Logo
Logo
×

রাজনীতি

৩৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণায় বিচলিত ও ক্ষুব্ধ মিত্ররা

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫৫ এএম

৩৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণায় বিচলিত ও ক্ষুব্ধ মিত্ররা

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গতকাল বৃহস্পতিবার আরও ৩৬ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর আগে ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল দলটি, যদিও পরে একটি আসন স্থগিত করেছিল। ফলে দুই দফায় তিনশ আসনের মধ্যে ২৭২টিতে প্রার্থী ঘোষণা করল বিএনপি। তবে দ্বিতীয় দফায় প্রার্থী ঘোষণায় মিত্র রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিচলিত ও ক্ষুব্ধ। মিত্র একাধিক শীর্ষ নেতা বলেন, বিএনপি যে কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা তারা বুঝে উঠতে পারছেন না। তাদের দল ও জোটের নেতাকর্মীদের মাঝে দিন দিন ক্ষোভ বাড়ছে।

তবে বাকি ২৮ আসন যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রসহ দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের জন্য ফাঁকা রাখা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এই আসনগুলো খুব শিগগির ঘোষণা করা হবে। ৩৬ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের সমমনা মিত্র যারা আছেন তাদেরগুলো এবং দু-একটা দলীয় প্রার্থীর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সেগুলো আমরা আরও পরে ঘোষণা করব, যথাসময়ে ঘোষণা করব।

এবারও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আসলাম চৌধুরী, বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার নাম ঘোষিত তালিকায় স্থান হয়নি।

অন্যদিকে মিত্র রাজনৈতিক দল জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা সৈয়দ এহসানুল হুদা কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন। কিন্তু এই আসনে বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ইকবালকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

গতকাল রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল। এই আসনে মিত্র দল বাংলাদেশ লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে ছিলেন।

মিত্র জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন। এই আসনে গতকাল বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলামকেই বেছে নিয়েছে দলটি। এতে করে বিএনপির ওপর চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন মিত্র দলের নেতাকর্মীরা।

গতকাল যে ৩৬ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে, তার মধ্যে মাদারীপুর-১ আসনে একমাত্র নারীপ্রার্থী নাদিরা আক্তার। শিবচর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রয়াত মিঠু চৌধুরীর স্ত্রী নাদিরা শিবচর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। যদিও এই আসনে বিএনপি প্রথম দফায় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিল ব্যবসায়ী কামাল জামান মোল্লাকে। কিন্তু পরে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে তা স্থগিত করা হয়।

ঢাকার ২০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৩টিতে গত ৩ নভেম্বর প্রার্থী ঘোষণা করেছিল বিএনপি। গতকাল চারটি সংসদীয় আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। এর মধ্যে আলোচিত ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, কলাবাগান ও হাজারীবাগ এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১০ আসনের প্রার্থীও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই আসনে প্রার্থী হিসেবে শেখ রবিউল আলমের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও এই আসনে বিএনপি থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার নির্বাচন করা নিয়ে জনমনে আলোচনার বিস্তর ডালপালা ছড়িয়েছে। এই আসনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীমও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় ছিলেন।

ঢাকা-৭ আসনে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হামিদুর রহমান হামিদকে। যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সভাপতি, ছাত্রদলের মহানগরের সহসভাপতি এবং কেন্দ্রীয় সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তবে এই আসনে সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর স্ত্রী নাছিমা আক্তার কল্পনা, ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইসাহাক সরকার, বিএনপির সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক নেওয়াজ আলী নেওয়াজের মতো শক্ত মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।

জানা গেছে, ঢাকা-৭ আসনটি বিএনপি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হককে ছেড়ে দিতে পারে বলে আলোচনা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে বিএনপির সমঝোতা হয়নি। মামুনুল হকের দল জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে আট দলের অভিন্ন কর্মসূচির আন্দোলনে সক্রিয় আছে।

ঢাকা-১৮ আসনে ধানের শীষ চেয়েছিলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। যিনি নভেম্বরের শুরুতে বিএনপিতে যোগ দেন। শেষ পর্যন্ত এই আসনে মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম জাহাঙ্গীর হোসেনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও এই আসনে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, যুগ্ম আহ্বায়ক এম কফিল উদ্দিন ও আফাজ উদ্দিনের মতো শক্ত মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তারা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম গঠন করে মিছিলও করেছেন।


ঢাকা-২০ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী চারজন। তাঁরা হলেন জাতীয়তাবাদী যুবদলের ঢাকা জেলা সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস (মুরাদ), ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তমিজ উদ্দিন, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ এবং ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান (অভি)। কিন্তু এই আসনে এখনও বিএনপি প্রার্থী দেয়নি।

ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবীবকে ঢাকা-৯ আসনে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে বিএনপি। এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে ছিলেন দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। তিনি মহিলা দলের সভাপতিও। টাঙ্গাইল-৫ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু মনোনয়ন পেয়েছেন। চট্টগ্রাম-৬ আসনে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে প্রার্থী করেছে বিএনপি।

গাজীপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন কালিয়াকৈর পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. মজিবুর রহমান। এই আসনে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইয়েদুল আলম বাবুলের অবস্থানও বেশ শক্ত। তিনিও মনোনয়নপ্রত্যাশী।

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে মো. কামরুজ্জামান রতনকে প্রার্থী করা হয়েছে। এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে শক্তপ্রার্থী রয়েছেন পাঁচবারের সংসদ সদস্য ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুল হাইয়ের ছোট ভাই ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ।

৩৬ আসনে মনোনয়ন পেলেন যারা : গতকাল বিএনপির ঘোষিত ৩৬ জন প্রার্থী হলেনÑ ঠাকুরগাঁও-২ আসনে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে ডা. আব্দুস সালামকে, যিনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সাবেক মহাসচিব। দিনাজপুর-৫ একেএম কামরুজ্জামান, নওগাঁ-৫ আসনে জাহিদুল ইসলাম ধলু, নাটোর-৩ আসনে মো. আনোয়ারুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ-১ আসনে সেলিম রেজাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে এই আসনে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কনক চাপাকে বেছে নিয়েছিল বিএনপি।

যশোর-৫ আসনে এম ইকবাল হোসেন, নড়াইল-২ আসনে মনিরুল ইসলাম, খুলনা-১ আসনে আমীর এজাজ খানকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। পটুয়াখালী-২ আসনে শহীদুল আলম তালুকদারকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনীর হোসেনের শক্ত অবস্থান রয়েছেন। বরিশাল-৩ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনকেই প্রার্থী করা হয়েছে। বঞ্চিত হয়েছেন দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান।

ময়মনসিংহ-৪ আসনে আবু ওয়াহাব আখন্দ ওয়ালিদ, কিশোরগঞ্জ-১ আসনে মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে শেখ মজিবর রহমান ইকবাল, মানিকগঞ্জ-১ আসনে এসএ জিন্নাহ কবির, রাজবাড়ী-২ আসনে মো. হারুন অর রশীদ, ফরিদপুর-১ খন্দোকার নাসিরুল ইসলাম, মাদারীপুর-২ আসনে জাহান্দার আলী খান, সুনামগঞ্জ-২ আসনে নাসির হোসেন চৌধুরী, সুনামগঞ্জ-৪ আসনে নুরুল ইসলাম, সিলেট-৪ আসনে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ-১ আসনে বিএনপিতে সদস্য যোগ দেওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া, কুমিল্লা-২ আসনে সেলিম ভুঁইয়া, চট্টগ্রাম-৩ আসনে সাবেক এমপি মোস্তফা কামাল পাশা, চট্টগ্রাম-৯ আসনে মো. আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে নাজমুল মোস্তফা আমীন ও কক্সবাজার-২ আসনে আলমগীর মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ।

মিত্র প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় যারা : পিরোজপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা-১৭ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, লক্ষ্মীপুর-১ আসনে বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব অসুস্থ হওয়ায় লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে তার স্ত্রী তানিয়া রব লড়তে পারেন। এ ছাড়া ঢাকা-১৩ আসনে এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, চট্টগ্রাম-১৪ আসনে এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক, কুমিল্লা-৭ আসনে দলটির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ। পটুয়াখালী-৩ আসনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর এবং ঝিনাইদহ-২ আসনে দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানের নাম আলোচনা আছে।

অন্যদিকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের আমির উবায়দুল্লাহ ফারুক সিলেট-৫, মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী নীলফামারী-১, কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ আলী সিলেট-৪, জুনায়েদ আল হাবিব ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, মনির হোসেন কাসেমী নারায়ণগঞ্জ-৪, মোখলেছুর রহমান চৌধুরী কিশোরগঞ্জ-১, শোয়ায়েব আহমদ সুনামগঞ্জ-২ আসন চাইছেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার