বিএনপির বাইরে মনোনয়ন দিলে গণপদত্যাগ
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:১৬ পিএম
আওয়ামী সরকারের পতনের পর উজ্জীবিত হয়ে উঠেছিল পটুয়াখালীর দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলায় বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গন। তবে সেই উপজেলা দুটির রাজনীতিতে নেমে এসেছে সুনসান নীরবতা।
দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত পটুয়াখালী-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা না হওয়ার রাগ, ক্ষোভ আর অভিমানে মনমরা হয়ে ঘরমুখী দলের নেতাকর্মীরা।
তাদের ভাষ্য মতে, ফ্যাসিস্ট সরকারের দাপট আর পুলিশ-প্রশাসনের রক্তচক্ষু দমাতে পারেনি উপজেলা বিএনপিকে। কিন্তু কেন্দ্রের এক সিদ্ধান্তে দমে গেছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। এমনকি আসনটিতে বিএনপির বাইরে অন্য কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে পদত্যাগের হিড়িক পড়বে বলে জানিয়েছেন তারা।
৩ নভেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। সেখানে বরিশাল বিভাগের ২১টির মধ্যে পাঁচটি আসন স্থগিত রাখা হয়। এতেই দশমিনা-গলাচিপার রাজনীতির আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে যায়।
এই আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য হাসান আল মামুন। যিনি একাদশ নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করে শেষ পর্যন্ত বঞ্চিত হন। ওই নির্বাচনে শেষ মুহূর্তে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ধানের শীষে ভোট করেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি।
অন্যদিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে নির্বাচন করতে চান গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। দীর্ঘদিন ধরে গুঞ্জন ছিল- পটুয়াখালী-৩ আসনটি গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে ছেড়ে দেবে বিএনপি। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে ভেঙে পড়ে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতি।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় গণঅধিকার পরিষদ ও বিএনপির দা-কুমড়ো সম্পর্ক। গত জুনে গলাচিপায় বিএনপির কার্যালয় ভাঙার অভিযোগ ওঠে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। একইভাবে নুরকে অবরুদ্ধ করার অভিযোগ ওঠে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সে সময় পরিস্থিতি শান্ত করতে দুই উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করতে হয় প্রশাসনকে।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার গলাচিপা উপজেলার চরকাজল ইউনিয়নের চরশিবায় বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারীসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৩১ জন আহত হন।
বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, স্বাধীনতার পর সরাসরি জনগণের ভোটে ও প্রতিযোগিতামূলক কোনো সংসদ নির্বাচনেই বিএনপি একবারের জন্যও আসনটিতে জয়লাভ করতে পারেনি। যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন ও জনগণের কাছে আস্থা অর্জন না করতে পারা ছিল এর অন্যতম প্রধান কারণ। তবে এই প্রথম কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুনকে কেন্দ্র করে এখানে ইতিহাস রচনার সুযোগ থাকলেও জোটের গুঞ্জনে সে স্বপ্নে ভাটা লেগেছে।
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনিকে এ আসন থেকে মনোনয়ন দিয়েছিল বিএনপি। সে সময় দশমিনা-গলাচিপায় নেতাকর্মীদের পদত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়। দলের বাইরে কাউকে মনোনয়ন দিলে ফের পদত্যাগের হিড়িক পড়বে বলে দাবি স্থানীয় নেতাকর্মীদের।
দশমিনা উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাওলাদার মো. ইফতিয়াস উদ্দিন জয় বলেন, “হাসান মামুনকে একক প্রার্থী হিসেবে গুলশান কার্যালয়ে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়েছিল। এতে দলের নেতাকর্মীরা অনেকটাই নিশ্চিত ছিলেন এই প্রথম আসনটি বিএনপির দখলে যাবে। কিন্তু আসনটিতে এখনও বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা না হওয়ায় সাধারণ মানুষ ও দলের নেতাকর্মীরা চরম হতাশ। তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দলের বাইরে জোটের কাউকে মনোনয়ন দিলে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে ধস তো নামবে। বিএনপির বাইরে মনোনয়ন দেওয়া হলে তা আমরা মেনে নেব না।”