গড়ার আগেই ভাঙার শঙ্কায় এনসিপিসহ চার দলের ‘জোট’
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:১৪ এএম
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কয়েকদিন ধরে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বলয়ের বাইরে গিয়ে তৃতীয় একটি রাজনৈতিক জোট করার লক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) চারটি দলের তৎপরতা নিয়ে নানামুখী আলোচনা হয়েছে। প্রস্তাবিত এই জোটের আলোচনায় এনসিপির সঙ্গে ছিল আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও ইউনাইটেড পিপলস অব বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)। জোটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে দলগুলোর।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশনে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ নামে নতুন জোটের আত্মপ্রকাশের সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত ছিল। তবে নানা মতপার্থক্যের কারণে শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করা হয়েছে। আর এই মতপার্থক্যের কারণে আত্মপ্রকাশের আগেই নতুন এই জোট গঠনের উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যেতে পারে বলেও জানা যাচ্ছে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, জোট গঠনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পর শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করা হয়েছে। কারও বিষয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে, কেউ সময় চেয়েছে। এখনো আলোচনা চলমান। আলোচনার ভিত্তিতে এ জোট হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে।
এবি পার্টির সহ-দপ্তর সম্পাদক মশিউর রহমান মিলু জানান, একই ধরনের কথা। তিনি বলেন, হঠাৎ করে মাঝরাতে এটি স্থগিত হয়েছে। আমাদের শরিক যারা, তাদের ভেতরে ডিসকাশনের কিছু বিষয় আছে। এনসিপির অনেক জুনিয়র নেতা আছে, বোঝার জায়গা আছে, এ জায়গা থেকে আমরা একটু দেরি করছি।’
এনসিপির একটি সূত্র জানায়, বুধবার রাতে এনসিপির নির্বাহী কমিটির জরুরি বৈঠক হয়। বৈঠক সম্ভাব্য নির্বাচনী জোট নিয়ে নির্বাহী সদস্যরা মতামত দেন। এবি পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদের নির্বাচনী জোট হলে কী লাভ বা ক্ষতি হবে, তা নিয়ে মতামত দিতে গিয়ে অনেকেই এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানান। জেএসডি এই জোটে যুক্ত হতে পারে, এ নিয়েও আলোচনা হয়। তবে আপ বাংলাদেশকে জোটে নেওয়া নিয়ে তীব্র মতবিরোধ দেখা দেয়। দলের একাংশ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, তারা আপ বাংলাদেশকে নিয়ে জোট করতে রাজি নয়। দলের বেশিরভাগ সদস্যই তাতে সম্মতি দেননি। এ ক্ষেত্রে অনেকের যুক্তি ছিল, কোনো প্ল্যাটফর্ম রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী জোটসঙ্গী হতে পারে কি না।
জোট সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জোট গঠন নিয়ে কয়েকদিন ধরে একাধিক বৈঠক হয়। সর্বশেষ বুধবার রাতেও এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়। বৈঠকে এনসিপি, গণঅধিকার, এবি পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, আপ বাংলাদেশের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এনসিপির বড় একটি অংশ আপ বাংলাদেশের থাকা নিয়ে আপত্তি জানায়। অন্যদিকে গণঅধিকার পরিষদও জোটে থাকা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। তাতে প্রায় চূড়ান্ত হয়েও শেষ মুহূর্তে জোটের ঘোষণা স্থগিত করা হয়। এনসিপির এক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, আপ বাংলাদেশকে নিয়ে জোট করার বিষয়ে দলের মধ্যে একাধিক বৈঠক হয়। শেষে এনসিপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে আপ বাংলাদেশকে নিয়ে জোট করবে না। তবে অন্য তিন দল কী চায়, তার ওপরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে।
আপ বাংলাদেশকে না রাখার ব্যাখ্যা হিসেবে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা আছে। যাদের অবস্থান আমরা জানি, তাদের সঙ্গে আমাদের জোট হবে। একটা প্ল্যাটফর্মকে কীভাবে জোটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। এ ছাড়া সংস্কারের বিষয়ে তাদের অবস্থান সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা নেই। আমাদের আলোচনা হয়েছে যে, আমরা আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একজোট হই, তারপর কোনো প্ল্যাটফর্মকে নেওয়া হবে কি না—এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, এটা যেহেতু দীর্ঘমেয়াদি জোট এবং নির্বাচনের পরও সংস্কারকেন্দ্রিক এই জোট যেহেতু কাজ করবে, তাই আমরা আরও সময় নিচ্ছি। জেএসডি, গণঅধিকার এবং কিছু ইসলামিক দলের সঙ্গেও আলোচনা চলমান। সব ঠিক থাকলে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হয়তো এই জোটের আত্মপ্রকাশ হতে পারে। এনসিপিসহ চার দলের এই জোটে গণঅধিকার পরিষদকে রাখা নিয়েও আলোচনা হয়। এনসিপি ও গণঅধিকারের মধ্যে রুদ্ধদ্বার বৈঠকও হয়। তবে গণঅধিকার পরিষদের নেতারা এ জোটের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। এর আগে এনসিপি ও গণঅধিকারের একীভূত হওয়ার আলোচনা শুরু হলে তাও বাস্তবে রূপ নেয়নি। গণঅধিকার পরিষদ ২০২২ সাল থেকে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে। দলটির বড় অংশ নির্বাচনেও বিএনপির সঙ্গেই থাকতে চায়।
সব মিলিয়ে নতুন জোটে গণঅধিকারের থাকাটাও অনিশ্চিত। বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে সময় চেয়েছে তারা। গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, আমরা যেহেতু বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘদিন যুগপৎ আন্দোলন করেছি এবং নির্বাচনী জোটের বিষয়েও আলোচনা আছে, সেহেতু হঠাৎ করে নতুন একটা জোটভুক্ত হলে প্রশ্ন তৈরি হবে। আমরা বলেছি এটা আলোচনাসাপেক্ষ বিষয়, বিভিন্ন ফোরামে আলোচনার পর আমরা মতামত জানাব।
আপ বাংলাদেশের প্রধান সংগঠক নাঈম আহমাদ বলেন, জোটগঠন প্রক্রিয়া পিছিয়েছে। আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে আমরা চাই এই জোট হোক। কেউ যদি আপ বাংলাদেশকে নিয়ে আপত্তি তোলে কিংবা আপ বাংলাদেশকে ছাড়াও এই জোট করতে চায়, আমরা স্বাগত জানাব। নতুন বাংলাদেশ গঠনে এমন একটি জোটের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন তিনি।