লিওনেল মেসির ভারত সফর ঘিরে দক্ষিণ এশিয়ার আকাশে আবার আলোড়ন জাগছে। আন্তর্জাতিক ফুটবলের এই মহাতারকা ১৪ বছর পর আবার ওই দেশে পা রাখছেন। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ক্রীড়া অঙ্গন পর্যন্ত উত্তাপ বাড়ছে প্রতিদিন। তবু নানা গুঞ্জন আর আড়ালে থাকা রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেও আলোচনার কেন্দ্র বারবার মেসির সফরেই এসে থেমে যাচ্ছে।
বহুদিন পর ভারতের চারটি গুরুত্বপূর্ণ শহর নিয়ে এই সফর সাজানো হয়েছে। প্রথমে কলকাতা। এরপর হায়দরাবাদ। তারপর মুম্বাই। সর্বশেষ দিল্লি হয়ে ফেরার কথা আছে। ১৩ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সফরের দিনক্ষণ স্থির করা হয়েছে। এই তিন দিনে দেশটির ক্রীড়া খাত আবার আন্তর্জাতিক আলোচনায় ফিরে আসবে।
সফর ঘিরে কলকাতা এখন উৎসবের শহর। শহরের ফুটবল ক্লাবগুলো ব্যস্ত। বাজারে মেসির জার্সির ঢল নেমেছে। স্টেডিয়াম থেকে হোটেল পর্যন্ত নিরাপত্তা নিয়ে তৎপরতা চলছে। কলকাতায় আর্জেন্টিনার প্রতি আবেগ নতুন নয়। কিন্তু এই সফর সেই আবেগকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে। সেখানে গ্যালারি ভরে যাওয়া নিশ্চিত। টিকিটের দাম সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে হলেও আগ্রহ কমেনি। বরং মেসিকে একনজর দেখার আশা আরও বাড়ছে।
হায়দরাবাদে প্রস্তুতি আরও আলাদা। এখানকার আয়োজন বাণিজ্যিক সুরে বেশি। বড় বড় কোম্পানি অংশ নিচ্ছে। শহরের ক্রীড়া প্রশাসন বলছে আগত দর্শনার্থীর চাপ সামাল দিতে বিশেষ পরিকল্পনা করা হয়েছে। মুম্বাইতে ইতোমধ্যে ক্রীড়া সংস্থা ও বাণিজ্যিক গোষ্ঠীরা নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করেছে। বড় অঙ্কের বিনিয়োগ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। বলা হচ্ছে মেসির উপস্থিতি এই শহরে বড় ক্রীড়া বাজারের আলোচনা নতুন করে জাগাবে। রাজধানী দিল্লি শেষ গন্তব্য হিসেবে আবার কূটনৈতিক পরিমণ্ডলেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সেখানে আন্তর্জাতিক স্তরের আতিথেয়তা দেখানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সফরের প্রতিটি ধাপ দেশটির জন্য মর্যাদার প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।
তবে এ সফরের আরেকটি দিক দেশের ফুটবলের বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করে আলোচনার সৃষ্টি করছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে শক্তিশালী প্রতিযোগিতা গড়ে তুলতে ব্যর্থতা রয়েছে। স্থানীয় লিগ কাঠামো বারবার সমালোচনার মুখে পড়েছে। সেখানেই মেসির সফর আয়োজন অনেকের চোখে দুই বাস্তবতার বিভাজন তৈরি করছে। মাঠে সাফল্য কম হলেও বিশ্বমঞ্চে তারকাখ্যাতি দেখানোর প্রচেষ্টা বাড়ছে। সমর্থকেরা বলছেন মেসির সফর আনন্দের উৎস; কিন্তু একইসঙ্গে দেশের ফুটবল উন্নয়ন নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলছে। ক্রীড়া বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন টুর্নামেন্ট কাঠামো ও বুনিয়াদি উন্নয়ন ছাড়া এই ধরনের সফর সাময়িক উচ্ছ্বাস ছাড়া কিছু নয়। তবু প্রশাসন বলছে বিশ্বমঞ্চে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার জন্য তারকার উপস্থিতি বড় সুযোগ।
তবু সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে কলকাতার প্রস্তুতি। ফুটবলার থেকে সাধারণ মানুষ সবাই ভাবছেন মেসিকে ঘিরে আবার মিলনমেলা তৈরি হবে। শহরের রাস্তায় ব্যানার টাঙানো হয়েছে। ফুটবলপাড়ায় নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে। যারা সাতানব্বই সালের ম্যারাডোনার সফর দেখেছিলেন তারা বলছেন এবার দৃশ্য আরও বড় হতে পারে। যেহেতু মেসি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবল নাম। এ অঞ্চলে আর্জেন্টিনার জনপ্রিয়তা আরও গভীর। মেসি সেই আবেগের কেন্দ্রস্থল।
তিন দিনের সফরের মাধ্যমে দেশটি আবার আন্তর্জাতিক ক্রীড়া মানচিত্রে নিজেকে তুলে ধরতে চাইছে। ভিড় উৎসব নিরাপত্তা প্রস্তুতি- সবকিছু মিলিয়ে আগামী কয়েক দিন নজর থাকবে ওই দেশের চারটি শহরে। আর সব আলোচনার কেন্দ্রে থাকবেন মেসি।