প্রণোদনার ভাগ না পাওয়ায় কৃষি কর্মকর্তাকে পেটালেন ছাত্রদল নেতা, ভিডিও ভাইরাল
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৩৫ পিএম
সরকারি কৃষি প্রণোদনার ভাগ না পাওয়ায় শেরপুরের নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদীকে মারধরের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব রাহাত হাসান কাইয়ুমের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত কাইয়ুমের সঙ্গে ছাত্রদলকর্মী ফজলুও মারধরে অংশ নেন।
বুধবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সরকারি অফিস কক্ষে এই ঘটনা ঘটে। রাত থেকেই কৃষি কর্মকর্তাকে মারধরের সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
নকলা থানার ওসি (তদন্ত) আবুল কাশেম বলেন, ‘ওই কৃষি কর্মকর্তা মারধরের ঘটনায় নিজে বাদি হয়ে মামলা করেছেন।’
‘ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে।’
মামলার অসামিরা হলেন—নকলা পৌরসভার ধুকুরিয়া এলাকার সুরুজ মোওলার ছেলে ও উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব রাহাত হাসান কাইয়ুম (৩৫) এবং তার সহযোগী একই একালার সিরাজুল হকের ছেলে ফজলু (৩২)।
কৃষি অফিস ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদীর অফিস কক্ষে যান উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব রাহাত হাসান কাইয়ুম এবং বাইরে অপেক্ষা করছিলেন ছাত্রদলকর্মী ফজলু। কাইয়ুম কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদীর কাছে কৃষি প্রণোদনা কাকে কাকে দেওয়া হয়েছে জানতে চান এবং ছাত্রদলের ভাগ তাকে দিতে বলেন। বিষয়টি কৃষি কর্মকর্তা মোবাইলে উপজেলা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি খোরশেদুর রহমানকে জানালে কাইয়ুম আরও ক্ষিপ্ত হন। কথা বলার এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে তিনি কৃষি কর্মকর্তাকে সজোরে চড় মারেন। পরে তাকে টেনেহিঁচড়ে কক্ষের বাইরে নিয়ে কাইয়ুম ও ফজলু মিলে মারতে থাকলে আশপাশের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করেন।
কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদী বলেন, ছাত্রদল নেতা রাহাত হাসান কাইয়ুম ও ফজলু আমার সরকারি অফিসে এসে আমি এখনও কেন বদলি হচ্ছি না জিজ্ঞাসা করে এবং প্রণোদনার ভাগ চায়। বিষয়টি উপজেলা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি খোরশেদুর রহমানকে জানালে কাইয়ুম আরও ক্ষিপ্ত হয় এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক খোরশেদুর রহমান বলেন, ওই কৃষি কর্মকর্তা প্রণোদনা নিয়ে চাপ দেওয়ার বিষয়টি তাকে অবহিত করলে তিনি ছাত্রদল নেতার জেঠাতো ভাই যুবদল নেতা লোটাসকে জানান। লোটাস তখন রাহাতকে মোবাইলে শাসালে রাহাত এর জেরে এই ঘটনা ঘটায়।
জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসেম সিদ্দিকী বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। ঘটনার সত্যতা যাচাই করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শেরপুর জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাইম হাসান উজ্জ্বল বলেন, “ঘটনাটি সম্পর্কে আমি শুরুতে অবগত ছিলাম না। পরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিয়েছি। একজন কর্মরত অফিসারের গায়ে হাত তোলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ঘটনায় আমরা দলীয়ভাবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
‘যেহেতু বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়েছে, আইন অনুযায়ী তারা নিজেদের ব্যবস্থা নেবে। তবে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আমরা রাহাত হাসান কাইয়ুমের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব রাহাত হাসান কাইয়ুমের মোবাইল নম্বরে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ঘটনার পর বুধবার রাতে নকলা উপজেলা ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে কৃষি কর্তকর্তা শাহরিয়ার মোরসালিনকে মারধর করার ঘটনা অস্বীকার করা হয়েছে। একই সঙ্গে রাতে ওই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কৃষি) অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক কৃষিবিদ মো. সাহিনুল ইসলাম এক বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।
নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, কক্ষে ঢুকে মারধর ও হেনস্তার ঘটনায় দুজনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে।
শেরপুর জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আমিনুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন যে আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।