রেললাইনের পাশ থেকে বিশ্বকাপের মাঠ কাঁপানো মারুফার গল্প

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৪৩ পিএম

যে মেয়েকে ক্রিকেট খেলতে বারণ করতেন বাবা, দিতেন বকাঝকা, আজ সেই মেয়ে দেশের হয়ে সুনাম কুড়াচ্ছে। ২০ বছর বয়সী এ পেসারের হাত ধরেই ২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে শুরুটা দারুণ করেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১১৩ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ।
বলছিলাম মারুফা আক্তারের কথা। উত্তরাঞ্চলের নীলফামারীর প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উঠে আসা মারুফা এখন বিশ্বব্যাপী পরিচিত। মসৃণ রানআপ, দুর্দান্ত ইনসুইং এবং উইকেট থেকে মুভমেন্ট আদায় করে নেওয়ার অনন্য দক্ষতা মারুফাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে তুলেছে। কলম্বোতে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ-সেরা হয়েছেন মারুফা আক্তার। ৭ ওভারে ৩১ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। ২টি উইকেটই নিয়েছেন ইনিংসের প্রথম ওভারে।
মারুফার প্রতিবেশী নাজমুল ইসলাম বলেন, মারুফা ছোট থেকেই ক্রিকেট নিয়ে পড়ে থাকতো। ছেলেদের মতো পোশাক পরতো। এজন্য গ্রামের মানুষের কত কটূকথা শুনতে হয়েছে তার বাবা-মাকে। আজ সেই মেয়েটির কারণে পুরো গ্রামের মানুষ গর্ববোধ করছে। তার বাবা-মাকে সম্মান দিচ্ছে।
মারুফার জন্ম নীলফামারী সদর উপজেলার সংগলশী ইউনিয়নের ঢেলাপীর এলাকায়। বাবা আইমুল্লাহ হক বর্গাচাষি, আর মা মর্জিনা বেগম গৃহিণী। মা-বাবা ও চার ভাই-বোনের পরিবার। বড় ভাই আল-আমিন অনার্স পড়ছেন নীলফামারী সরকারি কলেজে। মেজো ভাই আহসান হাবিব দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন কাদিখোল কম্পিউটার কলেজে। তার বড় বোন মাহফুজা আক্তারের বিয়ে হয়েছে। গৃহিণী এই বোনের স্বামী কৃষিকাজ করেন। ভিটেমাটি ছাড়া আর কোনো জায়গা-জমি নেই মারুফাদের। ঘরের ভিটেটুকুও মারুফার নানার দেওয়া।
মারুফা ছোটবেলা থেকেই সাহসী ও কর্মঠ ছিলেন। খুব সকালে বাবা আইমুল্লাহর সঙ্গে গিয়ে কৃষিকাজে সহযোগিতা করতেন। বাড়ি ফিরে গোসল ও নাস্তা শেষ করে দৌড় দিতে হতো বিদ্যালয়ে। আবার বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে দুপুরে খাওয়া শেষ করেই দুই ভাই ও এলাকার ছেলেদের সঙ্গে রেললাইনের ধারে খেলতেন ক্রিকেট। এ অনুশীলন চলতো সন্ধ্যা পর্যন্ত। ক্রিকেট খেলার প্রতি তার আগ্রহ ছিল বেশি। দুই ভাইয়ের থেকেও মারুফা ভালো ক্রিকেট খেলতেন। তাই ছোট বোনের আবদার সাধ্যমতো পূরণ করতেন বড় ভাই আল-আমিন। প্রাইভেট পড়িয়ে সেই বেতনের টাকা দিয়ে বোনের জন্য ব্যাট, বল ও খেলার বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনে নিয়ে আসতেন। ২০১৮ সালে প্রতিভা অন্বেষণ ক্যাম্পের মধ্য দিয়ে বিকেএসপির নজরে আসেন। তারপর ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক নৈপুণ্য দেখিয়ে ১৮ বছর বয়সেই ডাক পেয়ে যান জাতীয় দলে।
মারুফার বাবা আইমুল্লাহ হক বলেন, গ্রামের মানুষ আর তাকে আইমুল্লাহ বলে ডাকে না। সবাই তাকে মারুফার বাবা বলেই ডাকে। সেইসঙ্গে তাকে সবাই এখন অন্যরকম শ্রদ্ধা-সম্মান করে। এ কারণে তাকে অনেক সময় বিব্রতও হতে হয়। কারণ অনেক সম্মানী লোকও তাকে দাঁড়িয়ে সালাম দেন, বসতে বলেন। এমনকি বাড়ির পাশে ঢেলাপীড় হাটের অনেক দোকানদার পান ও চায়ের টাকা তার কাছে নিতে চান না। অথচ একসময় মেয়েকে ক্রিকেট খেলতে বারণ করতেন, দিতেন বকাঝকা। তিনি মেয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেছেন।
মারুফার মা মর্জিনা বেগম বলেন, মেয়েটা ছোট থেকে বড় কষ্টে মানুষ হয়েছে। তার খেলার প্রতি অনেক ঝোঁক ছিল। এ কারণে বকাঝকা করতাম। তবুও মারুফা পড়ে থাকত ক্রিকেট নিয়ে। আমি যাতে রাগ না করি, এজন্য ঘর ঝাড়ু, বাসন মাজা, কাপড় ধোয়া থেকে শুরু করে সব কাজ করে দিত। একদিন ক্রিকেট খেলার কারণে আমার কাছে বেদম মারও খেয়েছে। আজ তার সাফল্যে গ্রামের মানুষসহ সারাদেশ গর্ব করছে। মা হিসেবে আর কিছুই চাই না।
নীলফামারী জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতির দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘মারুফা খুব ভালো একজন ক্রিকেটার। নারী ক্রিকেটে তিনি ভালো অবদান রাখছেন। তার জন্য এ জেলার মানুষ গর্ববোধ করেন। এভাবে খেললে তার হাত ধরেই ২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ জয় পাবে।’
বলছিলাম মারুফা আক্তারের কথা। উত্তরাঞ্চলের নীলফামারীর প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উঠে আসা মারুফা এখন বিশ্বব্যাপী পরিচিত। মসৃণ রানআপ, দুর্দান্ত ইনসুইং এবং উইকেট থেকে মুভমেন্ট আদায় করে নেওয়ার অনন্য দক্ষতা মারুফাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে তুলেছে। কলম্বোতে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ-সেরা হয়েছেন মারুফা আক্তার। ৭ ওভারে ৩১ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। ২টি উইকেটই নিয়েছেন ইনিংসের প্রথম ওভারে।
মারুফার প্রতিবেশী নাজমুল ইসলাম বলেন, মারুফা ছোট থেকেই ক্রিকেট নিয়ে পড়ে থাকতো। ছেলেদের মতো পোশাক পরতো। এজন্য গ্রামের মানুষের কত কটূকথা শুনতে হয়েছে তার বাবা-মাকে। আজ সেই মেয়েটির কারণে পুরো গ্রামের মানুষ গর্ববোধ করছে। তার বাবা-মাকে সম্মান দিচ্ছে।
মারুফার জন্ম নীলফামারী সদর উপজেলার সংগলশী ইউনিয়নের ঢেলাপীর এলাকায়। বাবা আইমুল্লাহ হক বর্গাচাষি, আর মা মর্জিনা বেগম গৃহিণী। মা-বাবা ও চার ভাই-বোনের পরিবার। বড় ভাই আল-আমিন অনার্স পড়ছেন নীলফামারী সরকারি কলেজে। মেজো ভাই আহসান হাবিব দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন কাদিখোল কম্পিউটার কলেজে। তার বড় বোন মাহফুজা আক্তারের বিয়ে হয়েছে। গৃহিণী এই বোনের স্বামী কৃষিকাজ করেন। ভিটেমাটি ছাড়া আর কোনো জায়গা-জমি নেই মারুফাদের। ঘরের ভিটেটুকুও মারুফার নানার দেওয়া।
মারুফা ছোটবেলা থেকেই সাহসী ও কর্মঠ ছিলেন। খুব সকালে বাবা আইমুল্লাহর সঙ্গে গিয়ে কৃষিকাজে সহযোগিতা করতেন। বাড়ি ফিরে গোসল ও নাস্তা শেষ করে দৌড় দিতে হতো বিদ্যালয়ে। আবার বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে দুপুরে খাওয়া শেষ করেই দুই ভাই ও এলাকার ছেলেদের সঙ্গে রেললাইনের ধারে খেলতেন ক্রিকেট। এ অনুশীলন চলতো সন্ধ্যা পর্যন্ত। ক্রিকেট খেলার প্রতি তার আগ্রহ ছিল বেশি। দুই ভাইয়ের থেকেও মারুফা ভালো ক্রিকেট খেলতেন। তাই ছোট বোনের আবদার সাধ্যমতো পূরণ করতেন বড় ভাই আল-আমিন। প্রাইভেট পড়িয়ে সেই বেতনের টাকা দিয়ে বোনের জন্য ব্যাট, বল ও খেলার বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনে নিয়ে আসতেন। ২০১৮ সালে প্রতিভা অন্বেষণ ক্যাম্পের মধ্য দিয়ে বিকেএসপির নজরে আসেন। তারপর ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক নৈপুণ্য দেখিয়ে ১৮ বছর বয়সেই ডাক পেয়ে যান জাতীয় দলে।
মারুফার বাবা আইমুল্লাহ হক বলেন, গ্রামের মানুষ আর তাকে আইমুল্লাহ বলে ডাকে না। সবাই তাকে মারুফার বাবা বলেই ডাকে। সেইসঙ্গে তাকে সবাই এখন অন্যরকম শ্রদ্ধা-সম্মান করে। এ কারণে তাকে অনেক সময় বিব্রতও হতে হয়। কারণ অনেক সম্মানী লোকও তাকে দাঁড়িয়ে সালাম দেন, বসতে বলেন। এমনকি বাড়ির পাশে ঢেলাপীড় হাটের অনেক দোকানদার পান ও চায়ের টাকা তার কাছে নিতে চান না। অথচ একসময় মেয়েকে ক্রিকেট খেলতে বারণ করতেন, দিতেন বকাঝকা। তিনি মেয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেছেন।
মারুফার মা মর্জিনা বেগম বলেন, মেয়েটা ছোট থেকে বড় কষ্টে মানুষ হয়েছে। তার খেলার প্রতি অনেক ঝোঁক ছিল। এ কারণে বকাঝকা করতাম। তবুও মারুফা পড়ে থাকত ক্রিকেট নিয়ে। আমি যাতে রাগ না করি, এজন্য ঘর ঝাড়ু, বাসন মাজা, কাপড় ধোয়া থেকে শুরু করে সব কাজ করে দিত। একদিন ক্রিকেট খেলার কারণে আমার কাছে বেদম মারও খেয়েছে। আজ তার সাফল্যে গ্রামের মানুষসহ সারাদেশ গর্ব করছে। মা হিসেবে আর কিছুই চাই না।
নীলফামারী জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতির দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘মারুফা খুব ভালো একজন ক্রিকেটার। নারী ক্রিকেটে তিনি ভালো অবদান রাখছেন। তার জন্য এ জেলার মানুষ গর্ববোধ করেন। এভাবে খেললে তার হাত ধরেই ২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ জয় পাবে।’