি গ্রহণের সঙ্গে অবসর জীবনের জন্যে আজীবন পেনশনের নিশ্চয়তা দেয়। অথচ মানুষের প্রাণ বা অঙ্গ শরীয়তের দৃষ্টিতে মূল্যমান সমৃদ্ধ কোনো পণ্য নয়। কাজেই তার মূল্য নির্ধারণ শরিয়ত সম্মত নয়।
অনুরুপভাবে এর মধ্যে এক প্রকার জুয়া বিদ্যমান। কেননা, ব্যক্তি কখন মৃত্যুবরণ করবে আর কত টাকা পাবে, তা অনিশ্চিত। এ ক্ষেত্রে تعليق الملك مع الخطر তথা সম্পদের মালিকানাকে অনিশ্চিত সম্ভাবনাময় বিষয়ের সাথে যুক্ত করা হয়, যা জুয়া বলে গণ্য।
আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ -এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক -যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শুত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, এখনও কি তোমরা নিবৃত্ত হবে? (সূরা মায়েদা ৯০-৯১)
আমাদের দেশে যেসব ইন্সুরেন্স কোম্পানি শরীয়া মোতাবেক পরিচালিত হওয়ার দাবি করে, কার্যত অনেক ক্ষেত্রেই তারা ইসলামী শরীয়ার নীতিমালা বাস্তবায়ন করে না। কাগজপত্রে কিছু ইসলামী পরিভাষা ব্যবহার করেই ক্ষান্ত থাকে।
এছাড়া এরা যে মডেলে চলে, সেই মডেলটিই নির্ভরযোগ্য আলেমদের নিকট অবৈধ। শরীয়া মোতাবেক পরিচালিত হওয়ার দাবিদার এ কোম্পানিগুলোর পলিসি আর প্রচলিত ধারার ইন্সুরেন্স কোম্পানির পলিসির মধ্যে বাস্তব অর্থে তেমন কোনোই পার্থক্য নেই।
সুতরাং হালাল-হারাম বেছে চলতে চায়- এমন ব্যক্তির জন্য এধরনের কোম্পানিতে চাকরি করা থেকে বিরত থাকা চাই। এধরনের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করাও শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েজ নয়।
জীবন বীমা কি?
মূলত জীবনের নিরাপত্তার জন্য যে বীমা করা হয় তাকেই জীবন বীমা বলে। সহজভাবে বলতে গেলে জীবনের ঝুঁকি কমানোর জন্য যে বীমা করা হয় তাকেই জীবন বীমা বলা হয়। জীবন বীমাকে এক ধরণের চুক্তি বলা যায়। এটি বীমাকারি ও বীমা কোম্পানির মধ্যে এমন ধরণের একটি প্রতিশ্রুতি যেখানে বীমাগ্রহিতার জীবনের ঝুঁকি নিরসনের জন্য বীমা কোম্পানি দায়বদ্ধ হয়।
এই প্রতিশ্রুতিতে ব্যক্তি বীমা কোম্পানিকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিয়মিত ভাবে অর্থ জমা দিয়ে থাকেন। এই অর্থ নির্ধারিত সময় পর বা বীমাগ্রহিতার মৃত্যু হলে একটি মোটা পরিমাণে তার মনোনীত ব্যক্তিকে প্রদান করা হয়।
সূত্র: আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/৪৬৫, ১/৩২৯; তাহরিরুল কালাম ফি মাসাইলিল ইলতিযাম, পৃ. ১৯৯, আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৬৩; আলইখতিয়ার ২/৫৬৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮৬; আলবাহরুর রায়েক ৮/২০১; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/২৭৫; আহকামুল মালিল হারাম পৃ. ৭৪