
ওজন কমানোর দৌড়ে আমরা কতদূর যাচ্ছি? ইনফ্লুয়েন্সার ও মেকআপ আর্টিস্ট তাসনিম তমা হয়তো সেই প্রশ্নের এক বেদনাদায়ক উত্তর। মাত্র ৬ মাসে ১২২ কেজি থেকে ৪২ কেজি ওজন কমিয়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অস্বাস্থ্যকর (ওম্যাড) ডায়েটের ফলে শেষে মৃত্যুর কাছে হার মানতে হয় তাকে।
সামাজিত যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন - ‘একজন মানুষকে কতটা বডিশেমিং সহ্য করতে হয়, যে নিজের শরীরকে এভাবে কষ্ট দিয়ে সে রূপ বদলানোর চেষ্টা করে?’
তবে শুধু বডি শেমিং ও ওজন কমানোর চেষ্টা নয়, শরীরের চাহিদা ও পুষ্টি বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য না থাকাও এখানে একটি বড় প্রভাব রাখতে পারে। হয়তো তমার ক্ষেত্রেও এই বিষয়টিই ঘটেছে। অতিরিক্ত ডায়েট, অপুষ্টি, ও মানসিক চাপ-সবকিছু মিলিয়ে তমার শরীরে বাসা বাঁধে নানা জটিলতা। আর সেখান থেকেই ঘটে এই মর্মান্তিক পরিণতি।
তাসনিম তমা ওজন কমানোর জন্য বেছে নিয়েছিলেন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় একটি ডায়েট ট্রেন্ড- ওম্যাড ডায়েট । ইংরেজিতে যাকে বলে ওএমএডি (ওম্যাড) বা ওয়ান মিল আ ডে।
ওম্যাড ডায়েট হলো দিনে ২৩ ঘণ্টা না খেয়ে থেকে নির্দিষ্ট সময়ে এক ঘণ্টার মধ্যে সারাদিনের দরকারের খাবার খাওয়া। এই কঠিন ডায়েটের কারণে শরীরে ক্যালোরির ঘাটতি তৈরি হয়, ফলে দ্রুত ওজন কমে।
কিন্তু এই ডায়েট কি সত্যিই বিপজ্জনক হতে পারে? আসুন জেনে নেওয়া যাক ওম্যাড ডায়েটের অপকারিতা কী কী
ওম্যাড কী
এটি মূলত একটি ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খেতে হয়। অর্থাৎ প্রায় ২৩ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হয়। এই ডায়েটের ফলে শরীরে ক্যালরির ঘাটতি তৈরি হয়, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এর আগে বলিউড পরিচালক কারন জোহারও এই ডায়েট করে ওজন কমিয়েছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাভাবিকভাবে শরীরের প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালোরি, প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ দরকার হয়। একবেলা খাওয়ার ফলে এই প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলো অনেক সময় পূরণ হয় না। দীর্ঘদিন এমনভাবে চললে শরীরে দেখা দেয় পুষ্টিহীনতা, পেশি ক্ষয় ও দুর্বলতা।
আরও বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হয় যখন এই ডায়েট কেউ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অনুসরণ করে। ২০১৮ সালের যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ওম্যাড বা দিনে একবার খাওয়ার ডায়েট অনেকের জন্য ওজন কমাতে কার্যকর হলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
ভারতীয় পুষ্টিবিদরা জানান, এই প্রকার ডায়েট মোটেই শরীরের জন্য ভালো নয়। এতে অজান্তেই শরীরের বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ডায়েট এমন হওয়া জরু্রি, যাতে শরীরে ক্যালোরির চাহিদা পূরণ হয় এবং শরীর সব রকম পুষ্টি পায়। তবে ইন্টারনেটে দেখে কোনো পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়াই এই রকম ডায়েট শুরু করা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। এই ডায়েট করার চেয়ে না করাই ভালো।
ওম্যাড ডায়েটের অপকারিতা
১. শরীরে শক্তি আসে ক্যালোরি থেকে। হঠাৎ করে কম ক্যালোরির খাবার খেলে শরীরের পেশির উপর প্রভাব পড়ে। পেশির শক্তি কমে আসে। ক্লান্তি আসে। সারাক্ষণ ঝিমুনি ভাব এবং কাজকর্মে অনীহা দেখা দেয়।
২. দিনে একবার খাওয়া শরীরের জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে, এতে অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগতে পারে। পাশাপাশি বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
৩. ডায়াবেটিস বা হৃদরোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। কারণ সারাদিন না খেয়ে একসঙ্গে অনেক খাবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে বা কমে যেতে পারে, যা কখনো কখনো মারাত্মক জটিলতা বা মৃত্যুঝুঁকি তৈরি করে।
৪. ডায়েটের ফলে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ডায়েটের সময়ে প্রয়োজনের তুলনায় কম ফ্যাট খাওয়া হয়, তখন দেহকোষ পর্যাপ্ত পরিমাণে ফ্যাট
পায় না। সেই শূন্যস্থান পূরণ করতেই কোষ শরীরের অতিরিক্তপানি শুষে নেয়। যার ফলে গ্লাইকোজ়েন ভেঙে যায়। গ্লাইকোজ়েন ভাঙলেই পানিশূন্যতা তৈরি হয়। যা শরীরের উপর প্রভাব ফেলে।
৫. বিপাকক্রিয়ার হার কমে যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। ডায়েটের ফলে দেহে সঠিক মাত্রার ভিটামিনের ঘাটতি হয়। ফলে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে যায়। চুল পড়ে যাওয়া বা অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যাও দেখা যায়।
৬. শরীরে স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে বিষণ্ণতা, ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন ইত্যাদি হতে পারে।
কীভাবে নিরাপদ থাকবেন
১. যেকোনো ডায়েট শুরু করার আগে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
২. দিনে একবেলা খাবার খেতে হলে সেই খাবারে যেন সব ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে-প্রোটিন, ফাইবার, শর্করা ও স্বাস্থ্যকর চর্বি। সেদিকে খেয়াল রাখুন।
৩. পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
৪. শরীর দুর্বল লাগলে বা মাথা ঘুরলে অবিলম্বে ডায়েট বন্ধ করুন।
ফাস্টিং বা ক্যালরি নিয়ন্ত্রণ ভালো হলেও দিনে দুই বা তিনবেলা স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া দেহের জন্য অনেক বেশি নিরাপদ ও কার্যকর। ওম্যাড ডায়েট খুবই কড়া এবং সবার জন্য উপযুক্ত নয়।
সূত্র: ওয়েবএমডি, হেলথলাইন , টাইমস অব ইন্ডিয়া ও অন্যান্য আরও পড়ুন শিঙাড়া খেলেও স্বাস্থ্য ভালো থাকবেভিন্ন ভিন্ন বয়সে হাড় মজবুত রাখতে যা খাবেন
সামাজিত যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন - ‘একজন মানুষকে কতটা বডিশেমিং সহ্য করতে হয়, যে নিজের শরীরকে এভাবে কষ্ট দিয়ে সে রূপ বদলানোর চেষ্টা করে?’
তবে শুধু বডি শেমিং ও ওজন কমানোর চেষ্টা নয়, শরীরের চাহিদা ও পুষ্টি বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য না থাকাও এখানে একটি বড় প্রভাব রাখতে পারে। হয়তো তমার ক্ষেত্রেও এই বিষয়টিই ঘটেছে। অতিরিক্ত ডায়েট, অপুষ্টি, ও মানসিক চাপ-সবকিছু মিলিয়ে তমার শরীরে বাসা বাঁধে নানা জটিলতা। আর সেখান থেকেই ঘটে এই মর্মান্তিক পরিণতি।
তাসনিম তমা ওজন কমানোর জন্য বেছে নিয়েছিলেন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় একটি ডায়েট ট্রেন্ড- ওম্যাড ডায়েট । ইংরেজিতে যাকে বলে ওএমএডি (ওম্যাড) বা ওয়ান মিল আ ডে।
ওম্যাড ডায়েট হলো দিনে ২৩ ঘণ্টা না খেয়ে থেকে নির্দিষ্ট সময়ে এক ঘণ্টার মধ্যে সারাদিনের দরকারের খাবার খাওয়া। এই কঠিন ডায়েটের কারণে শরীরে ক্যালোরির ঘাটতি তৈরি হয়, ফলে দ্রুত ওজন কমে।
কিন্তু এই ডায়েট কি সত্যিই বিপজ্জনক হতে পারে? আসুন জেনে নেওয়া যাক ওম্যাড ডায়েটের অপকারিতা কী কী
ওম্যাড কী
এটি মূলত একটি ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খেতে হয়। অর্থাৎ প্রায় ২৩ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হয়। এই ডায়েটের ফলে শরীরে ক্যালরির ঘাটতি তৈরি হয়, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এর আগে বলিউড পরিচালক কারন জোহারও এই ডায়েট করে ওজন কমিয়েছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাভাবিকভাবে শরীরের প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালোরি, প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ দরকার হয়। একবেলা খাওয়ার ফলে এই প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলো অনেক সময় পূরণ হয় না। দীর্ঘদিন এমনভাবে চললে শরীরে দেখা দেয় পুষ্টিহীনতা, পেশি ক্ষয় ও দুর্বলতা।
আরও বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হয় যখন এই ডায়েট কেউ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অনুসরণ করে। ২০১৮ সালের যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ওম্যাড বা দিনে একবার খাওয়ার ডায়েট অনেকের জন্য ওজন কমাতে কার্যকর হলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
ভারতীয় পুষ্টিবিদরা জানান, এই প্রকার ডায়েট মোটেই শরীরের জন্য ভালো নয়। এতে অজান্তেই শরীরের বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ডায়েট এমন হওয়া জরু্রি, যাতে শরীরে ক্যালোরির চাহিদা পূরণ হয় এবং শরীর সব রকম পুষ্টি পায়। তবে ইন্টারনেটে দেখে কোনো পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়াই এই রকম ডায়েট শুরু করা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। এই ডায়েট করার চেয়ে না করাই ভালো।
ওম্যাড ডায়েটের অপকারিতা
১. শরীরে শক্তি আসে ক্যালোরি থেকে। হঠাৎ করে কম ক্যালোরির খাবার খেলে শরীরের পেশির উপর প্রভাব পড়ে। পেশির শক্তি কমে আসে। ক্লান্তি আসে। সারাক্ষণ ঝিমুনি ভাব এবং কাজকর্মে অনীহা দেখা দেয়।
২. দিনে একবার খাওয়া শরীরের জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে, এতে অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগতে পারে। পাশাপাশি বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
৩. ডায়াবেটিস বা হৃদরোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। কারণ সারাদিন না খেয়ে একসঙ্গে অনেক খাবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে বা কমে যেতে পারে, যা কখনো কখনো মারাত্মক জটিলতা বা মৃত্যুঝুঁকি তৈরি করে।
৪. ডায়েটের ফলে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ডায়েটের সময়ে প্রয়োজনের তুলনায় কম ফ্যাট খাওয়া হয়, তখন দেহকোষ পর্যাপ্ত পরিমাণে ফ্যাট
পায় না। সেই শূন্যস্থান পূরণ করতেই কোষ শরীরের অতিরিক্তপানি শুষে নেয়। যার ফলে গ্লাইকোজ়েন ভেঙে যায়। গ্লাইকোজ়েন ভাঙলেই পানিশূন্যতা তৈরি হয়। যা শরীরের উপর প্রভাব ফেলে।
৫. বিপাকক্রিয়ার হার কমে যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। ডায়েটের ফলে দেহে সঠিক মাত্রার ভিটামিনের ঘাটতি হয়। ফলে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে যায়। চুল পড়ে যাওয়া বা অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যাও দেখা যায়।
৬. শরীরে স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে বিষণ্ণতা, ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন ইত্যাদি হতে পারে।
কীভাবে নিরাপদ থাকবেন
১. যেকোনো ডায়েট শুরু করার আগে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
২. দিনে একবেলা খাবার খেতে হলে সেই খাবারে যেন সব ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে-প্রোটিন, ফাইবার, শর্করা ও স্বাস্থ্যকর চর্বি। সেদিকে খেয়াল রাখুন।
৩. পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
৪. শরীর দুর্বল লাগলে বা মাথা ঘুরলে অবিলম্বে ডায়েট বন্ধ করুন।
ফাস্টিং বা ক্যালরি নিয়ন্ত্রণ ভালো হলেও দিনে দুই বা তিনবেলা স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া দেহের জন্য অনেক বেশি নিরাপদ ও কার্যকর। ওম্যাড ডায়েট খুবই কড়া এবং সবার জন্য উপযুক্ত নয়।
সূত্র: ওয়েবএমডি, হেলথলাইন , টাইমস অব ইন্ডিয়া ও অন্যান্য আরও পড়ুন শিঙাড়া খেলেও স্বাস্থ্য ভালো থাকবেভিন্ন ভিন্ন বয়সে হাড় মজবুত রাখতে যা খাবেন