তারেকের দেশপ্রেম, মাতৃভক্তি ও বিদেশি নাগরিকত্ব!
আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৯ এএম
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ার-পারসন তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছিলেন বলে জানা গেলেও বর্তমানে তিনি কোন স্ট্যাটাসে সেখানে আছেন, তা তার পরিবারের বাইরে তেমন কেউ জানেন বলে মনে হয় ন। তিনি যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে ওই দেশের পাসপোর্ট গ্রহণ করেছেন কিনা, সে সম্পর্কেও বিএনপি অথবা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তারেক রহমানের মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সংকটজনক। তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছে, এমনও বলা হচ্ছে। এ অবস্থায় তাঁর একমাত্র জীবিত সন্তান তাঁর শয্যাপাশে থাকবেন এটাই বাঞ্ছনীয় এবং সন্তানেরও তা কাম্য হওয়া উচিত। তিনি দেশে আসছেন কিনা জানতে চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেছেন, ‘ তিনি যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় বা যে স্ট্যাটাসে রয়েছেন, ওই দেশের আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দেশে ফিরতে চান।’
বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা তারেক রহমানকে বাংলাদেশের ‘ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী’র তকমা দিয়ে আসছেন বহুবছর ধরে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য তাকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জাতীয় সংসদের সদস্যপদে বিজয়ী হতে হবে এবং তার দলকে সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেতে হবে। বিএনপির প্রধান নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতে ইসলামী বিজয়ী হয়ে তো আর তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন করবে না! কোনো দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতার জীবনে দেশপ্রেম এবং মাতৃভক্তির চেয়ে যদি যুক্তরাজ্যের অভিবাসন আইনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা বড় হয়ে উঠে, তাহলে যে দেশের জন্য তিনি রাজনীতি করেন, যে দেশের তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে চান, সেই জন্মভূমির প্রতি তার কমিটমেন্ট প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সামনের নির্বাচনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। দুরাশায় পরিণত হতে পারে বিএনপির সরকার গঠনের আশা।
তারেক রহমান যদি সত্যিই যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হলে তাকে বিদেশি নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে হবে। এ সম্পর্কে বাংলাদের সংবিধান কী বলে?
সংবিধানের পঞ্চম ভাগের ‘আইনসভা’ শিরোনামের প্রথম পরিচ্ছদের ‘সংসদ’ উপ-শিরোনামে ৬৬ অনুচ্ছেদের দফা (২) এর (গ) উপ-দফায় ‘সংসদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা’ সম্পর্কে বলা হয়েছে:
(গ) তিনি কোন বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোন বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন;
একই অনুচ্ছেদের দফা (৩ ক) এ বলা হয়েছে:
“এই অনুচ্ছেদের (২) দফার (গ) উপ-দফা তে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন ব্যক্তি জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হইয়া কোন বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করিলে এবং পরবর্তীতে উক্ত ব্যক্তি-
(ক) দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে, বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ত্যাগ করিলে; কিংবা
(খ) অন্য ক্ষেত্রে, পুনরায় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করিলে-
এই অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য সাধনকল্পে তিনি বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন না।”
আমার যৎকিঞ্চিত বুদ্ধি-বিবেচনায় যা ছিল তা উপস্থাপন করার চেষ্টা করলাম। রাজনৈতিক পণ্ডিতরা যা বোঝার বুঝে নিতে পারেন।