Logo
Logo
×

রাজনীতি

সিলেট বিভাগে বিএনপির প্রথম বিদ্রোহী ‘ভোটের রাজা’ জাকেরীন

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:২৫ এএম

সিলেট বিভাগে বিএনপির প্রথম বিদ্রোহী ‘ভোটের রাজা’ জাকেরীন

সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় ‘ভোটের রাজা’ খ্যাত রাজনীতিবিদ দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন। গত ৪ ডিসেম্বর এ আসনটিতে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলামকে। ওই দিন রাতে জাকেরীন তার ফেসবুকে তার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থিতার ইঙ্গিত দেন।

রবিবার (৭ ডিসেম্বর) তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন।

যোগাযোগ করলে দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন তার প্রার্থিতার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপির প্রতিষ্ঠার পর প্রথম নির্বাচন ১৯৭৯ সালে প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এরপর থেকে বিএনপিতে সক্রিয়। জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থিতায় ২০১৮ সালে আমি দল মনোনীত প্রার্থী ছিলাম। তখন অপেক্ষাকৃত সিনিয়র নেতা ও সাবেক হুইপ ফজলুল হক আসপিয়াকে সম্মান দেখিয়ে প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত থাকি। তার মৃত্যুর পর এ আসনটিতে আমাকে মনোনীত করার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্যে অস্বাভাবিক ঘটনা হচ্ছে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র একজনকে মনোনীত করা। এ বিষয়টি দলের অধিকাংশরা মেনে নেয়নি। দল ও ভোটারের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

সিলেট বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সূত্রে জানা গেছে, জয়নুল জাকেরীন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে তিনিই হবেন প্রথম বিদ্রোহী। এ বিষয়ে সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকীর কাছে জানতে চাইলে এ মুহূর্তে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বিএনপির সাংগঠনিক একটি সূত্র জানায়, বড় দল হিসেবে মনোনয়নবঞ্চনার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বেশি হবেই। নির্বাচনকালীন সাংগঠনিক দায়িত্ব বণ্টন হলে এসব বিষয় দেখা হবে। তবে জয়নুল জাকেরীন স্বতন্ত্র প্রার্থিতায় সিলেট বিভাগে প্রথম বিদ্রোহী হিসেবে বিবেচিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সূত্রটি।

জানা গেছে, জয়নুল জাকেরীন মরমী কবি হাসন রাজার প্রপৌত্র। পারিবারিক খ্যাতিতে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ভোটের রাজনীতিতে তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী। পৌরসভা থেকে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে একবারও হারেননি। এ জন্য তাকে ‘ভোটের রাজা’ বলা হয়। ব্যাংকের কর্মকর্তার পদ ছেড়ে ১৯৮৪ সালে ভোটের রাজনীতিতে অভিষেক ঘটে জাকেরীনের। সেই থেকে তার জয়রথ শুরু। সুনামগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে তৎকালীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আলফাত উদ্দিন আহমদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছিলেন। এক বছর পর পৌর চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দেশে প্রথম অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন। ১৯৮৫ সালের সেই ভোটের মাঠে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মন্ত্রী ও পৌর চেয়ারম্যান মেজর (অব.) ইকবাল হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন।

১৯৯০ সালে আওয়ামী লীগের ভোটের রাজনীতির নেতাখ্যাত প্রয়াত মনোয়ার বখত নেককে হারিয়ে দ্বিতীয় দফা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ওয়ান-ইলেভেন সরকারের আমলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আবার ফিরলে প্রার্থী হন এবং ২০০৯ তৃতীয়বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হন। এর পর ২০১৪ সালে চতুর্থবার। পঞ্চমবার ২০১৯ সালে দলীয় সিদ্ধান্ত হওয়ায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। জয়নুল জাকেরীনের রাজনৈতিক জীবন বিএনপি থেকে শুরু। সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি পদে ছিলেন। ৫ আগস্টের পর পুনর্গঠিত জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এখন। দলীয় মনোনয়নবঞ্চনার প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুকে তার একটি স্ট্যাটাস ঘিরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে।

তিনি ফেসবুকে লিখেন, ‘আজ আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি শুধু একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে নয়, বরং আপনাদেরই একজন, আপনাদের সুখ-দুঃখের সাথী, আপনাদের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষার একজন নীরব প্রহরী হিসেবে। দেশ যখন অন্ধকার ভেদ করে গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে, যখন জাতি ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছে, ঠিক সেই সময় বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণা সুনামগঞ্জ ও বিশ্বম্ভরপুরের মানুষের হৃদয়ে যে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে, তা আমাদের সবার বেদনার সম্মিলিত স্মারক হয়ে থাকবে। এই জনপদের সর্বস্তরের মানুষ, মজুর–কৃষক–শ্রমিক, শিক্ষক–বুদ্ধিজীবী, তরুণ–বয়োজ্যেষ্ঠ, হিন্দু–মুসলিম–সব সম্প্রদায়ের আপনজনেরা, যারা শান্তি, সম্প্রীতি, সুশাসন আর মানবিক মর্যাদা-নির্ভর একটি নতুন সমাজ নির্মাণের স্বপ্নে ছিলেন, সেই স্বপ্ন যেন এক মুহূর্তে থেমে গেছে। আমি দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন, আপনাদের ভাই, আপনাদের আপনজন। আজ আপনাদের কাছে একটিই কথা বলতে চাই—দল হয়তো আপনাদের আশা বুঝতে পারেনি, আপনাদের আকাঙ্ক্ষার মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু আমি আপনাদের বুঝি, আমি আপনাদের অনুভব করি, আপনাদের স্বপ্নই আমার স্বপ্ন—এটাই আমার প্রেরণা। আমি শপথ করে বলছি, আপনাদের সঙ্গে নিয়ে, আপনাদের শক্তিকে পুঁজি করে, সুনামগঞ্জ ও বিশ্বম্ভরপুরকে শান্তি, সম্প্রীতি, মানবিকতা ও সন্ত্রাসমুক্ত এক জনপদে রূপান্তরিত করার লড়াই আমি থামাব না। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই সংগ্রাম আমার চলবে—ইনশাআল্লাহ। আগামী ২/১ দিনের মধ্যেই আমি আপনাদের নিয়ে সেই নতুন লড়াই, সেই নতুন পথচলার ঘোষণা দেব। যে পথচলা হবে আপনাদের স্বপ্ন রক্ষার, আপনাদের মর্যাদা রক্ষার, আপনাদের ভবিষ্যৎ রক্ষার সংগ্রাম। পরম দয়ালু আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাঁর হেফাজতে রাখুন এবং সত্য ও ন্যায়ের পথে শক্তি দিন।’

জাকেরীন-নুরুল সৌজন্য সাক্ষাৎ

শনিবার দুপুরে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য দেওয়ান জয়নুল জাকেরীনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন সুনামগঞ্জ-৪ (সদর ও বিশ্বম্ভরপুর) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম নুরুল। জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ নুরুল সৌজন্য সাক্ষাতে ধানের শীষকে বিজয়ী করার জন্য দেওয়ান জয়নুল জাকেরীনের কাছে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। 

সাক্ষাৎ শেষে নুরুল বলেন, ‘আসনটিতে অনেকেই মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। এক এক করে সবার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করব, ধানের শীষকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানাব ।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার