Logo
Logo
×

লাইফস্টাইল

তোতলামি কোনো রোগ নয়, সহজেই ভালো হয়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৫৩ পিএম

তোতলামি কোনো রোগ নয়, সহজেই ভালো হয়

রতন কুমার পাল বছরজুড়ে প্রতিদিনই কোনো না কোনো দিবস পালিত হয়। তেমনই আজ (২২ অক্টোবর) পালিত হয় আন্তর্জাতিক তোতলামি সচেতনতা দিবস। পৃথিবীর গতিময়তায় ক্যালেন্ডারের পাতায় আরও একটি ২২ অক্টোবর চলে এল।

আজকের প্রতিপাদ্য ‘তোতলামি কোনো রোগ নয়, সহজেই ভালো হয়’। কাউকে তোতলাতে দেখলে আপাতদৃষ্টিতে হয়তো আপনার ছোট একটি সমস্যা মনে হতে পারে। কিন্তু কথা বলার এই সামান্য ক্রটির কারণে কত মেধাবী মানুষও অবেহলিত থাকে। তাদের কথায় অনেকে হাসে, কেউ তাদের নিয়ে ইয়ার্কিও করে। কিন্তু তাদের যে কারও হাসির খোরাক বা উপহাসের পাত্রে পরিণত হতে না হয়, সে উদ্দেশ্যেই দিনটি পালন করা হয়। সেই সঙ্গে ভুক্তভোগীদের সাহস জোগানো, যথোপযুক্ত পরামর্শ দেওয়া ও তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দিনটি পালন করা প্রয়োজন।

ইশারায় মনের ভাব প্রকাশের পরবর্তী ধাপে মানুষ তার নিজস্ব প্রয়োজনেই কথা বলা বা ভাষার ব্যবহার করেছে। ভাষার বা কথার মাধ্যমে আমরা আমাদের মনের ভাব পুরোপুরি ভাবে প্রকাশ করতে পারি। মনের ভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করলে যেমন মানসিক শান্তি পাওয়া যায়। আবার চেপে রাখলে মানসিক সমস্যা বাড়তে পারে।

কিন্তু একজন শিক্ষিত ও বুদ্ধিমান মানুষও অনেক সময় এই তোতলামির কারণে অবজ্ঞার শিকার হন। সে তার মনের কথা কারও কাছেই খোলসা করে বলতে পারেন না। সব সময় মানসিক অতৃপ্তি নিয়েই থাকতে হয়। এমন মানুষ আমাদের আশপাশেই আছে। দুঃখের বিষয় হলো সেই মানুষগুলোর মনের অবস্থা কেউ বোঝার চেষ্টা করে না। আত্মীয়, বন্ধু এমনকি নিজের বাবা-মাও অনেক সময় কথা বলার এই ক্রটিকে গুরুত্ব দেন না। এটার কিছু করার নেই, ভাগ্যের দোষ - বলে পাশ কাটিয়ে যান অনেকে। কোনো কোনো বাবা-মা বকাবকিও করেন।

গত ১২ বছর এই মানুষদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতায় দেখেছি মেধাবী হয়েও এমন মানুষ অবমূল্যায়নের শিকার, দক্ষ হয়েও স্বীকৃতি মেলে না, ব্যক্তিগত সম্পর্কেও বাধা সৃষ্টি হয়, এমনকি বিয়েও ভেঙে যায়।

কিন্তু আদ্ভুত বিষয় হলো - তোতলামি আদতে কোনো শারীরিক সমস্যা নয়। এটা জন্মগত বা বশংগত কোনো রোগও নয়। এটি মানসিক ও অভ্যাসজনিত করণে হয়ে থাকে।

একজন তোতলামিতে ভোগা মানুষ কিন্তু সব সময় আটকান না, একই শব্দতেও সবসময় তোতলামি হয় না। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রকমফের হয়। অনেক মানুষের তার নিজস্ব পরিমন্ডলে বা কমফোর্ট জোনে কথা বলার সময় কোনো তোতলামিই আসে না।

কমফোর্ট জোনের বাইরের কথা বললে, অপরিচিত কারও সামনে, ক্লাসের প্রেজেন্টেশনে বা উচ্চব্যক্তিত্ব সম্পন্ন কারও সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে খুব বেশি তোতলামি হয়। এমনটা হয় মনস্তাত্ত্বিক কারণেই। শারীরিক ক্রটিজনিত কারণে হলে একই শব্দ সব ক্ষেত্রেই আটকে যেত বা কমফোর্ট জোনেও তোতলামি হতো। আশ্চর্যের বিষয় গান গাওয়ার সময় কিন্তু কোনো তোতলামি হয় না।

যেসব কারণে তোতলামি হয়
তোতলামি হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। তবে বিভিন্ন কারণেই এটি হতে পারে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ-

১. ছোটবেলা থেকে খুব বেশি আতঙ্কিত বা উদ্বিগ্ন থাকতে হলে।
২. শৈশবে কঠোর শাসনের ফলে।
৩. আচমকা শারীরীক বা মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হলে।
৪. অতি দ্রুত কথা বলার অভ্যাসের ফলে।
৫. ভাবনা আর কথা বলা দুইয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য না হলে।
৬. শৈশবে কোনো বিশেষ ব্যক্তিকে ভয় পেলে এবং বারবার ওই ব্যক্তির সম্মুখীন হলে।
৭. শৈশবে কোনো অভ্যাস জোরপূর্বক বদল করলে।
৮. শৈশবে বাবা মা বা আপনজন ছাড়া একা কাটানোর জন্যও হতে পারে।
৯. ভয়ঙ্কর কোনো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হলে।
১০. প্রথম প্রথম স্কুলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা নেতিবাচক না হলে।
১১. কোনো রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়। যেমন দীর্ঘকালীন জ্বর।
১২. মস্তিষ্কে আঘাত পেলেও হতে পারে।


কারও কারও বিশেষ পরিস্থিতিতে এই সমস্যা বেড়ে যায়, যেমন-
>> নতুন পরিবেশ। >> অপরিচিত মানুষের মুখোমুখি হওয়া। >> নিজের নাম, বাবার নাম, ঠিকানা ও মোবাইল ফোন নম্বর বলার সময়। >> ক্লাসে শিক্ষকের প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে। >> মৌখিক পরীক্ষায়। >> পরীক্ষার সময়। >> শারীরিক দুর্বলতায় বা বেশি ক্ষুধার সময়। >> হঠাৎ করে কোনো বিপদে পড়লে।>> চাকরির ইন্টারভিউয়ের সময়। >> রেগে গেলে বা ঝগড়া করার সময়। >> মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলে ও প্রচণ্ড ভয় পেলে।

তবে নিজের কমফোর্ট জোনের মধ্যে কথা বললে, মেজাজ ভঅলো থাকলে ও লোকে কী ভাববে এটা ভুলে কথা বলতে পারলে তোতলামি কমে যায়।

এ সমস্যার সমাধান কী
তোতলামি দূর করা আসলেই কঠিন নয়। তবে সারানোর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। প্রথমত যে কোনো মূল্যে এই সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে। এবং একজন অভিজ্ঞ মেন্টরের তত্ত্বাবধানে সঠিক নিয়মে প্রয়োজনীয় ও কার্যকরী প্রাকটিসগুলো করলে সহজেই তোতলামি দূর হয়।

প্রথম ২/৩ দিন যথাযথভাবে প্রাকটিস করলে আত্মবিশ্বাস অনেকটাই ফিরে আসে। এভাবে ২০/২৫ দিন নিয়মিত প্রাকটিস করলে কথা বলাও বেশ সাবলীল হওয়া শুরু হয়। এসময় ধৈর্য সহকারে নিয়মিত প্রাকটিস করতে হবে।

তবে তোতলামি দূর করার এই প্রক্রিয়া যত কম বয়সে করা যায় ততই ভালো। যদিও যে কোনো বয়সেই শুরু করা সম্ভব। কিন্তু সমস্যা যতদিন বহন করে ততদিন মানসিক যন্ত্রণা পোহাতে হয়, লজ্জিত হতে হয়, অপমান অপদস্থ হতে হয়। সুতরাং যত তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান করা যায় ততই মঙ্গল।
সকল অভিভাবককে বলব, আপনার বাচ্চার যদি এরকম সমস্যা দেখা যায় তাহলে তাকে বকাবকি করবেন না। কোনো টোটকার আশ্রয় নেবেন না, অবৈজ্ঞানিক কোনো কিছুতে ভরসা করবেন না। যেখানে গেলে সত্যিকার অর্থে তোতলামি ভালো হয় খোঁজ নিয়ে তাদের পরামর্শমতো ব্যবস্থা নেবেন। এতে পারিপার্শ্বিক পরিমণ্ডল তাদের জন্য সুখকর হবে। যোগ্যতার জয় হবে।

 লেখক: রতন কুমার পালতোতলামি সমাধানের পরামর্শকস্ট্যামারিং রিমুভ সেন্টারএলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার