বিএনপি যেসব আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করতে পারে
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৫, ০২:১০ এএম
২৩৭ আসনে ধানের শীষের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর থেকেই কিছু আসনে বিতর্কিত, বার্ধক্যজনিত সমস্যা, সংস্কারপন্থি, অযোগ্য ও হাইব্রিড নেতা মনোনয়ন পাওয়ায় তৃণমূলে বাড়ছে দলীয় কোন্দল। এসব আসন নিয়ে কিছুটা বেকায়দায় পড়েছে দলটি। এরই মধ্যে মাদারীপুর-১ আসনে বিতর্কিত কামাল জামাল মোল্লার প্রার্থিতা স্থগিত হয়েছে। এ ছাড়া অর্ধশতাধিক আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে এখনো চলছে বিক্ষোভ ও মিছিল। বিএনপির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, যেসব আসনে প্রার্থী নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, সেসব আসনে পরিবর্তন হতে পারে। সবমিলিয়ে ৩০টির মতো আসনে এই পরিবর্তন আসতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, প্রাথমিক মনোনয়নপ্রাপ্ত ২৩৬ জনের মধ্যে যাদের নিয়ে কোনো প্রশ্ন বা অভিযোগ নেই তারা চূড়ান্ত মনোনয়ন পাবেন। কিন্তু যেসব আসনে প্রার্থীকে নিয়ে বিতর্ক আছে, সেসব আসনে মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীর অবস্থান নতুন করে আবারও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। নিরপেক্ষ একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মাঠের প্রকৃত তথ্য নেওয়া হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একজন উপদেষ্টা এই কাজে সহায়তা করছেন। তফসিল ঘোষণার আগে-পরে এই তালিকায় প্রয়োজন অনুসারে কিছু প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে। এ ছাড়া যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতার জন্য কয়েকটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে।
দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার সময়েই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পরিষ্কারভাবে বলেছেন, এটা সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা। প্রয়োজনে পরিবর্তন আসতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপিতে অনেক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। তবে সবাইকে তো আর মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য কিছু আসনে প্রতিবাদ করে হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার।’ তিনি বলেন, ‘এবার সবাই মনে করছেন মনোনয়ন পেলেই পাস। কিন্তু কাকে মনোনয়ন দিলে বিজয়ী হয়ে আসতে পারবে তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিএনপি বড় দল। মনোনয়ন ঘোষণার পর কিছু আসনে আপত্তি উঠতে পারে- এটা স্বাভাবিক ব্যাপার।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা দলের প্রাথমিক তালিকা। চূড়ান্ত তালিকা নয়। প্রয়োজনে যেকোনো সময় তালিকায় পরিবর্তন আসতে পারে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘সংশোধনের সময় এখনো আছে। বিতর্কিত প্রার্থীদের নতুন করে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে নিয়ম মেনে দলের স্থায়ী কমিটি ও পার্লামেন্টারি বোর্ড কিছু আসনে পরিবর্তন আনতে পারে।’
জানা গেছে, ২০০৮ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ প্রথমে ৩০০ আসনে প্রাথমিক মনোনয়নপ্রাপ্ত তালিকা প্রকাশ করেছিল। পরে চূড়ান্ত মনোনয়নে অর্ধশতাধিক আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়।
বিএনপি নেতা-কর্মীরা জানান, বিএনপির ঘোষিত অনেক আসনে নব্য, হাইব্রিড, বিগত দিনে আওয়ামী সুবিধাভোগী, আন্দোলন-সংগ্রামে নিষ্ক্রিয় এবং দীর্ঘদিন প্রবাস ছিলেন এমন অনেক নেতা মনোনয়ন পেয়েছেন। পক্ষান্তরে তালিকায় ত্যাগী, যোগ্য আর জনপ্রিয় নেতাদের নাম নেই। এই কারণেই ক্ষোভে ফুঁসছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
যেসব আসনে পরিবর্তন হতে পারে:
ঢাকা-৫, ঢাকা-১২, সুনামগঞ্জ-১, চাঁদপুর-৪, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া), মাগুরা-২, কুষ্টিয়া-৪, টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল), নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা উপজেলা), সিরাজগঞ্জ-৩, নেত্রকোনা-৩ (আটপাড়া-কেন্দুয়া), চট্টগ্রাম-২, ৪, ১২, ১৩ ও ১৬, ফেনী-২, গাইবান্ধা-৪, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫, দিনাজপুর-১, ২ ও ৪; নরসিংদী-৪, সাতক্ষীরা-২ ও ৩; নাটোর-১; জামালপুর-২; টাঙ্গাইল-১, নীলফামারী-৪; কুষ্টিয়া ২ ও ৩; বান্দরবান, শেরপুর-২, হবিগঞ্জ-৪, জয়পুরহাট-১ ও ২; ময়মনসিংহ-৩,৬, ৯ ও ১১, মুন্সীগঞ্জ–১; কিশোরগঞ্জ-৫; কুমিল্লা-৫, ৬ ও ১০; কুড়িগ্রাম–১ ও ৩; রাজশাহী-১, ৩ ও ৪; ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫; রাজবাড়ী–২; নওগাঁ-১, ৩ ও ৪; পাবনা-৪; এবং মৌলভীবাজার-২ - এসব আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলন চলছে। এর মধ্যে কিছু আসনে প্রার্থী পরিবর্তন আসতে পারে বলে বিএনপির ভেতরে আলোচনা আছে।