ভোটের মাঠে জিতে আসার ঝুঁকিতে প্রায় এক ডজন নেতা
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:১৫ পিএম
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে নিজেদের দলের প্রতীক ভোটারদের চেনানোই বড় চ্যালেঞ্জ হবে বিভিন্ন ছোট দলের বড় নেতাদের। এই চ্যালেঞ্জ উতরে ভোট যুদ্ধে জয়ী হয়ে আসাটাও কঠিন হবে তাদের জন্য।
আবার যদি বড় দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকানো না যায়, তাহলে বিপদ আরও ঘনীভূত হবে। ফলে বড় দলের ছোট শরিক দলের তারকা খ্যাত রাজনৈতিক নেতাদের শেষমেশ নির্বাচনে জিতে আসা বেশ চ্যালেঞ্জ হবে। এমনটি মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ-২০২৫ এর ফলে ভোটের মাঠে জিতে আসার ঝুঁকিতে রয়েছেন এমন প্রায় এক ডজন নেতা।
নতুন আইন অনুযায়ী নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রার্থীদের নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে। এজন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ-২০২৫ এই বিধান যুক্ত করেছে সরকার।
সোমবার আইন মন্ত্রণালয় অধ্যাদেশটি গেজেট আকারে প্রকাশ করে। আর এতেই হঠাৎ করেই মহাসংকটে পড়েছে বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া ছোট দলের প্রায় এক ডজন বড় নেতা।
অনেকের মতে, জোটের স্বার্থে মাঠের রাজনীতিতে না হয় বিএনপির নেতাকর্মী এবং সমর্থকরা সবরকম সহায়তা করবেন; কিন্তু ভোটারদের প্রতীক চেনানোর যুদ্ধে কতটা সফল হবেন-তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে ছোট দলের এই বড় নেতাদের সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে সাধারণ ভোটারদের কাছে নিজেদের দলের মার্কাকে পরিচিত করে তোলা। তবে এসব দলের নেতারা চাইছেন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) নতুন করে সংশোধন করে আগের অবস্থায় রাখা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ছোট দলের বড় নেতারা এতদিন আশায় ছিলেন বিএনপির নির্বাচনি প্রতীক ধানের শীষে ভর করে নির্বাচন করবেন। ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করে জয়ী হবেন, বসবেন সংসদে। সে অনুযায়ী যার যার এলাকায় গণসংযোগসহ নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন তারা। কিন্তু নতুন আইনের ফাঁদে পড়ে তাদের সেই স্বপ্ন ভেঙে এখন খান খান। জোট হোক কিংবা এককভাবেই হোক-নির্বাচন করতে হবে দলীয় প্রতীক নিয়ে। তবে নিবন্ধন নেই এমন একাধিক ছোট দলের বড় নেতার প্রতীক যুদ্ধে খুব একটা বেগ পেতে হবে না। তারা চাইলে ধানের শীষ নিয়ে ভোটে অংশ নিতে পারবেন। ফলে তারা বেশ খানিকটা নির্ভার।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ঢাকা-৬ আসন থেকে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। এবার ঢাকা-৭ আসন থেকে নির্বাচন করার কথা রয়েছে তার। সেক্ষেত্রে তাকে আগামী নির্বাচনে গণফোরামের দলীয় প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে ভোট করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুগপৎ আন্দোলনে শরিকদের জন্য বিএনপি ঢাকার এই তিনটি আসন ফাঁকা রেখেছে। ঢাকার বাইরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে বিএনপি জোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকির। এই আসনেও দলীয় কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি বিএনপি। গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাচনি প্রতীক মাথাল। সাধারণ ভোটারদের কাছে যা একেবারেই অচেনা-অজানা। এই প্রতীক নিয়ে নির্বাচনি বৈতরণী কতটা পার হতে পারবেন জোনায়েদ সাকি-সেই প্রশ্ন এখন বড় হচ্ছে।
এছাড়া বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না নির্বাচন করবেন। তার দলের প্রতীক কেটলি। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর আরেক সাবেক ভিপি নুরুল হক পটুয়াখালী-৩ এবং দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে নির্বাচন করার কথা রয়েছে। তাদের দলের নির্বাচনি প্রতীক ট্রাক। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক চট্টগ্রাম-১৪ আসনে এবং একই দলের মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ কুমিল্লা-৭ আসনে বিএনপির সমর্থন পেতে পারেন। এলডিপির নির্বাচনি প্রতীক ছাতা।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের স্ত্রী ও দলটির সহসভাপতি তানিয়া রব লক্ষ্মীপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার দলের নির্বাচনি প্রতীক তারা। ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করতে চান বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। তার দলের প্রতীক আনারস।
এসব আসনেও বিএনপি কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে অপরিচিত প্রতীক নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট যুদ্ধে কতটা সফল হওয়া যাবে, এমন প্রশ্ন রয়েছে রাজনীতির অন্দর মহলে।
তবে নিবন্ধন নেই এমন ছোট দলের বড় নেতাদের খুব একটা সমস্যা পোহাতে হবে না। এসব প্রার্থীদের মধ্যে পিরোজপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, লক্ষ্মীপুর-১ আসনে বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র সাহাদাত হোসেন সেলিম, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা এবং নড়াইল-২ আসন থেকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) সভাপতি ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের প্রার্থী হওয়ার কথা রয়েছে। তারা চাইলে বিএনপির নির্বাচনি প্রতীক নিয়েই ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারবেন। বিএনপি তাদের আসন ফাঁকা রেখেছে।
এ প্রসঙ্গে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বুধবার বলেন, নতুন যে বিধান করা হয়েছে আমরা তা মানি না। আগে যে নিয়ম ছিল সেই নিয়ম ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা সবাই মিলে নির্বাচন কমিশনে যাব।
জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার এ প্রসঙ্গে বলেন, বিএনপির সঙ্গে আমরা যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম। আগামী নির্বাচনেও একসঙ্গে অংশগ্রহণ করব। যেহেতু আমাদের দলের নিবন্ধন নেই, তাই এক্ষেত্রে নির্বাচনি প্রতীক আমাদের জন্য বাধা হবে না।