Logo
Logo
×

রাজনীতি

বিএনপি নেতাকর্মীদের পদত্যাগের হিড়িক, নানা বিতর্কে আযম

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৫৪ পিএম

বিএনপি নেতাকর্মীদের পদত্যাগের হিড়িক, নানা বিতর্কে আযম

বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এই আসনে মনোনয়ন পাওয়া দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান জড়িয়েছেন নানা বিতর্কে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইতোমধ্যে দলের ৩৩ নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন। যার নেতিবাচক প্রভাব আগামী সংসদ নির্বাচনে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তবে জেলা বিএনপি ও দলীয় প্রার্থী বিষয়টিকে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এই আসনে বিএনপির প্রার্থী আযম খান সম্প্রতি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বয়ক আব্দুল খালেক মণ্ডলকে হুমকি দেন। এ সময় তিনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। হুমকির অডিও গত ২০ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে মুক্তিযোদ্ধাকে উদ্দেশ করে বলা হয়, আপনি সখীপুর-বাসাইলে আসুন, পিঠের চামড়া থাকবে না। আযম খান আরো বলেন, আপনি আমার নির্বাচন ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। আপনার সিএস, আরএস দেখতে হবে আমার। এক পর্যায়ে ওই মুক্তিযোদ্ধাকে খেয়ে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মারাত্মক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

এর প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধারা গত রোববার সখীপুর তালতলা চত্বরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন। একই দিনে টাঙ্গাইল শহরের নিরালা মোড়েও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। সমাবেশে যোগ দিয়ে এতে একাত্মতা প্রকাশ করেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী। ভুয়াপুরেও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন মুক্তিযোদ্ধারা।

এদিকে রোববার সন্ধ্যায় সখীপুর কলেজের সামনে এক নির্বাচনি পথসভায় আযম খান মুক্তিযুদ্ধ করেছেন বলে দাবি করেন। এ সময় তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিমাঞ্চলে যুদ্ধ করেছেন এবং বাসাইল অঞ্চলের একজন সংগঠক ছিলেন তিনি। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সারাজীবন মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করে যাব।

আযম খানের এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রীতিমতো ঠাট্টা শুরু হয়। দলের নেতাকর্মীরাও তাকে নিয়ে সমালোচনা শুরু করেন। সখীপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা সাজাহান সাজু এক ভিডিও বার্তায় আযম খানকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বলে মন্তব্য করেন। এতে তিনি বলেন, ‘আযম খান মুক্তিযোদ্ধা, এটা আমরা কোনো কাগজে কলমে পাই নাই, দেখি নাই, শুনি নাই। মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তার নামও নাই, এটার কোনো ইতিহাসও নাই।’ অপর এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আযম খানের মুখে বহুবার শুনেছি, তিনি নিজেই বলেছেন তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেননি। এই ভুয়া দাবি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মান খাটো করে।’

মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত বিতর্কের ঝড় থামতে না থামতেই সখীপুরে বিএনপি থেকে পদত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়। এর কারণ হিসেবে নেতাকর্মীরা বলছেন, আযম খান আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসন করার পাশাপাশি স্বেচ্ছাচারিতা ও দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করছেন। এর প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার রাতে সখীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাজু ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাসেদ মাস্টারসহ ১১ নেতা দল থেকে পদত্যাগ করেন। পরদিন বুধবার পদত্যাগ করেন ওলামা দলের ২২ নেতাকর্মী। তাদের পদত্যাগের ঘটনায় টাঙ্গাইলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে সেদিন সন্ধ্যায় জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছুটে যান সখীপুরে। স্থানীয় বিএনপি কার্যালয়ে মতবিনিময় সভা করেন তারা। এ সময় জেলার সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন ও সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল জানান, বিএনপি সাগরের মতো একটি দল। এখান থেকে দু-এক বালতি পানি চলে গেলে কিছুই হবে না। আগামী নির্বাচনে আযম খানের সুনিশ্চিত বিজয় দেখে ষড়যন্ত্রকারীরা পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটাচ্ছে। তবে কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না।

এ বিষয়ে আযম খান বলেন, আমার বিরুদ্ধে, বিএনপির বিরুদ্ধে ও ধানের শীষের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তবে জনগণ এবার ঐক্যবদ্ধ আছে। কোনো ষড়যন্ত্রই ধানের শীষের বিজয় ঠেকাতে পারবে না।

এদিকে বিষয়টিকে হালকাভাবে নিচ্ছেন না স্থানীয় বিএনপির অনেক নেতা। তারা বলছেন, দায়িত্বশীল নেতাদের বিতর্কিত মন্তব্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার