বঞ্চিতদের চ্যালেঞ্জের মুখে বিএনপির প্রার্থীরা
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৫৩ এএম
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোরের ৫টি সংসদীয় আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে চারটিতেই প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থীরা নিজ দলের মনোনয়নবঞ্চিত নেতা ও তাদের অনুসারীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। প্রার্থী বদলের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা। প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থীকে ‘ব্যর্থ ও অযোগ্য’ প্রমাণে প্রকাশ্যে সমাবেশ, শোডাউন ও লিখিত অভিযোগে দুর্বলতা তুলে ধরা হচ্ছে। এতে প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক দলের সমালোচনার আগেই নিজ দলের মনোনয়নবঞ্চিতদের কাছে তুলাধুনা হচ্ছেন প্রার্থীরা। বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ভোটারদের কাছে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
জানা যায়, যশোর-১ (শার্শা) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি। মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির, সাবেক সভাপতি খায়রুজ্জামান মধু এবং সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটন। এ আসনে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত আবেদন পাঠিয়েছেন মনোনয়নবঞ্চিতরা। তারা তৃপ্তির নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন না। তারা এখনো চূড়ান্ত মনোনয়নের আশায় রয়েছেন।
যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা সুলতানা মুন্নী। দলীয় মনোনয়ন পেয়েই একবার ঝিকরগাছা, আরেকবার চৌগাছার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাইতে ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি। মুন্নী নিজ দলের মনোনয়নবঞ্চিতদের বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছেন। এ আসনে একজন পুরুষ প্রার্থীকে মনোনয়নের দাবিতে মাঠে নেমেছেন বঞ্চিত মিজানুর রহমান খান, জহুরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহাক এবং ইমরান সামাদ নিপুন ও তার অনুসারীরা। বঞ্চিতরা একাট্টা হয়ে সমাবেশ, শোডাউনসহ নানা কর্মসূচিতে মুন্নীর মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন। ১০ নভেম্বর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছেন ঝিকরগাছা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমরান সামাদ নিপুন, চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালামসহ দুই উপজেলার নেতারা। ওই আবেদনে সাবিরা সুলতানা মুন্নীর মনোনয়ন বাতিলের পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে।
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব। তিনি পুরোদমে নির্বাচনি প্রচারণায় মাঠে নেমে পড়েছেন। মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় ক্ষুব্ধ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারাজি মতিয়ার রহমানের অনুসারীরা। টিএস আইয়ুবের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে ১৫ ও ১৬ নভেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে তিনটি লিখিত আবেদন দিয়েছেন অভয়নগর উপজেলা, নওয়াপাড়া পৌর ও বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির শতাধিক নেতা।
বিএনপির উপজেলা পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, দল যাকে যোগ্য মনে করেছে তাকে মনোনীত করেছে। দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েই আমরা কাজ করছি। কিন্তু বঞ্চিত নেতা ও তাদের অনুসারীরা দলের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে সভা-সমাবেশে দলের মনোনীত প্রার্থীদের অযোগ্য প্রমাণের জন্য নানা বিতর্কিত বক্তব্য রাখছেন। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে প্রকারান্তরে বিএনপির ভাবমূর্তিই ক্ষুণ্ন হচ্ছে। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের সমালোচনার রসদ জোগাচ্ছেন দলের বিদ্রোহীরা।
জানতে চাইলে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, সেরা প্রার্থী হিসাবেই দলের মনোনীতদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এসব আসনে অনেকেই মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। দলে তাদের অনেক অবদান আছে। দল তাদের অবদান স্বীকারও করে। বঞ্চিতরা নিজেদের যোগ্য মনে করে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি জানাতেই পারেন। তবে সেটি সাংগঠনিক ও সুশৃঙ্খল হতে হবে। এমন কিছু করব না, যাতে মানুষের কাছে দল সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা যায়। দলের বিবেচনায় চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় সংশোধনীও আসতে পারে। সেটি দলের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।
তিনি বলেন, জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে মনোনীত প্রার্থী ও মনোনয়নবঞ্চিতদের ডেকে করণীয় সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। আমরা মনে করি, কারও না পাওয়ার কষ্ট থাকতে পারে; কিন্তু দিনশেষে সবাই ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব।