দলকে বাঁচাতে ৪০টি আসন পুনর্বিবেচনার পথে বিএনপি!
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:১৫ পিএম
মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই বিএনপির ভেতরে ক্ষোভ, বিক্ষোভ ও বিভাজন থামছে না। দেশের কমপক্ষে ৪০টি আসনে মনোনয়ন নিয়ে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। কোথাও মিছিল, কোথাও সড়ক অবরোধ, আবার কোথাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ্য বিরোধিতা-সব মিলিয়ে দলের ভেতর অস্বস্তি স্পষ্ট। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে মনোনয়নবঞ্চিতদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার আশঙ্কায় চাপে পড়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠের ক্ষোভ দমাতে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব দ্রুত তৎপর হয়েছে। কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলরা বিরোধপূর্ণ আসনের সব পক্ষকে ঢাকায় ডেকে একে একে কথা বলছেন। নির্দেশনা পাচ্ছেন কাউকে যেন দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, এমন কোনো পদক্ষেপ না নিতে। এরই মধ্যে জয়পুরহাট, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহসহ কয়েকটি জেলার বঞ্চিত নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে। কিছু আসনে প্রার্থী পুনর্বিবেচনার সম্ভাবনার ইঙ্গিত মিলেছে।
নাটোর-১ আসনের বিরোধ যেন পুরো বিষয়টির প্রতীক। সেখানে মনোনয়ন পেয়ে আলোচনায় আসেন ফারজানা শারমিন। এরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম ও ফারজানার ভাই ইয়াছির আরশাদ। গুলশানে ডেকে তাঁদের বোঝান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নির্দেশনা দেওয়া হয় পরিস্থিতি আর না ঘোলাটে করতে।
ফেনী-২ আসনের ‘শৈল্পিক’ বিক্ষোভ এবার আলোচনায় উঠে এসেছে সবচেয়ে বেশি। ধানখেতে দাঁড়িয়ে ক্রিকেটারের ভঙ্গিতে রিভিউ চাওয়ার ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। জেলা বিএনপির নেতা আলাল উদ্দিনসহ সাতজন মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার জন্য লিখিত আবেদন করেছেন। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত পায়নি তারা।
সবচেয়ে জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে মাদারীপুর-১ আসনে। কামাল জামান মোল্লার নাম ঘোষণার পরই তার বিরোধিতা করে সড়ক অবরোধ করেন আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী লাভলু সিদ্দিকীর সমর্থকেরা। এরপর প্রার্থী ঘোষণা স্থগিত করে দল। দুই পক্ষের গ্রহণযোগ্যতা, অতীত ভূমিকা, স্থানীয় প্রভাব-সব বিবেচনায় ফেলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে শীর্ষ নেতৃত্বকে।
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল, জামালপুর, দিনাজপুর, পাবনা, নওগাঁসহ সারাদেশে একই চিত্র। কোথাও কাফনের কাপড় পরে মিছিল, কোথাও মহাসড়ক অবরোধ, কোথাও ফাঁসির মঞ্চের প্রতীকী প্রতিবাদ। একাধিক এলাকায় বিক্ষুব্ধদের বোঝাতে ব্যক্তি উদ্যোগে কথা বলছেন তারেক রহমানও।
দলের দায়িত্বশীল নেতাদের ভাষ্য, সাধারণত বড় দলে মনোনয়ন নিয়ে কিছু অসন্তোষ থাকেই। কিন্তু এবার তা বেড়েছে কয়েকটি কারণে। মাঠের নেতাদের দাবি, অযোগ্যদের বাদ দিয়ে গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে প্রার্থী ঠিক না করলে বিজয় কঠিন হয়ে যাবে। তাই প্রয়োজনে নিরপেক্ষ জরিপের অনুরোধও জানাচ্ছেন তারা। আবার অনেকেই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে দলের ক্ষতি হয়, এমন কিছু করবেন না।
সবশেষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অনেক জায়গাতেই দু-তিনজন করে নেতা মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। ঘোষণার পর স্বাভাবিকভাবেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। আলাপ–আলোচনা করে তা সমাধানের চেষ্টা চলছে। কতগুলো আসনে পুনর্বিবেচনা হতে পারে-সেই ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি।
দলীয় পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, অসন্তোষ দমাতে ব্যর্থ হলে কিছু আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়াতে পারেন। তাতে দলের ভোটব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। এ কারণেই শেষ পর্যন্ত দলকে বাঁচাতে এবং মাঠের ঐক্য রক্ষায় বিএনপি প্রার্থী তালিকায় পুনর্বিবেচনার পথে হাঁটছে।