এমপি হতে ব্যতিক্রমী প্রচারণা চালাচ্ছেন আব্দুল হাই মাস্টার
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০২ পিএম
কুড়িগ্রামে ব্যতিক্রমী প্রচারণা চালাচ্ছেন আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক এক ব্যক্তি। তিনি একহাতে হ্যান্ডমাইক এবং অন্যহাতে পোস্টারসমৃদ্ধ প্ল্যাকার্ড নিয়ে ঘুরছেন অলিগলিতে। রেকর্ডকৃত হ্যান্ডমাইক বাজিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন ভোটারদের। তার সঙ্গে ছুটে চলেছে ছেলে-বুড়োর দল।
সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনে ইচ্ছুক আব্দুল হাই মাস্টার এলাকার মানুষের কাছে অতি প্রিয়ভাজন এবং ভালোবাসার মানুষ। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাইকেলে ঘুরে ভোট চাইলেও এবার তিনি ভোট চাইছেন হেঁটে-হেঁটে। শুধু সাধারণ মানুষের মনোযোগ কাড়তে নয়- সত্যিকার অর্থে এলাকার উন্নয়নে সংসদে কথা বলার জন্য একটি করে ভোট দাবি করছেন তিনি। তার এ নির্বাচন পদ্ধতি নজর কেড়েছে এলাকার সাধারণ ভোটারদের মধ্যে।
সরেজমিন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-১ (নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী) আসন থেকে জাকের পার্টি থেকে ভোটযুদ্ধে অংশগ্রহণ করছেন সাবেক ভূরুঙ্গামারী উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক বঙ্গ সোনাহাট ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাই মাস্টার।
একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে এলাকার সাধারণ মানুষের উন্নয়নে তিনি প্রথমে ইউপি সদস্য এবং পরে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এবার স্বপ্ন দেখছেন জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার। নির্বাচনি ময়দানে একজন ব্যতিক্রমধর্মী প্রার্থী হিসেবে তিনি বরাবর নজর কেড়েছেন। এছাড়াও অতি সাধারণ জীবনযাপন করছেন তিনি। কোনো কাজকেই ছোট করে দেখেন না তিনি।
নির্বাচিত হওয়ার পর ড্রেন পরিষ্কার করা, রাস্তাঘাটে ঝাড়ু দিতে দেখা গেছে তাকে। একবার ইউনিয়ন পরিষদ এবং আরেকবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান হওয়ার পরেও তার বাড়িঘরের কোনো পরিবর্তন হয়নি। বারবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে জমিজমা সব বেঁচে দিয়েছেন। এখন বসতভিটাও ভাতিজাদের কাছে বন্দক রেখে নির্বাচন করছেন তিনি। এ নিয়ে পরিবারের সদস্যদের কোনো আপত্তি নেই। তার ইচ্ছা মানুষের ভালোবাসা এবং সততার কারণে পরিবারও সেসব মেনে নিয়েছে।
তার স্ত্রী জানান, তাকে মানুষ খুব ভালোবাসেন। এবার সবাই চাইছে সে এমপি হোক। তার কাছে মানুষ সহজে এসে কথা বলতে পারবে। সে খুব পরিশ্রম করতেছে। প্রচার করতেছে।
তার ছেলের স্ত্রী জানান, আমার শ্বশুর হেঁটে ভোট চাইছেন। তিনি কঠোর পরিশ্রম করছেন। তার জন্য মানুষ জানপ্রাণ দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন।
এলাকার ভোটাররা বলেন, হাই মাস্টারকে সবাই পাগলা মাস্টার বলে ডাকেন। সাধারণ মানুষ একবার ডাকলেই তিনি সবকিছু ফেলে ছুটে যান তাদের সাহায্য করতে। এবার তিনি হ্যান্ডমাইক নিয়ে হেঁটে পুরো এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। তার আশা আল্লাহ পাক তাকে এবার এমপি নির্বাচিত করবেন। আগাম নির্বাচন করতে গিয়ে যেখানে রাত হচ্ছে সেখানেই কারো বাড়িতে খেয়ে রাতযাপন করছেন। সেখান থেকেই পরদিন আবার নির্বাচনি প্রচারে নামছেন। প্রতিবার নির্বাচনে আব্দুল হাই মাস্টার বিজয়ী হলেও ভোট কারচুপির কারণে তিনি হেরে যান। এবারে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু ভোট হলে তিনি জিতবেন বলে এলাকাবাসী বিশ্বাস করেন।
আব্দুল হাই মাস্টার জানান, আমি গত এক বছর ধরে এলাকায় ঘুরছি। আমি ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থাকাকালে আমার কাছে স্বাচ্ছন্দ্যে সাধারণ মানুষ থেকে শিশু ও নারীরা সমস্যা জানাতে গেছেন। আমি যথাসাধ্য সবাইকে সহযোগিতা করেছি। আমি ভুরুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরী উপজেলার সব ইউনিয়নে চষে বেড়াচ্ছি। আমার কাছে কেউ চা খেতেও চায় না, আমিও মানুষকে কষ্ট দিতে চাই না। এবার সুযোগ এসেছে আমি চাই এলাকার মানুষের জন্য কিছু করি। ভোট করতে গিয়ে আমার বাড়িভিটা পর্যন্ত বন্দক রাখতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত সেই জমি আমি উদ্ধার করতে পারিনি।
তিনি বলেন, আমি নির্বাচিত হলে নারীর উন্নয়ন, গ্যাস লাইন সম্প্রসারণ, কলকারখানা স্থাপন, কচাকাটা থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন, গরিব মানুষের জন্য সুদমুক্ত ঋণ প্রদান, চরাঞ্চলের মানুষের জন্য চাইনিজ পদ্ধতিতে নদী শাসন ব্যবস্থাকরণ এবং চরাঞ্চরে গবাদিপশু পালনের মাধ্যমে মাংস ও দুধ রপ্তানি করতে পারব।
ব্যক্তিগত জীবনে আব্দুল হাই মাস্টার এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা। তার ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। প্রতিটি নির্বাচনে ব্যতিক্রমধর্মী কার্যকলাপের কারণে বাংলাদেশ টেলিভিশনে বহুল প্রচারিত ইত্যাদি অনুষ্ঠানে তার জীবন কাহিনী নিয়ে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়েছিল।
কুড়িগ্রাম-১ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৫৪ হাজার ১৯১ জন। পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৭৭ হাজার ৪৩৯ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ৭৪৯ জন। এই আসনে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৩ জন।