যেসব আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের ইঙ্গিত
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০২:১৮ পিএম
দুইশ আটত্রিশ আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। ধানের শীষ পাওয়ার পর প্রার্থীরা মাঠ ঘাট চষে বেড়াচ্ছেন। কোনো কোনো আসনে কোন্দলও দেখা দিয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থীরা মাঠ ছাড়েননি। এ নিয়ে বেশ কিছু আসনে টানাপোড়েন চলছে।
সম্ভাব্য একক প্রার্থীদের মাঠের কর্মকাণ্ড গভীরভাবে পর্যালোচনা করছে বিএনপি। বিশেষ করে মনোনয়নবঞ্চিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রার্থীরা কেমন আচরণ করছেন, সেই বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। আবার যারা ঐক্য তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছেন তাদের প্রচেষ্টায় বাধা দিলে দায়ীদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অন্যদিকে ঘোষিত আসনের মধ্যে অন্তত ২৩টিতে দেখা দিয়েছে তীব্র বিরোধ। এসব আসনে মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বলে নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের তদন্তে উঠে এসেছে। তাদের মতে, পুনর্মূল্যায়ন করা না হলে কয়েকজন বঞ্চিত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে নামার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে ৬৩ আসনের (ফাঁকা) মধ্যে বেশির ভাগ আসনে মিত্রদের ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনাও চলছে। চলতি মাসের শেষ দিকে আসন ভাগাভাগি নিয়ে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মিত্র রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক করার কথা রয়েছে। এর আগে আরও অন্তত ১১ আসনে দলীয় সম্ভাব্য একক প্রার্থী ঘোষণা দেবে বিএনপি। এগুলো প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
সূত্র জানায়, বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী তালিকাকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি আসনে তৈরি হওয়া বিরোধ গত কয়েকদিনে আরও প্রকাশ্যে এসেছে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার অংশ হিসাবে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন মাঠপর্যায়ে তাদের অবস্থান নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান দিয়ে যাচাই করা হচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কেউ কোনো মন্তব্য করছেন না। তবে যাচাই-বাছাইয়ের পর ঘোষিত প্রাথমিক প্রার্থী তালিকাতে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলটির নেতারা।
৩ নভেম্বর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য একক প্রার্থী ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সিলেটের একটি আসনে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি।
পরে মাদারীপুর-১ আসনটির সম্ভাব্য মনোনয়ন স্থগিত করা হয়। ওইদিন প্রার্থী ঘোষণা শেষে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যারা যুগপৎ আন্দোলন করেছেন, যেসব আসনে তারা আগ্রহী, সেসব আসনে কোনো প্রার্থী দেইনি। শরিক দলগুলো তাদের নাম দিলে আমরা চূড়ান্ত করব।’
তিনি জানান, ২৩৭ আসন হচ্ছে বিএনপির সম্ভাব্য তালিকা, চূড়ান্ত নয়। এখানে পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষ করে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কোনো কোনো আসনে পরিবর্তন আনা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে সম্ভাব্য একক প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই অন্তত ২৩টি আসনে ব্যাপক ক্ষোভ ও প্রতিবাদ হচ্ছে। এসব আসনে প্রার্থী পুনর্বিবেচনারও দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা। এ নিয়ে কয়েকদিন ধরে গুলশান কার্যালয়েও বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বৈঠক করছেন।
দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, একটি আসনে একাধিক প্রার্থী ছিলেন। তার মধ্যে একজনকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হয়েছে। বাকিরা বঞ্চিত হয়েছেন। এই বঞ্চিতদের তালিকায় অনেক যোগ্যরাও আছেন। যারা মনোনয়ন পেয়েছেন, তাদের দায়িত্ব হচ্ছে অন্যদের মান ভাঙিয়ে ঐক্য গড়া। সেটা করতে ব্যর্থ হলে ধানের শীষের বিজয়ের স্বার্থে প্রার্থী পরিবর্তনের মতো সিদ্ধান্ত নেবে দল। কিন্তু প্রার্থীরা ঐক্য তৈরির করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট উদ্যোগ নেওয়ার পরও অন্যরা বিরোধিতা করলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা বলেন, সব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ঘোষিত আসনের মধ্যে অন্তত ২৩টিতে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা। কয়েকজন দলীয় মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে আভাস পেয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। এসব আসনে সম্ভাব্য একক প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ চলছে। সংঘর্ষে নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে মনোনয়ন পাওয়া এম ইকবাল হোসেইন ও মনোনয়নবঞ্চিত নেতা আহম্মেদ তায়েবুর রহমানের সমর্থকরা রোববার পৌর শহরের মধ্য বাজার এলাকায় সংঘর্ষে জড়ান। এতে উভয়পক্ষের অন্তত আটজন আহত হন। আহম্মেদ তায়েবুর রহমান এলাকার প্রভাবশালী নেতা হিসাবে পরিচিত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে উপজেলা দলের এক পক্ষের অনুসারীরা। তারা আবদুল মান্নানের মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা করে নাজমুল হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর) আসনে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুল হাকিম চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে গোয়াইনঘাটের নয়াবাজারে বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী মশাল মিছিল করেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (ভোটাহাট, গোমস্তাপুর ও নাচোল) আসনেও মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে।
ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আখতারুল আলমের মনোনয়ন বাতিল করে সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুল করীম সরকারকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে গণমিছিল ও বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া এসএম ফয়সালকে পরিবর্তন করে শাম্মী আক্তারকে প্রার্থী করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন উপজেলা ও পৌর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
রংপুর-৩ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবিতে গণমিছিল হয়েছে। রংপুর মহানগরীতে এ মিছিলে অংশ নেন দলের সদস্য সচিব মাহফুজ উন নবীর সমর্থকরা। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু।
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীর মনোনয়ন পরিবর্তন মোহাম্মদ আবদুল্লাহকে দলের প্রার্থী ঘোষণার দাবিতে টেকনাফ পৌরসভায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন দলটির একাংশ। দলের মনোনয়নবঞ্চিত জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহর সমর্থকরা এই মশাল মিছিল বের করেন।
নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থীর বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন মনোনয়নবঞ্চিরা। সোমবার আড়াইহাজারে ৭ নভেম্বর উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় একই মঞ্চে মনোনয়নবঞ্চিত কেন্দ্রীয় নেতা মাহমুদুর রহমান সুমন, সাবেক সংসদ-সদস্য আতাউর রহমান আঙ্গুর ও মহিলা দলের কেন্দ্রীয় নেত্রী পারভিন আক্তারকে দেখা যায়।
মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী আমজাদ হোসেন। তার পরিবর্তে জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদকে প্রার্থী করার দাবিতে আন্দোলন করছেন নেতাকর্মীদের একাংশ।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরীকে প্রার্থী না করায় চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন সেখানকার নেতাকর্মীদের একাংশ। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে মনোনীত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
এসব আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করা হবে কিনা সেটি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে হাইকমান্ড। এদিকে ফাঁকা ৬৩ আসনের মধ্যে অন্তত ১১ আসনে দলীয় প্রার্থী শিগগিরই ঘোষণা দেওয়া বলে জানা গেছে।
বিএনপি সূত্র জানায়, এ বিষয়ে কাজ করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। এসব আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে ইতোমধ্যে কথাও বলেছেন তারা। এরমধ্যে ঢাকা-৯, ঢাকা-১৮, ঢাকা-২০, মাদারীপুর-২, গাজীপুর-১, টাঙ্গাইল-৫, চট্টগ্রাম-৬, চট্টগ্রাম-৯, চট্টগ্রাম-১১, ঝিনাইদহ-৪ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা হতে পারে শিগগিরই।