কোন্দল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি
ত্যাগী, যোগ্য ও জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন না দেয়ার অভিযোগ
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৭ এএম
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ২৩৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর বিএনপির দলীয় কোন্দল তীব্র আকার ধারণ করেছে। বহু আসনে মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা প্রকাশ্যে বিক্ষোভ করছেন। কোথাও প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন, আবার অনেকেই প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে উপজেলা ও জেলা কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ করছেন। দলের অভ্যন্তরে চলমান এই অস্থিরতা দ্রুত থামানো না গেলে নির্বাচনী ফলে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
নেতাকর্মীদের অনেকের অভিযোগ, ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় ‘নব্য’, ‘হাইব্রিড’, অতীতে দলীয় সুবিধাভোগী, আন্দোলন-সংগ্রামে নিষ্ক্রিয় এবং প্রবাসে থাকা অনেককে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এতে ত্যাগী, যোগ্য ও জনপ্রিয় নেতাদের বঞ্চিত হয়েছেন বলে দাবি তাদের।
তৃণমূলপর্যায়ের বিএনপি নেতাদের দাবি, প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনা না করলে দলীয় ঐক্য ভেঙে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। মনোনয়নবঞ্চিত নেতাকর্মীরা বিক্ষোভের পাশাপাশি অনেকেই দলীয় প্রার্থীকে বেকায়দায় ফেলছেন। অনেকে প্রার্থী বদলের জন্য জোর লবিং-তদবির চালাচ্ছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এসব কোন্দল নিরসন না হলে নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত নয়। তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করা যেতে পারে। দলের পদক্ষেপেই মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনে কামাল জামান মোল্লার প্রার্থিতা স্থগিত করা হয়েছে। এর ফলে অন্য আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও আশান্বিত হয়ে আন্দোলনে নামেন। বর্তমানে প্রায় ২৫টি জেলায় একাধিক আসনে আন্দোলন চলছে, কোথাও কোথাও সংঘর্ষের ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে।
কিছু নির্বাচনী এলাকায় নবীন ও প্রবীণ নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্বও প্রকট। যেমন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪, কুষ্টিয়া-৪, মাগুরা-২ এবং ঢাকা-৫ আসনে মনোনয়ন নিয়ে তীব্র বিভাজন দেখা দিয়েছে। নেতাকর্মীরা ত্যাগী, যোগ্য ও জনপ্রিয় নেতাদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। চট্টগ্রাম-১২ ও গাইবান্ধা-৪ আসনে বিতর্কিত নেতাদের মনোনয়নও সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
শূন্য আসনের বিষয়ও নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে। টাঙ্গাইল-৫ ও ঝিনাইদাহ-৪ আসনে প্রার্থী না থাকায় স্থানীয় নেতারা মনোনয়নের জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন। নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে পারিবারিক দ্বন্দ্বও দেখা দিয়েছে। নিজেরা বোনের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে এটি চূড়ান্ত তালিকা নয়। এটি সম্ভাব্য তালিকা। কোনো এলাকায় তেমন পরিবর্তন মনে করলে অবশ্যই সেটি করা হবে। আর বড় দল হিসেবে প্রত্যেক আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী আছেন। সবকিছু বিশ্লেষণ করেই এই তালিকা করা হয়েছে।’
বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, ঘোষিত মনোনয়নের এই তালিকা চূড়ান্ত নয়। দলের স্থায়ী যদি কমিটি মনে করে, পার্লামেন্টারি বোর্ড যদি মনে করে, তারা কোনো আসনে পরিবর্তন আনবে সেটা নিঃসন্দেহে নিয়ম মেনে পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
তথ্য বলছে, গত রবিবার ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এম ইকবাল হোসেইনকে পরিবর্তনের দাবিতে গৌরীপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে আসছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক তায়েবুর রহমান হিরন। রবিবার ইকবাল এলাকায় প্রবেশের সময়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রাণ হারান উত্তর জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি তানজিল আহমেদ মিঠু। এই সংঘাত কোনো কোনো ক্ষেত্রে পারিবারিক পর্যায়েও শুরু হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে সাবেক এমপি মুশফিকুর রহমানকে সম্ভাব্য মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। নব্বই বছরের ঊর্ধ্বে একজন বয়োবৃদ্ধ এবং অসুস্থ নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসে ওঠা স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, ১৭ বছর মুশফিকুর রহমান কানাডাপ্রবাসী ছিলেন। দলের দুর্দিনে নেতাকর্মীরা তাকে কাছে পাননি। এই আসনে অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী কবির আহমদ ভূঁইয়ার পক্ষে দুই উপজেলার নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছেন। কুষ্টিয়া-৪ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক এমপি সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমিকে। আশি বছরোর্ধ্ব বয়সী এই নেতার আসনে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ সাদী মনোনয়ন চাইছেন। এখানে মনোনয়ন পরিবর্তন না এলে অঘটন ঘটতে পারে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন খোকসা উপজেলা বিএনপির সাবেক নেতা মোস্তাফিজুর রহমান। মাগুরা-২ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীকে। তার মনোনয়ন কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। একপাশে নিতাই রায়, অন্যদিকে সাবেক এমপি কাজী সলিমুল হক কামাল ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়নের সমর্থকরা। এর মধ্যে এই আসনের মোহাম্মদপুর, শালিখা ও সদর উপজেলার ১৭১টি ওয়ার্ড বিএনপির ৫০১ নেতাকর্মী নিতাই রায় চৌধুরীর প্রার্থিতা বাতিলের দাবি জানিয়ে দলের হাইকমান্ডের কাছে লিখিত দাবি জানিয়েছেন।
শালিখা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর হোসেন টুকু বলেন, যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, বিগত তিনটি নির্বাচনে তিনি পরাজিত হয়েছেন। এবারের নির্বাচনেও তিনি নিশ্চিত পরাজিত হবেন।
সূত্রগুলো আরও বলছে, ঢাকা-৫ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে নবীউল্লাহ নবীকে। তাকে নিয়ে একদিকে যেমন বিতর্ক রয়েছে, তেমনি বয়সের হিসাবও ভাবাচ্ছে দলকে। ‘নির্বাচনের আগে আর কোনো চাঁদাবাজি নয়’ এমন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে এই নেতার বিরুদ্ধে।
টাঙ্গাইল-৩ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক নাসিরকে। তিনি এই এলাকায় বহিরাগত দাবি করে সাবেক এমপি ও মন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদ এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাইনুল ইসলামের অনুসারীরা প্রতিদিনই কর্মসূচি পালন করছেন। চট্টগ্রাম-১২ আসনে ৫ আগস্টের পর এস আলম গ্রুপের গাড়িকান্ডে দল থেকে বহিষ্কৃত ও বিতর্কিত নেতা এনামুল হককে মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। গাইবান্ধা-৪ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ওয়ান-ইলেভেনের সংস্কারপন্থি নেতা ও সাবেক এমপি মোহাম্মদ শামীম কায়সার লিঙ্কনকে।
নরসিংদী-৪ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ওয়ান-ইলেভেনে সংস্কারপন্থি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলের নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। ‘নষ্ট মায়ের নষ্ট ছেলে’ খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নিয়ে এমন আপত্তিকর মন্তব্য করা এই নেতা আওয়ামী লীগের প্রয়াত শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের মামাতো ফুপাতো ভাই তিনি। ফলে বিগত দিনে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা-হামলা এমনকি কারাগারেও যেতে হয়নি। তার একমাত্র মেয়ের শ্বশুর আওয়ামী লীগের চিফ হুইপ ও পিরোজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আ.স.ম. ফিরোজ। অন্যদিকে, তার বড় বোনের ছেলে ফখরুল মান্নান মুক্ত চালাকচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া, বড় ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন বুলবুল ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে বকুল মনোহরদী ও বেলাব উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে নদী থেকে বালু ও মাটি উত্তোলনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা চালিয়েছেন গোপনে। এখানে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল বছরের পর বছর কাজ করছেন, সংগঠনকে শক্তিশালী করেছেন। মামলা-হামলায় জর্জরিত এই নেতাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় নেতাকর্মীরা হতাশ।
নোয়াখালী-৫ (কবিরহাট-কোম্পানীগঞ্জ) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মোহাম্মদ ফখরুল ইসলামের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সেখানকার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে এক ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে এই মনোনয়ন এলাকাবাসীর কাছে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে দাবি করেন জাতীয়তাবাদী ঢাকা ফোরামের সভাপতি ইব্রাহিম খলিল সাহেদ, যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম বাদল, সাবেক উপজেলা বিএনপি সদস্য নাজিমুদ্দিন প্রমুখ নেতারা। তারা বলেন, এমন বিতর্কিত মনোনয়ন দিয়ে নোয়াখালীর রাজনীতি আরও জটিল করা হচ্ছে।
মানববন্ধন শেষে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয় থেকে একটি মিছিল বের করেন বিক্ষোভকারীরা। মিছিলটি নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে পুনরায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়।
নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইকরামুল বারীর (টিপু) মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে মান্দায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন মনোনয়নবঞ্চিত এম এ মতিনের অনুসারী নেতাকর্মীরা। গত মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার ফেরিঘাট এলাকায় নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে এ বিক্ষোভ করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বিকেল পাঁচটার দিকে উপজেলার ফেরিঘাট এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন এম এ মতিনের অনুসারীরা। বিক্ষোভে শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন। এতে প্রায় এক ঘণ্টা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে মান্দায় ইকরামুল বারীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
এদিকে টাঙ্গাইল-৫ আসনে কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। এই আসনে কোনো জোটের সম্ভাব্য প্রার্থীও নেই। তারপরও কেন এই আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি তা নিয়ে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, এই আসনে হেভিওয়েট আর জনপ্রিয় নেতা হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন, দলকে সংগঠিত করছেন, সাধারণ মানুষের কাছে দলকে নিয়ে গেছেন। কিন্তু তাকে মনোনয়ন না দিয়ে আসন ফাঁকা রাখায় যেমন ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে তেমনি হতাশাও কাজ করছে তাদের মধ্যে।
সদর থানা বিএনপি নেতা আশরাফুল ইসলাম বলেন, তাদের প্রতিপক্ষ জামায়াত যেখানে এক বছর আগে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছে, সেখানে টাঙ্গাইল সদরের মতো গুরুত্বপূর্ণ আসনটি ফাঁকা রেখেছে বিএনপি। এতে নির্বাচনের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন তারা। একইভাবে ঝিনাইদহ-৪ আসনে ২০১৮ সালে নির্বাচন করেছিলেন সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। এলাকায় এবারের নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এই আসনের প্রার্থীও ফাঁকা রাখা হয়েছে। কেন এটা করা হয়েছে তা নিয়ে হতাশ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে বিএনপির প্রয়াত নেতা ফজলুর রহমান পটলের ছোট মেয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুলকে মনোনয়ন দিয়েছে দল। কিন্তু তার আপন বড় ভাই ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক ভিপি ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজন তার বোনের প্রার্থিতা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন। এই আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বিগত বছরগুলোয় দলের সাংগঠনিক তৎপরতা কিংবা নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে কাজ করেছেন। ফলে ত্রিধারায় বিভক্ত এই আসনের নেতাকর্মীরা।
মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। ‘আমি তারেক রহমানকে টাকা দেই, তাই কারও কাছে যাওয়ার সময় নেই’ এলাকায় এমন কথা তিনি প্রকাশ্যেই বলতেন। সেই তিনি মনোনয়ন পাওয়ায় ওই এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময় দিব্যি ব্যবসা করে শেখ হাসিনার কাছ থেকে একাধিকবার পুরস্কার গ্রহণ এই নেতার বিরুদ্ধে দুদকে মানিলন্ডারিংয়ের মামলাও রয়েছে। তার আপন ছোট ভাই স্থানীয় উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতা। তার বাড়ির আঙিনায় ৫ আগস্টের আগে প্রায় প্রতিদিনই প্রথমে আওয়ামী লীগ ও পরে বিএনপির অনুষ্ঠান হতো। এই এলাকায় কেন্দ্রীয় কমিটির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক সরাফত আলী সপু ও শ্রীনগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মমিন আলী মনোনয়নপ্রত্যাশী। মনোনয়ন ঘোষণার পরও প্রচার চালাচ্ছেন এই দুই নেতা। সিরাজদিখান ও শ্রীনগর এই দুই উপজেলা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে শেখ আব্দুল্লাহর বিরোধিতা করে মিছিল মিটিং করছেন এবং তিনি ছাড়া অন্য যে কাউকে প্রার্থী করার দাবি জানিয়েছে। না হলে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক অচল করে দেওয়ায় হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
এমন আরও বেশ কয়েকটি আসনে মনোনয়ন নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকলেও তা সংঘাত-সংঘর্ষে রূপ নেয়নি। তবে কোন্দলও মেটেনি। যার যার অনুসারী নিয়ে আলাদা কর্মসূচি পালন করছেন তারা। এসব বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিএনপি সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। এখানে অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশী। সবাইকে তো আর মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব না। যারা মনোনয়ন পাননি তাদেরকে দল অন্যভাবে মূল্যায়ন করবে।’