৫৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনে আবেদনের স্তূপ
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৪৯ এএম
সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র ঘোষিত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা পড়েছে আবেদনের স্তূপ। প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে সারা দেশে বিভিন্ন আসনে মনোনয়নবঞ্চিতদের কর্মী ও সমর্থকরা বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি করছে। প্রায় অর্ধশতাধিক আসনে প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবিতে এসব কর্মসূচি হচ্ছে। কর্মসূচির সঙ্গে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে দলের হাইকমান্ড এবং কেন্দ্রে লিখিত আবেদন করছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৫৩টি আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের আবেদন জমা পড়েছে বলে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপি’র সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মনোনয়ন নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেসব আসনে কোন্দল রয়েছে, সেসব আসনে কমিটির সদস্যরা দলীয় প্রার্থী ও মনোনয়নবঞ্চিতদের সঙ্গে কথা বলে কোন্দল নিরসনের চেষ্টা করছেন। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো আসনেই মনোনয়নকেন্দ্রিক গ্রুপিং ও কোন্দল নিরসন হয়নি।
লিখিত আবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আবেদনে আন্দোলন ও সংগ্রামে নিষ্ক্রিয়, নৈতিক স্খলন, বয়োবৃদ্ধ এবং বিতর্কিতদের নেতাদের মনোনয়ন দেয়ার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের চাঁদাবাজি, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন এবং বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকাণ্ডের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। ওদিকে আবেদনে দলের ত্যাগী, যোগ্য, তরুণ এবং ক্লিন ইমেজের নেতাদের মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। সেখানে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের দলের জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষা, আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণ এবং বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক ও উন্নয়নধর্মী কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ৩রা নভেম্বর বিএনপি প্রথম পর্যায়ে ২৩৭ আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছিল। একদিন পরই মাদারীপুর-১ আসনের ঘোষিত প্রার্থী কামাল জামাল মোল্লার নাম স্থগিত করা হয়। পরে গত ৪ঠা ডিসেম্বর আরও ৩৬টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। সবমিলিয়ে ২৭২টি আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে দলটি। প্রথম দফায় প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে সারা দেশে বিভিন্ন আসনে বিক্ষোভ, মশাল মিছিল, জনসভা এবং সংবাদ সম্মেলন করছেন মনোনয়নবঞ্চিতদের কর্মী ও সমর্থকরা। তবে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়ার পর অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর থাকবে না বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, স্থায়ী কমিটিতে বিষয়টি এখনো ওঠেনি। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আবেদনের বিষয়টি ওঠার পর আলোচনা করে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।
তারা জানিয়েছেন, মনোনয়ন পাননি এমন কর্মী ও সমর্থকদের তৎপরতায় বিএনপির দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। এলাকায় দ্বিধা ও বিভক্ত চরমে। বিএনপি’র হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে প্রার্থীর ধানের শীষের পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হলেও তৃণমূলে তার প্রভাব পড়ছে না। এক্ষেত্রে বিতর্কিত প্রার্থীদের বাদ দিয়ে দলের যোগ্য ও ত্যাগীদের মনোনয়ন দেয়া না হলে নির্বাচনের ফলে এর প্রভাব পড়বে বলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করছেন। প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যেসব আবেদন পড়েছে, এর মধ্যে চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর-দক্ষিণ) আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন মো. জালাল উদ্দিন। এই আসনে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছেন নেতাকর্মীরা। গত ৩রা ডিসেম্বর চট্টগ্রাম-১২ আসনের ৬৮০ জন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে লিখিত আবেদন জমা দেন। এই আসনে বিএনপি’র প্রার্থী এনামুল হক এনামকে পরিবর্তন করে ধানের শীষের প্রার্থী চূড়ান্ত করার আবেদন জানিয়েছেন তারা।
গত ২৯ শে নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনের দুই উপজেলায় বিএনপি’র দায়িত্বশীল নেতারা লিখিত আবেদন করেন।
গত ২৩শে নভেম্বর দলীয় কার্যালয়ে দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ) আসনে বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থী সাদিক রিয়াজ পিনাক চৌধুরীর বিরুদ্ধে একই আসনের তিন মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি মোজাহারুল ইসলাম, জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ কালু এবং জেলা বিএনপি’র প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক কেন্দ্রীয় শিক্ষক নেতা অধ্যাপক মঞ্জুরুল ইসলাম আবেদন করেছেন। জামালপুর-২ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে সুলতান মাহমুদ বাবুকে। তার মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে আবেদন জমা পড়েছে। চট্টগ্রাম-১৩ আসনে বয়োবৃদ্ধের অভিযোগে সরওয়ার জামাল নিজাম মনোনয়ন পরিবর্তনের আবেদন করেন বঞ্চিত প্রার্থীরা। এ ছাড়া, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে আইনুল হকের মনোনয়ন বাতিল চেয়ে তারেক রহমানের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। ওদিকে, কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী মেহেদী হাসান রুমীকে পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে দুই উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি’র নেতারা লিখিত আবেদন করেছেন।
আবেদনের বিষয়ে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা এখন এগুলো নিয়ে ভাবছি না। ভয়ঙ্কর অবস্থা বিরাজ করছে। ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকারী দুষ্কৃতকারীদের তদন্তের মাধ্যমে আমরা বিক্ষোভ মিছিল ঘোষণা করেছি। এ বিষয় নিয়ে এখন আমরা সারা দেশে কথা বলছি।