Logo
Logo
×

রাজনীতি

বিএনপি বনাম জামায়াত: ৮০ আসনে তুমুল লড়াই?

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৫৭ এএম

বিএনপি বনাম জামায়াত: ৮০ আসনে তুমুল লড়াই?

আসন্ন ত্রয়োদশ নির্বাচনে তারা একে অপরের মুখোমুখি। অন্তত ৮০টি আসনে বিএনপির সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ের আশা করছে জামায়াত।

১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে ২২২টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ১৮টি আসনে জয়ী হয়েছিল জামায়াত। বলা হয় বেশ কয়েকটি আসনে বিএনপি-জামায়াতের অলিখিত ও অনুচ্চারিত সমঝোতা ছিল। সেবার জামায়াতের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে সেই মিত্রতা ভেঙে যায়। এই একবার বিএনপি ও জামায়াত পুরোপুরি এককভাবে নির্বাচন করে, যাতে তিনশ’ আসনে প্রার্থী দিয়ে মাত্র তিনটিতে জয় পায় জামায়াতে ইসলামী। এরপর ২০০১ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত জোটবদ্ধ নির্বাচন করেছে বিএনপি-জামায়াত।

আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আবারও আলাদা নির্বাচন করছে এই দুই দল। আওয়ামী লীগবিহীন সেই নির্বাচনে বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতে ইসলামী। শুধু প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীই নয়-স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মত প্রকাশ্যে ক্ষমতায় যাওয়ার কথাও বলছে তারা।

কিন্তু ভোটের মাঠে পরিস্থিতি কেমন? অতীতের নির্বাচন আর অতিসম্প্রতি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জরিপ বলছে, ভোটের লড়াইয়ে এখনো অনেকটাই এগিয়ে বিএনপি। আর জামায়াতের অন্দরমহলের খবর, এবার তারা অন্তত ৮০টি আসনে বিএনপির সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই আশা করছে। বিশেষ করে রংপুর বিভাগে তারা এবার বিএনপির চাইতে বেশি আসন আশা করছে। এছাড়াও তাদের আসন বাড়বে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে। আর সার্বিকভাবে সারা দেশেই তাদের ভোট বাড়বে।

জামায়াত যেসব আসনে এবার তুমুল লড়াইয়ের সুযোগ দেখছে সেগুলো হচ্ছে: পঞ্চগড়-২, ঠাকারগাঁও-২, ঠাকুরগাঁও-৩, দিনাজপুর-১, দিনাজপুর-২, দিনাজপুর-৩, দিনাজপুর-৪, দিনাজপুর-৫, দিনাজপুর-৬, নীলফামারী-১, নীলফামারী-২, নীলফামারী-৩, রংপুর-১, রংপুর-৪, রংপুর-৫, কুড়িগ্রাম-১, কুড়িগ্রাম-৪, গাইবান্ধা-১, গাইবান্ধা-২, গাইবান্ধা-৩, গাইবান্ধা-৪, জয়পুরহাট-১, বগুড়া-২, বগুড়া-৩, বগুড়া-৪, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩, নওগাঁ-১, নওগাঁ-২, নওগাঁ-৪, রাজশাহী-১, রাজশাহী-২, রাজশাহী-৩, নাটোর-২, নাটোর-৩, সিরাজগঞ্জ-৪, সিরাজগঞ্জ-৫, পাবনা-১, পাবনা-৪, পাবনা-৫, মেহেরপুর-১, মেহেরপুর-২, কুষ্টিয়া-২, কুষ্টিয়া-৩, কুষ্টিয়া-৪, চুয়াডাঙ্গা-২, ঝিনাইদহ-৩, যশোর-১, যশোর-২, যশোর-৫, যশোর-৬, নড়াইল-২, বাগেরহাট-৩, বাগেরহাট-৪, সাতক্ষীরা-১, সাতক্ষীরা-২, সাতক্ষীরা-৩, সাতক্ষীরা-৪, পিরোজপুর-১, জামালপুর-১, ময়মনসিংহ-৭, গাজীপুর-১, ঢাকা-১৫, সিলেট-৫, সিলেট-৬, কুমিল্লা-১২, ফেনী-২, লক্ষ্মীপুর-১, লক্ষ্মীপুর-২, লক্ষ্মীপুর-৩, চট্টগ্রাম-১৪, চট্টগ্রাম-১৫, কক্সবাজার-১, কক্সবাজার-২ এবং কক্সবাজার-৩।

এই আসনগুলোর মধ্যে আছে দিনাজপুর-৩, যেখানে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এটি খালেদা জিয়ার জন্মস্থান। এই আসনে অতীতে খালেদা জিয়ার বড় বোন খুরশিদ জাহান হক সংসদ সদস্য হয়েছেন। তার মৃত্যুর পর এখানে  বিএনপির কোনো শক্তিশালী নেতা গড়ে ওঠেননি। তাই এই আসনটি নিজেদের জন্য সম্ভাবনাময় মনে করছিল জামায়াতে ইসলামী। বিএনপি শেষ পর্যন্ত এখানে খালেদা জিয়াকে প্রার্থী করবে-এমনটি ধারণাও করেনি তারা।

অতীতে জামায়াতে ইসলামী কখনো বৃহত্তর ঢাকায় উল্লেখ করার মত ভোট না পেলেও প্রথমবারের মত তারা আসন্ন নির্বাচনে গাজীপুর-১ আসনের প্রার্থী সাবেক সচিব শাহ আলম বকশীকে নিয়ে বেশ আশাবাদী হয়ে ওঠেছে। কালিয়াকৈর ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের একাংশ নিয়ে গঠিত এই আসনটি অতীতে বরারবই আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। তবে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল বিএনপি। এবার বিএনপির প্রথম দফা মনোনয়ন ঘোষণার সময় এই আসনটি ফাঁকা রাখা হয়। দ্বিতীয় দফার ঘোষণায় এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মজিবুর রহমান।

জামায়াত এবার যেসব আসনে তুমুল লড়াইয়ের আশা করছে, তার মধ্যে আছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের আসন কক্সবাজার-১। এখানে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী আবদুল্লাহ আল ফারুক।

রাজধানী ঢাকার আসনগুলোতে জামায়াতে ইসলামী অতীতে কখনো উল্লেখ করার মত ভোট পায়নি। তবে এবার ঢাকা-১৫ আসনে দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান প্রার্থী হওয়ায় আসনটি পেতে মরিয়া লড়াই করতে চায় জামায়াত। ডা. শফিক ২০১৮ সালের নির্বাচনেও বিএনপি-জামায়াত জোট থেকে এই আসনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন।

মিত্র থেকে শত্রু

মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীনতাবিরোধী হিসাবে জামায়াতে ইসলামী ছিল নিষিদ্ধ। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে তাদের রাজনীতি করার অধিকার ফিরিয়ে দেন। তখন থেকেই দুই দলের অলিখিত মিত্রতা শুরু। তবে এর ছেদ পড়ে ১৯৮৬ সালে, সেবার স্বৈরশাসক এরশাদের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও জামায়াত অংশ নেয়। পরে অবশ্য এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আবারও দুই দলের সখ্যতা গড়ে ওঠে। সেই সখ্যতায় আবারও ছেদ পড়ে ১৯৯৫ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে। বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎভাবে সেই আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত। এরই জেরে ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে দুই মেরুতে ছিল বিএনপি ও জামায়াত। তবে ফল বিপর্যয়ের পর আবারও ২০০১ সালের নির্বাচন থেকে গাঁটছড়া বাঁধে এই দুই দল। আওয়ামী লীগ পতনের পর আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ছিন্ন হয়েছে সেই গাঁটছড়া।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার