Logo
Logo
×

খেলাধুলা

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে হামজাকে নিয়েই যত আলোচনা

Icon

ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২৬ পিএম

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে হামজাকে নিয়েই যত আলোচনা
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ যখন মাঠে নামবেন তখন এক জায়গায় মিলে যাবেন হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা ও হামজা দেওয়ান চৌধুরী। দুইজনেরই এটি হবে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ। গত ২৫ মার্চ শিলংয়ে ম্যাচটি ড্র হয়েছিল। এ ম্যাচ জিতলে দুইজনই জিতবেন, হারলে দু’জনই একসাথে হারবেন।

ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় নেই ২২ বছর ধরে। ২০০৩ সালে এই ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে জয়ের পর ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ ১০ ম্যাচ খেলে মাত্র চারটি ড্র করতে পেরেছে। বাংলাদেশের সমর্থকরা এখন ভারতের বিপক্ষে একটি জয় পেতে মুখিয়ে আছে।

সমর্থকদের এই যে চাওয়া তা পূরণ হতে পারে বাংলাদেশ দলটা যদি নামের ভারের সাথে তাল মিলিয়ে খেলতে পারে। আর যার কারণে ভারটা বেড়েছে দলের সেই হামজা দেওয়ান চৌধুরীর কাছে প্রত্যাশাটাও বাড়ছে দিন দিন। এটা বলতেই হবে- এই যে সমর্থকদের প্রত্যাশার পারদ ওপরে উঠেছে তা হামজাই উঠিয়েছেন। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হয়ে যখন ৬ ম্যাচে ৪ গোল করেছেন হামজা তখন জয়ের জন্যও তার দিকে তাকিয়ে থাকবেন সমর্থকরা।

মার্চের ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু করে নেপাল ম্যাচ পর্যন্ত বাংলাদেশের খেলা হয়েছে ৭টি। হামজা খেলেছেন ৬টি। বাংলাদেশ গোল করেছে ৬টি। এর মধ্যে হামজারই চারটি- একটি হেডে, একটি ফ্রিকিক থেকে, একটি বাইসাইকেল কিকে ও একটি পেনাল্টি থেকে। গোল নিয়ে হামজার এই পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছেন মাঠে কোথায় থাকেন না তিন। এই তো নেপালের বিপক্ষে ম্যাচের পর গ্যালারি ত্যাগের সময় এক দর্শক বলছিলেন, ‘বাংলাদেশের জার্সিতে হামজার হয়তো শুধু গোলপোস্টের নিচে খেলাই বাকি আছে।’

নেপালের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশকে হামজা চৌধুরী ফিরিয়ে এনেছিলেন চোখ ধাঁধানো এক গোল করে। তার বাইসাইকেল কিক যেভাবে নেপালের জালে আছড়ে পড়েছিল তা অনেকদিন আঠার মতো লেগে থাকবে দর্শকদের চোখে। ১৩ নভেম্বর পর ওই গোলটিই আলোচনায় সবার মুখেমুখে।

সোমবার ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনেও উঠলো। হামজার চার গোলের দুটিই আবার এসেছে জামাল ভূঁইয়ার অ্যাসিস্ট থেকে। আর হামজার গোলগুলোর মধ্যে বাইসাইকেল কিকে করাটিকে আলাদাভাবে স্বীকৃতি দিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘হামজার ওই বাইসাইকেল গোলটি আমার দেখা বাংলাদেশের অন্যতম সেরা।’

সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে হামজা দেওয়ান চৌধুরী স্বশরীরে উপস্থিত না থাকলেও ছিলেন আলোচনায় এবং সব আলোচনার চেয়ে বেশিবার কথা বলতে হয়েছে তাকে নিয়েই। সেটা বাংলাদেশ পর্বে হোক বা ভারতের পর্বে। ভারতের কোচ খালিদ জামিল সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন গোলরক্ষক শাহিল পুনাইকে নিয়ে। তবে এ বছর দায়িত্ব নেওয়া কোচ খালিদকে বেশি প্রশ্ন ছিল বাংলাদেশের গণমাধ্যমের। আর এই প্রশ্নগুলোর বেশিই ছিল হামজার বিষয়ে। ভারতীয় কোচ প্রতি প্রশ্নের উত্তরই দিয়েছেন শটকাট করে। আর প্রতিবারই বলেছেন, ‘কেবল হামজাই নয়, বাংলাদেশের সব খেলোয়াড়ই ভালো।’

হামজার মতো খেলোয়াড়ের উপস্থিতি বাড়তি চাপ কিনা তা জানতে চাইলে ভারতের কোচ আবারো বলেছেন, ‘বাংলাদেশের এক-দুইজন নয়, পুরো দলই ভালো। তাদের সবাই ভালো খেলোয়াড়। তাই আমরা ম্যাচটিকে হালকাভাবে নেব না। ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে, ভালো ফল আনতে হবে।’

রোববার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ দল যখন শেষ অনুশীলনে নেমেছিল ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে তখন গেটের সামনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা তার একদল ভক্ত তুমুল করতালি দিচ্ছিলেন। ‘হামজা’ ‘হামজা’... স্লোগানে প্রকম্পিত করেছিলেন এলাকা। মনে হয়েছিল হামজা যেন প্রথমবার মাঠে ঢুকছে বাংলাদেশ দলে অনুশীলন করতে। এ দৃশ্যগুলো বলে দিচ্ছে মার্চে প্রথম বাংলাদেশে আসার ৮ মাস পরও তাকে নিয়ে একটু ভালোবাসা কমেনি। বরং বেড়েছে। এই বাড়াটা অবশ্যই নেপালের বিপক্ষে ওই দুর্দান্ত বাইসাইকেল গোলের পর।

নেপালের বিপক্ষে ওই গোলের পর দেশের অনেক সাবেক ফুটবলারই অতীতের কারো গোলের সাথে মিল খুঁজে পায়নি। সবাই অন্যতম সেরা গোল হিসেবেই হামজাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। হামজার ক্লাব লেস্টার সিটি নেপালের ম্যাচের পর তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রশংসা করেছেন। অভিনন্দন জানিয়েছেন। এমন কি বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা ফিফাও তাদের ফেসবুক পেজে হামজার গোল করার ছবি পোস্ট করে বাহবা জানিয়েছে।

মঙ্গলবার ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের পর হামজাকে আর কবে কাছ থেকে দেখবেন তার বাংলাদেশের ভক্তরা তা ঠিক নেই। আগামী মার্চে বাংলাদেশ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের শেষ ম্যাচ খেলবে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে। প্রতিপক্ষের মাঠের ওই ম্যাচের কয়দিন আগে হামজাকে অনুশীলনে পাওয়া যাবে তার ওপর নির্ভর করছেন দর্শকদের ফের হামজা-দর্শন। তবে তার আগ পর্যন্ত এই হামজাই আলোচনায় থাকবেন। বাংলাদেশ-ভারত মর্যাদার ম্যাচের আর কোনো খেলোয়াড় নিয়ে আলোচনাই নেই-যত কথা হামজাকে নিয়েই।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার