এনসিপির শীর্ষ ১০ নেতার আসনে বিএনপি প্রার্থী, জোটের সম্ভাবনা ক্ষীণ
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:১৭ এএম
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রথম দফায় ২৩৭টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। পরে ফাঁকা থাকা আরও ৩৬টি আসনে গতকাল (৪ ডিসেম্বর) নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে দলটি। সব মিলিয়ে ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৭২টি আসনেই প্রার্থীদের নাম প্রকাশিত হলো। দুই দফায় ২৭২টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার মাধ্যমে দেখা গেছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ ১০ নেতার পছন্দের আসনেও প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। এতে কিছুদিন আগ পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিএনপি ও এনসিপি মধ্যে নির্বাচনী জোট গঠনের গুঞ্জন থাকলেও এ ঘটনায় ফিকে হয়ে এসেছে সেই সম্ভাবনা।
এনসিপির শীর্ষ ১০ নেতা কারা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক ময়দানে নতুন শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে নতুন এই দলের ঘোষণা আসে। দলের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলাম এবং সদস্যসচিব হন আখতার হোসেন। আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের বাইরে নতুন এই দলের শীর্ষ আটটি পদ তৈরি করা হয়। দলটিতে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান সামান্তা শারমীন ও আরিফুল ইসলাম আদীব; জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পান ডা. তাসনিম জারা ও নাহিদা সারওয়ার নিভা; মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পান নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী ও যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে নেতৃত্বে আসেন আবদুল হান্নান মাসউদ; এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠকের দায়িত্ব পান হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠকের দায়িত্ব পান সারজিস আলম।
শীর্ষ ১০ নেতার আসনে প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি
এনসিপির শীর্ষ নেতারা ইতিমধ্যে দল থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তবে তাদের পছন্দের প্রায় সব আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এনসিপি সূত্রে জানা গেছে, দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকা-১১ এবং সদস্যসচিব আখতার হোসেন রংপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। বিএনপি প্রথম দফাতেই এই দুই আসনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব ঢাকা-১৪ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এই আসনেও বিএনপি প্রার্থী দিয়েছে। আরেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমীন ফরম কিনেছেন ঢাকা-১৩ আসন থেকে। এই আসনে বিএনপি এখনো দলীয় প্রার্থী না দিলেও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজকে সমর্থন দিতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা ঢাকা-৯ এবং নাহিদা সারওয়ার নিভা ঢাকা-১২ আসন থেকে এনসিপির মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। বিএনপির তালিকায় এই দুটি আসনেও প্রার্থীর নাম রয়েছে।
এছাড়া এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী ঢাকা-১৮ এবং যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালী-৬ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। বিএনপির প্রার্থী তালিকায় এই দুটি আসনও রয়েছে।
অন্যদিকে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ কুমিল্লা-৪ এবং উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পঞ্চগড়-১ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। বিএনপি প্রথম দফাতেই এই দুই আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
জোট নিয়ে যা বলছে এনসিপি
শীর্ষ নেতাদের আসনে বিএনপির প্রার্থী দেওয়ার ফলে নির্বাচনী জোটের সম্ভাবনা আছে কি না—জানতে চাইলে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমীন স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি এনসিপি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে। আর যদি জোট করেও, তাহলে যারা বিচার ও সংস্কারের বিষয়ে একমত, তাদের সঙ্গেই জোট হতে পারে। আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি।’
বিএনপির সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা কখনোই বলিনি বিএনপির সঙ্গে আমরা জোট করব। এগুলো মিডিয়া ফ্রেমিং করেছে।’
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
দুই উপদেষ্টার আসনেও বিএনপির প্রার্থী ও শরিকের ছায়া
আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে রাজধানীর আলোচিত ঢাকা-১০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, কলাবাগান ও হাজারীবাগ এলাকা নিয়ে গঠিত এ আসনে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলমকে।
অথচ এই আসনে নির্বাচন করার গুঞ্জন ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার। গত ৯ নভেম্বর তিনি ঢাকা-১০ সংসদীয় এলাকায় ভোটার হওয়ার আবেদন করেন এবং পরদিন তালিকায় তার নাম যুক্ত হয়। ধারণা করা হচ্ছিল, বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা হলে তিনি এই আসন থেকে লড়বেন। কিন্তু বিএনপির প্রার্থী ঘোষণায় সেই সমীকরণ জটিল হয়েছে।
অন্যদিকে আরেক ছাত্র প্রতিনিধি ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ভোটার হিসেবে আছেন লক্ষ্মীপুর-১ আসনে। বিএনপি এখনো এই আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে এখানে ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিমকে বিএনপি ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দিয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।