‘সৌভাগ্যবান’ নিজামের মনোনয়ন বাতিলে তারেক রহমানকে চিঠি
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৪৮ পিএম
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা–কর্ণফুলী) আসনে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে মামলা, হামলা ও নির্যাতনের কারণে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা ছিলেন ঘরছাড়া ও চরম ভোগান্তিতে। আওয়ামী লীগের দায়ের করা বিভিন্ন মামলায় কেউ ছিলেন পলাতক, কেউবা কারাগারে কাটিয়েছেন দুঃসহ সময়। কিন্তু সেই কঠিন সময়গুলোতে একই আসন থেকে বিএনপির টিকিটে দুবার (১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচন ছাড়া) সংসদ সদস্য নির্বাচিত সরওয়ার জামাল নিজাম ছিলেন প্রায়ই অনুপস্থিত।
অভিযোগ রয়েছে, নির্যাতিত কর্মীদের পাশে থাকার পরিবর্তে তিনি সময় কাটিয়েছেন বিদেশ সফরে। গত ১৬ বছরে তিনি অন্তত ২৫ বার ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, লন্ডন, সিঙ্গাপুর, ব্যাংককসহ নানা দেশে ভ্রমণ করেছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীরা যখন দুঃসময়ে সহায়তার অপেক্ষায় ছিলেন, তখন তিনি ছিলেন ব্যস্ত বিলাসবহুল বিদেশযাত্রায়।
বর্তমানে আসন্ন নির্বাচনের জন্য আবারও তিনি ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়েছেন। এতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ‘সৌভাগ্যবান’ এই নেতার মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে তারা এখন মাঠে নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
তারা বিএনপির সুদিনের ‘সৌভাগ্যবান’ নেতা নিজামের মনোনয়ন বাতিল দাবিতে মাঠে নেমেছেন।
এদিকে মনোনয়নপ্রত্যাশী আনোয়ারা-কর্ণফুলীর তিন নেতা নিজামের ১৬ বছরের আমলনামা তুলে ধরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে চিঠি দিয়েছেন। তারা নিজামকে মনোনয়ন দেওয়াকে অত্যন্ত ‘দুঃখজনক’ এবং ত্যাগী নেতাদের প্রতি ‘অবিচার’ উল্লেখ করে অবিলম্বে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
নিজাম ছাড়া অন্য ত্যাগী ও যোগ্য মনোনয়নপ্রত্যাশী যে কোনো নেতাকে মনোনয়ন দিলে তাদের কোনো আপত্তি থাকবে না বলেও জানিয়েছেন।
কেন্দ্রে দেওয়া চিঠিতে স্বাক্ষরকারী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন বলেন, তার (নিজামের) পাসপোর্ট, ইমিগ্রেশনের তালিকাসহ সব কাগজপত্র নিয়েই আমরা হাইকমান্ডের কাছে তথ্যপ্রমাণসহ বিলাসী জীবনের চিত্র তুলে ধরেছি। আমরা তার চ্যালেঞ্জ নিতে রাজি আছি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে ১৯ নভেম্বর চিঠি দেন আনোয়ারা-কর্ণফুলী আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির তিন নেতা। তারা হলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আব্বাস, সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন ও সদস্য এসএম মামুন মিয়া।
আনোয়ারা ও কর্ণফুলী বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, ১৬ বছরে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী থানায় প্রায় অর্ধশত মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি হয়েছেন অন্তত ২ হাজার নেতাকর্মী। এর মধ্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আব্বাস ১৭টি মামলার আসামি হন। তিনি দুই দফায় পাঁচ বছর জেল খাটেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা যান তার এক ভাই। দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন পাঁচটি রাজনৈতিক মামলার আসামি হয়েছেন। এভাবে ছোট-বড়-মাঝারি অনেক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হয়েছেন।
সূত্র আরও জানায়, অন্তত ২৫ বার বিদেশ ভ্রমণকারী নিজামের গায়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনের একটু আঁচ পর্যন্ত লাগেনি। ১৬ বছরে তাকে একটি মামলার আসামিও হতে হয়নি। তাই বিএনপির সুদিনের ‘সৌভাগ্যবান’ নেতা নিজামের মনোনয়ন কোনোভাবেই কাম্য নয়।