মান্নার সমর্থকরা চাঙা, হতাশ বিএনপির তৃণমূল
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:০০ পিএম
বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলমকে ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়ার পরও তাকে শেষপর্যন্ত মনোনয়ন না দেওয়ায় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
তারা বলছেন, জোটের স্বার্থে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে দেওয়া হলে আসনটি হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। এখানে খুব সহজে জামায়াত প্রার্থী সাবেক এমপি মাওলানা শাহাদাতুজ্জামান বিজয়ী হবেন। এসব বিবেচনায় বিএনপি নেতাকর্মীরা এ ব্যাপারে বিবেচনা করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনটি মূলত জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির। গত ১৯৭৩ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশে ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি পাঁচবার, জাতীয় পার্টি তিনবার, আওয়ামী লীগ একবার, জামায়াত একবার, ফ্রিডম পার্টি একবার ও স্বতন্ত্র একবার নির্বাচিত হয়। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি, জামায়াত, নাগরিক ঐক্য ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে তৎপরতা শুরু করেন।
বিএনপি থেকে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও শিবগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি মীর শাহে আলম, জামায়াতের মাওলানা শাহাদাতুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যর মাহমুদুর রহমান মান্না, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অ্যাডভোকেট মুফতি জামাল উদ্দিন, বাসদের মাসুদ পারভেজ, এনসিপির জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ মাঠে কাজ শুরু করেন।
বিএনপি বগুড়ার সাতটির মধ্যে ছয়টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করলেও বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনটি ফাঁকা রাখে। শোনা যাচ্ছে, জোটের স্বার্থে আসনটি নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নাকে দেওয়া হবে। তারেক রহমান ফোনে ও গুলশানের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে মীর শাহে আলমকে সবুজ সংকেত দিলেও শেষপর্যন্ত মনোনয়ন না দেওয়ার দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা হতাশ হয়ে পড়েন।
শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াহাব ও নেতাকর্মীরা জানান, মীর শাহে আলম গত ১৭ বছর ধরে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। এ আসনের উন্নয়নে তিনি অনেক কাজ করেছেন। এলাকার মানুষের সুখেদুঃখে পাশে রয়েছেন। মোকামতলা পৌরসভা, আলাদা কলেজ, ২০ শয্যার হাসপাতাল ও মহাসড়কে আন্ডারপাস ছাড়াও অসংখ্য উন্নয়ন কাজ করেছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ১২টি মামলার আসামি হন; দুবার জেলে যান। তিনি উপজেলার বিএনপির সব ইউনিট পুনর্গঠন করেছেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫০০ জন করে ১১৭টি ওয়ার্ডে সাড়ে ৫৪ হাজার নেতাকর্মী রয়েছেন। তাদের পরিবারে তিনজন করে সদস্য হলেও পৌনে দুই লক্ষাধিক ভোটার তাকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছেন। এরপর বিভিন্ন দল থেকে কয়েক হাজার নেতাকর্মী বিএনপিতে যোগদান করেছেন। এ দৃষ্টিকোণ থেকে মীর শাহে আলমকে প্রার্থী করা হলে সাড়ে তিন লাখ ভোটের মধ্যে বিপুলসংখ্যক ভোট পেয়ে তিনি নির্বাচিত হতেন।
নেতাকর্মীরা আরও জানান, ২০১৮ সালের পর নাগরিক ঐক্যর সভাপতি মাহমুদুর রহমান এলাকার কারো দিকে তাকাননি। তার দলের লোকজন বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা করেছেন। তাই বগুড়া-২ আসনে তাকে মনোনয়ন দিলে আসনটি নিশ্চিত জামায়াতের ঘরে চলে যাবে।
নাগরিক ঐক্য বগুড়ার শিবগঞ্জ শাখার আহবায়ক শহিদুল ইসলাম ও অন্য নেতাকর্মীরা জানান, বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে বর্তমানে মাহমুদুর রহমান মান্নার কোনো বিকল্প প্রার্থী নেই। জোটগত ভোট হলে বিএনপি মান্নাকে প্রার্থী করবে। আরপিও সংশোধন না হলে তিনি কেটলি প্রতীকে ভোট করবেন।
তারা আরও বলেন, বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মীর শাহে আলম গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও সমর্থক সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন। এসব আসামি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা কখনও বিএনপির শাহে আলমকে ভোট দেবেন না।
তারা আরও বলেন, মীর শাহে আলম কিছু পকেট কমিটি করেছেন, যাদের কাছে কিছু ভোট পেতে পারেন। এছাড়া জামায়াতের তেমন ভোট নেই। তারা সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ভোট পেতে পারেন।
তারা দাবি করেন, মান্নার যে কোনো পথসভা জনসমুদ্র পরিণত হচ্ছে। তাই তার ভোটের কোনো অভাব নেই। তিনি জোট থেকে বা এককভাবে ভোট করলেও এবার নিশ্চিত বিজয়ী হবেন।
জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা শাহাদাতুজ্জামান বলেন, তিনি পঞ্চম জাতীয় সংসদে (১৯৯১-৯৫) এমপি ছিলেন। এলাকার মানুষের জন্য অনেক কাজ করেছেন। তিনি মানুষের ভালোবাসা নিয়ে দুর্নীতিমুক্ত ছিলেন। এবারের নির্বাচনে মীর শাহে আলম বা নাগরিক ঐক্যর মাহমুদুর রহমান মান্না যাকেই প্রার্থী করা হোক না কেন তিনি কাউকে ভয় পান না। তিনি সাড়ে তিন লাখ ভোটারের মধ্যে বিপুলসংখ্যক ভোট পেয়ে নির্বাচিত হবেন।