Logo
Logo
×

রাজনীতি

বিএনপির মনোনয়ন পুনর্মূল্যায়নে বঞ্চিতদের ঐকমত্য

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৪৫ পিএম

বিএনপির মনোনয়ন পুনর্মূল্যায়নে বঞ্চিতদের ঐকমত্য

দলীয় মনোনয়ন পেয়েই একবার ঝিকরগাছা আরেকবার চৌগাছার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাইতে ছুটে বেড়াচ্ছেন সাবেরা ইয়াসমিন মুন্নী। বিপরীতে যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্যরা। নিজেরা প্রার্থী হওয়ার মনোবাসনা নিয়ে চাইছেন, প্রতিদ্বন্দ্বীর মতো বিএনপির প্রার্থীও যেন শক্তিশালী হয়! এ কারণে তারা এখন পর্যন্ত দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামেননি। তবে নির্ঝঞ্ঝাট রয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের প্রার্থী ডা. মোসলেহউদ্দিন ফরিদ।

সূত্র মতে, প্রার্থী পরিবর্তনের আবেদন জানিয়েছেন ঝিকরগাছা ও চৌগাছা উপজেলা বিএনপির তৃণমূল নেতারা। ১০ নভেম্বর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর ওই আবেদন করা হয়। অনুরূপ আবেদন করেছেন ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমরান সামাদ নিপুন। তিনি নিজেও মনোনয়নপ্রত্যাশী।

চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, প্রার্থী পুনর্বিবেচনার জন্যে আমি আবেদন করিনি। ওই আবেদন করেছেন উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা। তারা আমাকে ভালোবাসেন, প্রার্থী মনোনয়নে পুনর্বিবেচনার যেহেতু সুযোগ রয়েছে-সে কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীরা আশাবাদী। তারা মনেপ্রাণে চাইছেন, এই আসনে এবার চৌগাছা থেকেই যেন মনোনয়ন দেওয়া হয়। প্রতিবারই সব দল হয় বাইরে থেকে, নইলে ঝিকরগাছার সন্তান হিসাবে মনোনয়ন পান বা নির্বাচিত হন।

বিএনপি বর্তমানে প্রবীণ-নবীনের নেতৃত্বকে মূল্যায়ন করছে-সে কারণে বেশ আশাবাদী তরুণ নেতা ইমরান সামাদ নিপুন। তিনি বলেন, আমি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে নই। কিন্তু প্রার্থী পুনর্নির্ধারণে যেহেতু সুযোগ রয়েছে-সে কারণে আমি নিজেও চাইছি। এটি দলীয় অনৈক্যের বিষয় না। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হলে আমরা অবশ্যই ধানের শীষের পক্ষেই থাকব। জামায়াতের প্রার্থীর বিপরীতে বিএনপির আরও শক্তিশালী প্রার্থী দরকার।

দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার আগে সাবিরা সুলতানা, জহুরুল ইসলাম, ইমরান সামাদ নিপুনসহ ছয় বিএনপি নেতাকে ঢাকায় তলব করে দল। অন্য যাদের ডাকা হয়-জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মিজানুর রহমান খান, সাবেক সহসভাপতি অ্যাড. মুহম্মদ ইসহাক ও ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মোর্ত্তজা এলাহী টিপু।

আরও পড়ুন
এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরে জনসংযোগ চালিয়ে আসা মিজানুর রহমান খান এখনো মনে করছেন দল প্রার্থী পুনর্বিবেচনা করবে। তিনি বলেন, মনোনয়ন দেওয়ার আগেই তারেক রহমান নিজে আমাকে এলাকায় কাজ করতে বলেছেন। সে অনুযায়ী কাজ করছি।

জানতে চাইলে সাবিরা সুলতানা বলেন, ‘জনসংযোগে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছি। প্রতিটি পথসভায় নারী ও পুরুষের উপস্থিতি প্রায় সমান।’ দলীয় বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইসমাইল হোসেন সোহাগের কাছে ফোন দেন। সোহাগ বলেন, ধানের শীষের বিষয়ে নেতাকর্মীরা সব একাট্টা। এই দুই উপজেলায় নারী ভোট একচেটিয়া জামায়াতের-এই ধারণা পুরোটাই বদলে দেবেন সাবিরা সুলতানা। প্রতিটি পথসভা, উঠান বৈঠকে নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি সেটাই প্রমাণ করে।

এদিকে অনলাইনে নির্বাচনি প্রচারের দায়িত্বে থাকা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সহসম্পাদক, সাবিরা সুলতানার ভাসুরপুত্র ইঞ্জিনিয়ার নওয়াজীস ইসলাম রিয়েল বলেন, চৌগাছা ও ঝিকরগাছা থেকে প্রার্থী পুনর্বিবেচনার্থে দরখাস্ত দেওয়া হয়েছে, এটি চাচি (সাবিরা) শুনেছেন। কিন্তু ধানের শীষের নির্বাচনি প্রচারণায় দুই উপজেলার নেতাদের স্বতঃম্ফূর্ততা লক্ষ্যণীয়। এই আসনে নারী ও পুরুষ ভোটারের পার্থক্য খুব সামান্য। ধানের শীষের পক্ষে গ্রামে গ্রামে নারী ভোটারদের উপস্থিতি আশাব্যঞ্জক।

রিয়েল বলেন, আমরা বিএনপি পরিবার। বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে আমাদের পরিবারের সদস্যরা দেড় শতাধিক মামলার আসামি হয়েছেন। চাচি জেলও খেটেছেন। চৌগাছা ও ঝিকরগাছার নেতারা তার সঙ্গে একাট্টা। এগুলো আগামী নির্বাচনে মোটেও প্রভাব ফেলবে না।

এদিকে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী দীর্ঘদিন ইংল্যান্ডে বসবাসকারী যশোর শহরের খড়কী এলাকার বাসিন্দা ডা. মোসলেহ উদ্দীন ফরিদের পক্ষে দুই উপজেলায় করা হয়েছে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প, রাস্তা সংস্কার ইত্যাদি সেবা। তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। তবে মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকা চৌগাছা উপজেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি রহিদুল ইসলাম খান বলেন, চৌগাছার ১১ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভায় ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয় করে বিভিন্ন রাস্তা স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কার করেছি। বিএনপি প্রার্থী নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে জামায়াতের কোনো ফায়দা নেই দাবি করে তিনি বলেন, আমরা খুবই আশাবাদী।

৩ নভেম্বর সারা দেশে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওইদিন সাবিরা সুলতানাকে যশোর-২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক অর্থ সম্পাদক, উপজেলা কমিটির সভাপতি প্রয়াত নাজমুল ইসলামের স্ত্রী ও ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি।

২০১১ সালে গুম হন ঝিকরগাছা বিএনপির তরুণ নেতা নাজমুল ইসলাম। এর প্রায় চার মাস পর রাজনীতিতে সক্রিয় হন সাবিরা সুলতানা। তিনি দল থেকে মনোনয়ন পেয়ে ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পেয়েছিলেন মনোনয়ন। বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে বহু মামলার শিকার এই নেত্রী জেলও খেটেছেন।

আরও পড়ুন
এই আসনে জামায়াতে ইসলামী প্রথমে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল মাওলানা আরশাদুল আলমকে। তিনি ঝিকরগাছার অধিবাসী এবং গাজীর দরগাহ মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক। কয়েক মাস তিনি এলাকায় নির্বাচনমুখী নানা কার্যক্রমও পরিচালনা করেন। কিন্তু নির্বাচনি ডামাডোল শুরু হলে তার স্থলে দলটি প্রার্থী ঘোষণা করে ছাত্রশিবিরের ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি ডাক্তার মোসলেহ উদ্দীন ফরিদকে। শিশু হৃদ্রোগ ও ইনটেনসিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক প্রায় ৩০ বছর ধরে যুক্তরাজ্য প্রবাসী। দলীয় মনোনয়ন পেয়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তার বাবা যশোর এমএম কলেজের প্রয়াত অধ্যক্ষ, পাঠাগার আন্দোলনের নেতা প্রফেসর শরীফ হোসেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার