Logo
Logo
×

লাইফস্টাইল

যোগব্যায়াম কি শারীরিক কসরত

Icon

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫, ০৪:৫৬ পিএম

যোগব্যায়াম কি শারীরিক কসরত
শরীর, মন ও আত্মার সুষম সমন্বয়ে জীবনকে সুন্দর ও সুস্থ রাখার অন্যতম উপায় হিসেবে যোগব্যায়াম এর উল্লেখ নিশ্চয় আপনিও শুনেছেন। তবে অন্য শরীরচর্চার মতো এটি শারীরিক কসরত নয়, বরং একে একটি জীবনদর্শন হিসেবে দেখা হয়। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানও এখন স্বীকার করছে যে, যোগব্যায়ামের নিয়মিত অভ্যাস মানুষকে ভেতর থেকে সুস্থ ও প্রশান্ত করে তোলে।

যোগব্যায়াম আসলে কী
যোগব্যায়াম হল প্রাচ্যের একটি প্রাচীন শারীরিক ও মানসিক অনুশীলন পদ্ধতি, যা স্বাস্থ্য, প্রশান্তি ও আত্মিক উন্নতি করতে সাহায্য করে। এটি তিন ধরণের অনুশীলনের সমন্বয়ে গঠিত – আসন (শারীরিক ভঙ্গি), প্রাণায়াম (শ্বাস-নিয়ন্ত্রণ) ও ধ্যান। যোগব্যায়াম নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে দেহের নমনীয়তা, শক্তি ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, পাশাপাশি মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমে।

এটি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও অনিদ্রার মতো সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। বিভিন্ন ধরনের যোগব্যায়াম রয়েছে, যেমন হঠযোগ, রাজযোগ ও ভক্তিযোগ। আধুনিক জীবনে ব্যায়াম, মনোযোগ বৃদ্ধি ও আত্মবিশ্বাস জাগাতে যোগব্যায়ামের জনপ্রিয়তা বিশ্বজুড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি সকল বয়সের মানুষের জন্য উপযোগী একটি সহজ ও কার্যকরী স্বাস্থ্যব্যবস্থা।

চলুন আজ (২১ জুন) বিশ্ব যোগ দিবসে জেনে নেওয়া যাক যোগব্যায়াম কীভাবে আপনার জীবনে কী কী ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে-

১. মানসিক প্রশান্তি ও চাপমুক্তি
যোগব্যায়াম আমাদের মানসিক চাপ হ্রাস করতে সাহায্য করে। ধ্যান ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম (যেমন প্রাণায়াম) মস্তিষ্কে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়িয়ে মনকে শান্ত রাখে। উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা ও হতাশা কমাতে এটি অত্যন্ত কার্যকর।

২. শারীরিক নমনীয়তা ও শক্তি বৃদ্ধি
যোগব্যায়ামের বিভিন্ন আসন শরীরকে নমনীয় ও শক্তিশালী করে তোলে। নিয়মিত চর্চা করলে পেশি ও অস্থিসন্ধিগুলোর ব্যথা কমে, শরীরের ভারসাম্য রক্ষা হয় এবং শরীর আরও দৃঢ় হয়।

৩. হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
যোগব্যায়াম উচ্চ রক্তচাপ ও চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এতে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়, হৃদযন্ত্র সুষ্ঠুভাবে কাজ করে এবং দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।

৪. ভালো ঘুমে সহায়ক
যোগব্যায়ামের মাধ্যমে শরীর ও মন যখন শান্ত থাকে, তখন ঘুমও ভালো হয়। বিশেষ করে যারা অনিদ্রায় ভোগেন, তাদের জন্য যোগব্যায়াম প্রাকৃতিক চিকিৎসা হিসেবে কাজ করে।

৫. মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়
যোগব্যায়াম মনোযোগ বৃদ্ধি ও শ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। পড়াশোনার ক্ষেত্রে, কর্মজীবনে অথবা সৃজনশীলতায় উন্নতি সাধনের জন্য যোগব্যায়াম বিশেষভাবে সহায়ক।

৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
যোগব্যায়াম আমাদের দেহের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে। এতে শরীর সহজে রোগে আক্রান্ত হয় না এবং সাধারণ ইনফেকশন বা ফ্লু দ্রুত নিরাময় হয়।

৭. হজমশক্তি উন্নত করে
যোগব্যায়ামের নির্দিষ্ট কিছু আসন যেমন পবনমুক্তাসন, বজ্রাসন ইত্যাদি হজমক্রিয়া সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। এতে গ্যাস, অ্যাসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সমস্যা কমে যায়।

৮. আত্মবিশ্বাস ও আত্মসচেতনতা বাড়ায়
যোগব্যায়ামের অভ্যাস শরীর ও মনকে সংযুক্ত করে নিজের প্রতি সচেতনতা জাগিয়ে তোলে। যোগব্যায়ামের মাধ্যমে নিজের প্রতি বিশ্বাস বাড়ে, আত্মসম্মানবোধ জন্মায় এবং আত্মবিশ্বাসী হওয়া যায়।

৯. নারীদের জন্য বিশেষ উপকার
মেয়েদের মাসিক সমস্যা, হরমোন ভারসাম্যহীনতা বা মেনোপজজনিত নানা সমস্যায় যোগব্যায়াম অত্যন্ত সহায়ক। এটি শরীরের হরমোনের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

১০. সুস্থ ও সুন্দর জীবনধারার পথপ্রদর্শক
যোগ শুধু ব্যায়াম নয়, এটি এক ধরনের জীবনধারা। যোগব্যায়াম আমাদের শরীর, মন ও আত্মাকে একত্রে পরিচালিত করে সুস্থ, শান্ত ও ইতিবাচক জীবনযাপনের অনুপ্রেরণা দেয় ।

প্রতিদিন কয়েক মিনিট নিয়ম করে যোগব্যায়াম করলে জীবনের অনেক জটিলতা দূর হয়। এটি ওষুধ নয়, কিন্তু অনেক রোগের প্রতিকার। তাই ব্যস্ত জীবনের মাঝেও সময় বের করে দিন নিজেকে ভালো রাখার জন্য। যোগাভ্যাস করুন, জীবনকে সুস্থ রাখুন ।

তথ্যসূত্র: হেলথলাইন, আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশন

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার