নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় মাহফুজ, পথ খুঁজছেন আসিফ!
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:০৫ পিএম
খুব শিগগিরিই ঘোষণা করা হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল। নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের থাকা দুই শিক্ষার্থী প্রতিনিধি উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া রয়েছেন দোটানায়। আসিফ ভুঁইয়া নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও মাহফুজ আলম রয়েছেন সিদ্ধান্তহীনতায়।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম পদত্যাগ ও নির্বাচন করার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। অন্যদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ঢাকা থেকে ভোট করবেন, সেটা আগেই জানিয়েছেন। তবে তিনি বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), নাকি স্বতন্ত্র—কোন পথে হাঁটবেন, সেটা এখনো খোলাসা করেননি। তাঁর রাজনৈতিক ঠিকানাও এখনো নিশ্চিত হয়নি।
সরকারে থাকা এই দুই উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করার জন্য শীর্ষ পর্যায় থেকে সম্প্রতি আবারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র থেকে জানা গেছে। এর আগেও তাঁদের পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তখন তাঁরা আরও সময় চেয়েছিলেন। এরপর আরও একাধিকবার পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে। এর মধ্যে আসিফ মাহমুদের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, তিনি জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সরকার থেকে পদত্যাগ করতে পারেন।
তবে মাহফুজ আলমের ঘনিষ্ঠ কোনো কোনো সূত্র বলছে, তিনি পদত্যাগ না করে এই সরকারের শেষ সময় পর্যন্ত উপদেষ্টা পরিষদে থেকেও যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন না। আর যদি নির্বাচনে অংশ নেন, তাহলে তফসিলের আগে সরকার থেকে পদত্যাগ করবেন।
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) শনিবার বলেছেন, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে, অর্থাৎ আগামী সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হতে পারে।
সরকারে থাকা আসিফ মাহমুদ ঢাকা-১০ আসন (ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউমার্কেট ও হাজারীবাগ) থেকে নির্বাচন করতে পারেন বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা আছে। অন্যদিকে মাহফুজ আলম যদি নির্বাচন করেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন।
ঢাকা-১০ ও লক্ষ্মীপুর-১ আসনে বিএনপি এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। সেটি সরকারের এ দুই তরুণ উপদেষ্টার জন্যই কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে জামায়াত এ দুই আসনেই প্রার্থী দিয়েছে।
এনসিপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলটিতে মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদের প্রভাব রয়েছে। দুজনের চাওয়া ছিল, বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতা বা জোট করবে এনসিপি। এ নিয়ে অনানুষ্ঠানিক কিছু আলাপ–আলোচনাও হয়েছিল। তবে এখন সেটার আর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
বরং এনসিপি তৃতীয় একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। এ জোটের জন্য এনসিপির সঙ্গে আলোচনায় আছে এবি পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)। যদিও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের উদ্যোগে গঠিত রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আপ বাংলাদেশকে এ জোটে রাখা নিয়ে এনসিপির দিক থেকে আপত্তি রয়েছে। আবার জোটে আসা নিয়ে গণ অধিকার পরিষদের নেতাদের মধ্যেও দ্বিধাবিভক্তি রয়েছে। এ দুটি কারণে নতুন জোট গঠনের বিষয়টি স্থগিত রয়েছে।
আসিফ মাহমুদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায়। তিনি সেখানকার ভোটার ছিলেন। গত ৯ নভেম্বর তিনি ঢাকা-১০ সংসদীয় আসনের ভোটার হওয়ার আবেদন করেন। ওই দিন আসিফ মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি ঢাকা থেকে নির্বাচন করবেন, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে কবে পদত্যাগ করবেন, সেটা সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।
এদিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সরকার থেকে পদত্যাগ করবেন কি না, সেটি এখনো নিশ্চিত নয় বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে। সূত্রটি জানায়, এ বিষয়ে দু-এক দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তিনি। মাহফুজ আলম তাঁর গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার (লক্ষ্মীপুর-১ আসন) ভোটার। এ আসনে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি আগে থেকেই এলাকায় সক্রিয়।
লক্ষ্মীপুর-১ আসনে মাহফুজ আলম প্রার্থী হতে পারেন, এমন আলোচনা এলাকায় অনেক দিন ধরেই চলছে। তাঁর ভাই এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলমও এলাকায় সক্রিয়।