লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী আশরাফ উদ্দিন নিজান
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৫৬ এএম
লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী দুই বারের সংসদ সদস্য এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান। তবে জোট রাজনীতির কৌশলগত কারণে এখনই ঘোষণা দিচ্ছে না বিএনপি। তবে দলটির হাইকমান্ড নিশ্চিত করেছে যে, দলের কেন্দ্রীয় সহ-শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন নিজানই হচ্ছেন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী।
জানা গেছে, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব ওই আসনে মনোনয়ন চাইলেও বিএনপি তাকে দিচ্ছে না। এলাকায় তার কোনো যোগাযোগ বা যাতায়াত নেই বললেই চলে। সাধারণ ভোটারদের কাছেও নেই গ্রহণযোগ্যতা।
নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানাচ্ছে, তানিয়া রবকে ভবিষ্যত সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করা হতে পারে।
এদিকে, আশরাফ উদ্দিন নিজানকে মনোনয়ন না দেওয়া লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে প্রার্থী ঘোষণা না করার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে নিজানের মনোনয়ন ব্যাপারে তাদেরকে আশস্ত করা হয়েছে।
জানা যায়, লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে একসময় আ স ম আব্দুর রবের কিছুটা নামডাক থাকলেও এখন তাদের কোনো কর্মী ও সমর্থক নেই। নিজ দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও রব পরিবারের দূরত্ব বেড়েছে। ২০০১ সাল থেকে মোট তিন বার এই আসনের এমপি ছিলেন আশরাফ উদ্দিন নিজান। ২০০৮ সালে নির্বাচনে মাত্র ৩০টি আসনে বিএনপি জয়লাভ করলেও তার মধ্যে একটিতে জয়লাভ করেন আশরাফ উদ্দিন নিজান।
ওই সময়ে তিনি আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী অ্যাডভোকেট আব্দুর রব চৌধুরী এবং জেএসডির চেয়ারম্যান আ স ম আব্দুর রবকে পরাজিত করেন।
২০০১ সালের নির্বাচনেও তাদেরক দুজনকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেন আশরাফ উদ্দিন নিজান।
নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি এলাকার উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখেন। রামগতি উপজেলাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে উন্নয়নবঞ্চিত উত্তরাঞ্চলকে নিয়ে কমলনগর উপজেলা নামের নতুন উপজেলায় রূপদান করেন নিজান।
নদী ভাঙনকবলিত ও উন্নয়নবঞ্চিত রামগতি ও কমলনগর উপজেলার রাস্তাঘাট, আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন, চর-অধ্যুষিত এই দুই উপজেলায় নতুন স্কুল, কলেজ, মাদরাসা স্থাপন করে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। লক্ষ্মীপুর টু আলেকজান্ডার সড়ক প্রশস্ত ও সংস্কার, আলেকজান্ডার টু নোয়াখালীর সোনাপুর পর্যন্ত রাস্তা প্রশস্তকরণ ও সংস্কারসহ দুই উপজেলায় শত শত কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাকাকরণ, নতুন রাস্তা নির্মাণসহ পুল কালভার্ট নির্মাণ করার মধ্য দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করেন।
স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, বিগত সময়ে আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে জোরালো ভুমিকা রেখেছেন আশরাফ উদ্দিন নিজান। ২০০১ ও ২০০৮ সালে সংসদে তার অবদানও ছিল উল্লেখ্যযোগ্য। আশরাফ উদ্দিন নিজান দলের নেতা-কর্মীদের সুদিনে দুর্দিনে তাদের আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন এবং তাদের পাশে এখনো আছেন।
দলীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, বিগত ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট সরকার আমলে রামগতি ও কমলনগর উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১৩ হাজার ৫০০ নেতা-কর্মী হামলা মামলার শিকার হন। সাড়ে ৫ হাজারের মতো নেতা-কর্মী জেল খেটেছেন। এ সময় চারজন কর্মী নিহত হন। কয়েক হাজার নেতা-কর্মী এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে জীবনযাপন করেছেন। এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান তাদের মামলা ও জীবনযাপনের জন্য খরচ বহনের পাশাপাশি পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে তাদের সহায়তা করেছেন। নিহতদের পরিবারকে পুনঃর্বাসন করেছেন।
আওয়ামী সরকারে পতনের পর থেকে তৃণমুল নেতা-কর্মীদের সংগঠিত, সাধারণ ভোটার এবং নারী ভোটারদেরকে কাছে প্রচার ধানের শীষে ভোট দিতে উৎসাহিত করার জন্য উঠান বৈঠক, মতবিনিময়সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। আশরাফ উদ্দিন নিজান। পাশাপাশি রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফাও ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। বিগত বন্যায় তিনি প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের হাতে ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক সহায়তা তুলে দিয়েছেন।
২০১৮ সালের দলীয় নেতা-কর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে জোট শরিক হিসেবে আ স ম আব্দুর বরকে মনোনয়ন দিলেও তিনি জামানত হারান। কমলনগর, রামগতি সংসদীয় আসনে আশরাফ উদ্দিন নিজানের বাইরে কাউকে বিএনপি বা জোটের প্রার্থী হিসেবে মানতে নারাজ বিএনপি নেতা-কর্মীরা।
রামগতি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, দুর্দিনে আশরাফ উদ্দিন নিজান আমাদের পাশে ছিলেন। তাকে ছাড়া আমরা অন্য কারও নির্বাচন করব না। অন্য কাউকে প্রার্থী হিসেবে মেনে নেব না। এটা আমাদের পরিষ্কার কথা। কেন্দ্র আমাদের কথা না শুনলে আমরাও কেন্দ্রের কথা শুনতে বাধ্য থাকব না।
কমলনগর উপজেলার চরলেরঞ্চ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. মামুনুর রশিদ বলেন, আশরাফ উদ্দিন নিজান দলীয় নেতা-কর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের পাশে থেকে বিপদে আপদে সাহায্য-সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। তিনি কমলনগর ও রামগতি এলাকার মানুষের নিকট জনপ্রিয় নেতা। আশরাফ উদ্দিন নিজানের বাইরে সংসদ নির্বাচনে কোনো প্রার্থী মেনে নেব না আমরা। এখানে অন্য কোনো দলের বা জোটের প্রার্থী দাঁড় করালে দলের ভরাডুবি হবে। তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে কেন্দ্র কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেই সিদ্ধান্ত তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা মেনে নেবে না।
কমলনগর উপজেলা যুবদলের সদস্য মোশাররফ হোসেন হাওলাদার বলেন, আমরা ধানের শীষের হিসেবে বুঝি আশাফ উদ্দিন নিজান। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে তাকে দ্রুত দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করলে নেতা-কর্মীরা হতাশা মুক্ত হবে।