Logo
Logo
×

তথ্যপ্রযুক্তি

ফেসবুকজুড়ে ভয়ংকর অভিজ্ঞতার স্ট্যাটাস

Icon

আইটি ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:১৮ এএম

ফেসবুকজুড়ে ভয়ংকর অভিজ্ঞতার স্ট্যাটাস

শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট। প্রবল ঝাঁকুনিতে কেঁপে ওঠে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। প্রায় ১৫ সেকেন্ডের ভূমিকম্পে প্রথমে ভবনগুলো দুলতে থাকে। এরপর ভয়াবহ জাম্পিং। ফের এলোমেলো ঝাঁকুনি। ভয় আতঙ্কে মুহূর্তের মধ্যে ঘরে ঘরে কান্নার রোল, কেউ কেউ উচ্চৈঃস্বরে পড়তে থাকেন দোয়া-দরুদ। অচেনা এই ভূমিকম্পের আঘাতে ওই সময় সবারই মনে হয়েছে- এই বুঝি মারা যাব। চাপা পড়ব ভবনের নিচে।

শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এমন এক ভয়ার্ত সকাল পার করেছেন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ।

এদিকে ভূমিকম্পের পর অনেকে আফটার শকের আতঙ্কে ছিলেন। যদিও আফটার শক আঘাত করেনি। তবে এ ভূমিকম্পের পর ধীরে ধীরে ভবন ফাটলসহ ক্ষয়ক্ষতির নানা খবর সামনে আসতে থাকে।

ঢাকার বুকে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে বহু জায়গায় ভবনের দেওয়াল ফেটে গেছে, হেলে পড়েছে ভবন। কোথাও ভেঙে পড়েছে পুরোনো স্থাপনার অংশ। হতাহতের সংখ্যাও অনেক। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে চাপ, বাড়ছে স্বজনহারা মানুষের হৃদয়বিদারক আর্তি।

এই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা অনেকে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরেন। এ সংক্রান্ত ক্ষয়ক্ষতির ছবি ও ভিডিও ছাড়াও নানা অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন অনেকে। কেউ জানাচ্ছেন কীভাবে চোখের সামনে ভবন দুলতে দেখেছেন, আবার কেউ বর্ণনা করছেন সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় ঘটে যাওয়া বিপদের ঘটনা। কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী এই কম্পন মানুষের মনে গভীর দগদগে দাগ ফেলে গেছে। নগরবাসী এখনো শঙ্কায় আবার কি বড় কোনো ধাক্কা অপেক্ষা করছে? এই অনিশ্চয়তা ও আতঙ্কের মধ্যেই ধীরে ধীরে খুঁজছেন স্বাভাবিকতায় ফেরার পথ।

হাসপাতালের হুইলচেয়ারে বসা বাবার ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে সৈকত সাদিক নামের এক সাংবাদিক লেখেন, আব্বাকে ব্রেনের সিটি স্ক্যান করাতে নিয়ে আসছি কেরানীগঞ্জের একটি হাসপাতালে। ওয়ার্ডবয় যখন আব্বাকে হাসপাতালে প্রবেশ করাবে, হঠাৎ এমন সময় ভূমিকম্প। হাসপাতালে ছোটাছুটি। আব্বাকে হুইলচেয়ারে রেখেই ওয়ার্ডবয় জীবন বাঁচাতে দৌড়। আল্লাহ মেহেরবান। বড় বিপদ থেকে বাঁচা গেল।

একটি ভিডিও শেয়ার করে হাসান মাহমুদ নামের একজন লেখেন, যেহেতু ৬ তলায় থাকি, বিল্ডিং এমনভাবে কাঁপছিল যে দাঁড়ানো যাচ্ছিল না। কোনো রকমে ভাইদের ঘুম থেকে টেনে তুলে বাসা থেকে বের হওয়ার চিন্তা করছিলাম। ভাবছিলাম আর বাঁচার উপায় নেই। আল্লাহর কাছে মাফ চাচ্ছিলাম, আর চূড়ান্ত মুহূর্তের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। আমার ভাইরা (কাজিন) সব ঘুমাচ্ছিল। ঢাকায় যেহেতু সবাই একসঙ্গে থাকি এবং সবাই পরিবারের বড় অথবা একমাত্র সন্তান। খালি মনে হচ্ছিল ৭-৮টা ফ্যামিলির আশা-ভরসা সব শেষ, এখনি শেষ হয়ে যাবে।

সাব্বির রহমান নামের একজন লেখেন, ‘পায়ের নিচে মেইন রোডের পিচঢালা রাস্তা ‘এপাশ-ওপাশ’ টলতে থাকল! ভূমিকম্প এত শক্তিশালীভাবে এর আগে টের পাইনি কখনো।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুল আলম চৌধুরী লেখেন, ‘এমন কম্পন জীবদ্দশায় কখনো অনুভূত হয়নি।’

মেহেরুন নাহার মেঘলা নামের একজন লেখেন, ‘এইটা মোটেও ৫.৭ এর মতো না! আমার ইহজীবনে এমন প্রাকৃতিক দুলুনি অনুভব করিনি! পুরা পাক্কা ঘুমটা ভেঙে গেছে!’

ভবনের ফাটলের ছবি দিয়ে মিত্র নামের একজন লেখেন, পুরো বিল্ডিংটা দোলনার মতো দুলছিল-এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল সবকিছু থেমে যাবে।

সাবেক সংসদ-সদস্য গোলাম মাওলা রনি লেখেন, ভয়ংকর এক ভূমিকম্প হয়ে গেল কিছুক্ষণ আগে! আমি আমার জীবনে এমন ভূমিকম্পের কবলে পড়িনি কখনো। আল্লাহ রক্ষা করেছেন।

বিশিষ্ট ইসলামি আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ লেখেন, ‘এভাবেই এক মহাকম্পন মহাপ্রলয়ে রূপ নেবে একদিন। সেদিন সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো। নিশ্চয় কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ংকর ব্যাপার (সূরা হাজ্জ : ১)। ভূমিকম্পের মাত্রা আরেকটু বেশি হলেই হয়তো আমাদের অনেকের জীবনের শেষ দিন হতো আজ। আজকে ভূমিকম্প অনেক বড় সতর্কবার্তা রেখে গেল আমাদের জন্য।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার