হাসান মামুনে একাট্টা বিএনপি, ভিপি নুরকে ঘিরে উত্তেজনা
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:২০ পিএম
পটুয়াখালী-৩ আসনে (দশমিনা-গলাচিপা) বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা না হওয়ায় চরম হতাশা আর উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। দলীয় প্রার্থী না পাওয়া বা ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিতে না পারার আশঙ্কা ভর করেছে তাদের মনে। জোটের প্রার্থীকে আসন ছেড়ে দেওয়ার গুঞ্জনে তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা ‘মনমরা’ হয়ে সময় কাটাচ্ছেন।তাদের শঙ্কা হাসান মামুন মনোনয়ন না পেলে আসনটি এবারও বেহাত হতে পারে।
দশমিনা-গলাচিপা আসনটি সবশেষ জোটকে দেওয়া হবে নাকি দলীয় প্রার্থীকেই বেছে নেবে বিএনপি—দিন-রাত এমন হিসাব কষছেন তৃণমূলের নেতারা। স্বাধীনতার পর সরাসরি জনগণের ভোটে ও প্রতিযোগিতামূলক কোনো সংসদ নির্বাচনেই বিএনপি এ আসনে জয়লাভ করতে পারেনি। যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন ও জনগণের কাছে আস্থা অর্জন না করতে পারা ছিল অন্যতম প্রধান কারণ। আওয়ামী লীগের এ আসনটি কখনো কি জেতা হবে না বিএনপির—এমন হিসাব-নিকাশ ভোটারদেরও।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭টি আসনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী পটুয়াখালী-৩ (দশমিনা-গলাচিপা) আসনের প্রার্থী ঘোষণা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। এতেই সন্দেহ ভর করেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের মনে।
দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের তথ্য মতে, আলোচিত এই আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে যোগ্যতায় সবার ওপরে আছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাসান মামুন। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকেই প্রার্থী হিসেবে চান, তাকে ঘিরে একাট্টা। মনোনয়নের জন্য ঢাকায় সাক্ষাতের জন্যও ডাকা হয়েছিল তাকে।
এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন দশমিনা উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাওলাদার মো. ইফতিয়াস উদ্দিন জয়। নির্বাচন করার গুঞ্জন রয়েছে আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল) সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনির।
জামায়াতে ইসলামী থেকে এ আসনে অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহ-আলমকে করা হয়েছে প্রার্থী। একইভাবে হাফেজ মাওলানা মুফতি আবু বকর সিদ্দীক নামে একজনকে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন।
অন্যদিকে আসনটি জোটের কারণে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে আসন ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি—এমন গুঞ্জন দীর্ঘদিনের। গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বিএনপির জোটের গুঞ্জন থেকেই আসনটি ঘরে সহিংসতার ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। গণঅধিকার পরিষদ বিএনপির মিত্র হিসেবে পরিচিত হলেও দিন যত যাচ্ছে ক্রমশই স্থানীয় বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। ঘটছে সংঘর্ষের মতো ঘটনা।
সবশেষ পটুয়াখালী-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী কে—মামুন নাকি ভিপি নুর—এই তর্কে গলাচিপায় বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে হাসান আল মামুন মনোনয়ন পাচ্ছেন—এমনটাই নিশ্চিত ছিল। হঠাৎ আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনি বিএনপিতে যোগ দেন। তাকে শেষ মুহূর্তে পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। সে সময় দশমিনা-গলাচিপায় নেতাকর্মীদের পদত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়। দলের বাইরে কাউকে মনোনয়ন দিলে এবারও পদত্যাগের হিড়িক পড়বে বলে দাবি স্থানীয় দলের নেতাকর্মীদের।
দশমিনা-গলাচিপায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫২ হাজার ২৬১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭৭ হাজার ১৫৪ ও ১ লাখ ৭৫ হাজার ১০৫ জন নারী ভোটার রয়েছেন। এছাড়াও আসনটিতে দুজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন।
আনোয়ার নামে এক ভোটার বলেন, দশমিনা-গলাচিপার মানুষ এক সময় নৌকায় ভোট দিলেও হাসান মামুনের কারণে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে পরিবর্তন এসেছে।তার ইমেজের কারণে অনেকেই বিএনপির দিকে ঝুকেছে। তিনি মনোনয়ন পেলে এমপি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
বিএনপি নেতা হাওলাদার মো. ইফতিয়াস উদ্দিন জয় বলেন, আমি মনোনয়ন প্রত্যাশা করি। মনোনয়ন ভাগ্যের বিষয়। তবে পটুয়াখালী-৩ আসনে জোট নয়—কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুনকে ধানের শীষের প্রার্থী করা হোক। আমার নিজের চেয়ে তার ত্যাগ বেশি বলে মনে করি। তিনিই পারবেন বিজয়ী হতে। এ আসনে তার কোনো বিকল্প নেই।তিনি ছাত্রনেতা থাকাকালীন তরুণ যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। নিজ অর্থে অসহায় মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। অনেক অসহায় মানুষকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন।
জয় আরও বলেন, কখনো পটুয়াখালী-৩ আসন না পাওয়ার আক্ষেপ কেবলমাত্র হাসান মামুনের মাধ্যমেই বিএনপি ঘোচাতে পারবে। তিনি দাবি করেন, হাসান মামুন ছাড়া অন্য কাউকে (জোট) মনোনয়ন দিলে জামায়াত প্রার্থী নিশ্চিত এমপি নির্বাচিত হবেন।
ভিপি নুরের ভগ্নিপতি ও গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা উত্তরের সহ-সভাপতি মিজান হাওলাদার বলেন, জোটের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা এককভাবে প্রচারণা চালাচ্ছি।