তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৯ পিএম
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। দেশে এসে কোথায় উঠবেন এবং কোথায় অফিস করবেন তাও প্রায় চূড়ান্ত। তার ফেরা নিয়ে দলীয়ভাবে বিএনপি সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নিরাপত্তার বিষয় নিয়েও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলের একটি প্রতিনিধিদল। যদিও কৌশলগত কারণে তারেক রহমানের ফেরার সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ প্রকাশ করা হচ্ছে না।
তারেক রহমান নিজেও এখন পর্যন্ত দিন-তারিখ সম্পর্কে কোনো সবুজ সংকেত দেননি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই তিনি হয়তো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। একাধিক সূত্র অবশ্য ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, বিজয় দিবস সামনে রেখেই তিনি দেশে ফেরার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে পারেন।
তিনি দেশে এলে নেতাকর্মীদের মধ্যে যে উচ্ছ্বাস তৈরি হবে, সেটিও মাথায় রেখে নিরাপত্তাসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তার দেশে ফেরার আয়োজন নিয়েও এখন থেকেই ভাবা হচ্ছে। যদিও ওইদিন বড় জনসমাগম করা হবে কিনা তা তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি’র দু’জন শীর্ষ নেতা বলেন, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তফসিল ঘোষণার আগে অথবা তফসিলের পরপরই ফিরবেন কিনা এ নিয়ে দলের ভেতরেই আলোচনা চলছে। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জনতার চোখকে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই জানেন, তিনি কবে দেশে ফিরবেন। তবে তার দেশে ফেরার বিষয়ে আমরা সবসময়ই প্রস্তুত রয়েছি।
ওদিকে দেশে ফিরে তারেক রহমান গুলশান-২ এভিনিউ রোডের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে উঠবেন বলে বিএনপি’র একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। সূত্রটি জানায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের থাকার জন্য বাড়িটি উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। করা হচ্ছে সাজসজ্জা। লাগানো হয়েছে সিসিটিভি। বাড়ির নিরাপত্তায় রয়েছেন সিএসএফ। এ ছাড়া দেশে ফিরে তারেক রহমান ধানমণ্ডির ৫ নম্বর সড়কের ‘মাহবুব ভবন’-এ উঠতে পারেন বলেও দলের ভেতরে আলোচনা রয়েছে। তারেক রহমানের শ্বশুর সাবেক নৌবাহিনী প্রধান রিয়াল এডমিরাল মাহবুব আলী খানের বাসভবন এটি।
অন্তর্বর্তী সরকার গুলশান-২ এভিনিউ রোডের ১৯৬ নম্বর বাড়ির নামজারি সম্পন্ন করে এ সংক্রান্ত কাগজপত্র বেগম খালেদা জিয়ার হাতে হস্তান্তর করেছে। এই বাড়ির পাশেই ‘ফিরোজা’য় থাকেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাড়িটি বৃটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ-এর কাছে ভাড়া দেয়া ছিল। ১৯৮১ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর তৎকালীন সরকার তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এই বাড়িটি বরাদ্দ দেন। দেশে ফিরে তারেক রহমান এই বাড়িতে থাকতে পারেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়েই তারেক রহমান অফিস করবেন বলে বিএনপি’র সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। তার বসার উপযোগী করেই কক্ষটি সাজানো হচ্ছে। ধোয়া-মোছাও করা হচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর (সিএসএফ) সদস্যরা তারেক রহমানের নিরাপত্তার দেখভাল করবেন । ওদিকে নির্বাচনী প্রচারণাকে সামনে রেখে দু’টি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নিরাপত্তায় এই গাড়ি কেনার অনুমতি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে গত অক্টোবর মাসে একটি বুলেটপ্রুফ বাস এবং জুন মাসে একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার অনুমতি দেয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বিএনপি’র কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার অনুমতি চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ ছাড়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্যও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছে বিএনপি।
দলটির যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবির বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার কোনো দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি। তবে নির্বাচনে তার নেতৃত্বেই আমরা অংশগ্রহণ করবো। সুতরাং শিগগিরই তিনি দেশে ফিরছেন- এটা ধরে নিতে পারেন। আর তার নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার তার নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে।
২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়া হলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সব মামলা থেকে অব্যাহতি পান তিনি।
তার দেশে ফিরতে পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট প্রয়োজন হলে সেটা সরকার সরবরাহ করবে বলেও জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
প্রায় ১৭ বছর ধরে লন্ডনে আছেন তারেক রহমান। ২০০৭ সালের ৭ই মার্চ এক-এগারোর জরুরি জমানায় তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। কারাগারে তার ওপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। পরের বছরে ৩রা সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান। ১১ই সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডনে যান তিনি। এরপর সেখান থেকেই দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।