সিলেটের ৫টি আসন বিএনপি নাকি জোটের জন্য সংরক্ষিত?
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:১২ এএম
বিএনপির ঘোষিত মনোনয়ন তালিকা প্রকাশের পর সিলেটে উচ্ছাস, হতাশা ও তৎপরতার মিশ্র স্রোত বইছে। যারা দলীয় টিকিট পেয়েছেন তারা আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছেন। আর বঞ্চিতরা কেউ কেউ পুনর্বিবেচনার আশায় এখনো জোর লবিংয়ে। পাশাপাশি জোটগত ভারসাম্য ও মনোনয়নপ্রাপ্তদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও চলছে নানা আলোচনা।
এরইমধ্যে সিলেটের মনোনয়ন বঞ্চিতরা গাড়িতে আগুন দিয়েছে এমন একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। অনুসন্ধান ও ফ্যাক্টচেক বলছে এটা অনেক আগের পুরনো ভিডিও। আড়ালের ষড়যন্ত্রীমহল অসৎ উদ্দেশ্যে ভিডিওটি ভাইরাল করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিএনপি মনোনয়ন ঘোষণায় বাদ পড়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। বহুল আলোচিত আরিফ মঙ্গলবার সবাই বিমানে ঢাকায় গেছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, তিনি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানাতে মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
তিনি বলেন, দলই আমার বড় পরিবার, আমি দায়িত্বে না থাকলেও দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলব, তবে চাই সিলেট-১ আসনে ধানের শীষের বিজয়।
এদিকে সিলেট বিভাগের ১৯ সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৪টি আসনের প্রার্থী ঘোষণা করলেও বাকি ৫টি আসনের প্রার্থী ঘোষণা হয়নি। সেসব আসনে বিএনপি নাকি জোটের জন্য সংরক্ষিত এব্যাপারে স্পষ্ট কিছুই বলতে চাচ্ছেন না দলের দায়িত্বশীলরা। তবে এসব আসনের মনোনয়ন ভাগিয়ে আনতে শেষ মূহুর্তের সর্বশেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন ওসব আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
কেউ বিদেশে থাকা প্রভাবশালী নেতাদের সহায়তা চাইছেন, কেউ আবার মনোনয়ন বোর্ডে ঘন ঘন যোগাযোগ করছেন।
দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর সিলেট-১(নগর-সদর) আসনের প্রার্থী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির মঙ্গলবার দিনভর নগর ও সদর এলাকায় গণসংযোগে অংশ নেন।
তিনি বলেন, সিলেট নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনে আমরা আধুনিক পরিকল্পনা গ্রহণ করব— পার্ক স্থাপন, রাস্তার উন্নয়ন, সবুজ বেষ্টনী ও লাইটিংয়ের মাধ্যমে শহরকে আধুনিক রূপে গড়ে তুলব।
তিনি আরও বলেন, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হবে, সিলেটের ঐতিহাসিক স্থান, চা-বাগান ও হাওরসমূহের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ আমাদের অঙ্গীকার।
সিলেট-২ আসনে মনোনীত প্রার্থী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা গতকাল মঙ্গলবার সকালে হযরত শাহজালাল (র.) ও শাহপরান (র.) মাজার জিয়ারত করেন। এরপর থেকে আনুষ্ঠনিক গণসংযোগ শুরু করেন। তিনি বলেন, সিলেটের মানুষ পরিবর্তন চায়, গণতন্ত্র চায়। ধানের শীষ গণমানুষের জয়ের প্রতীক, বঞ্চিতদেরও সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামতে চাই।
সিলেট-৩ আসনে মনোনয়নপ্রাপ্ত, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক গতকাল মঙ্গলবার মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রিবার্ষিক নির্বাচনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক মোড়, ধানের শীষের বিজয় মানে মানুষের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়া।
সিলেট-৪ (কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট) এবং সিলেট-৫ আসনটির প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। এই দুটি আসনের মধ্যে সিলেট ৪ আসনে সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে নির্বাচন করার জন্য কেন্দ্র চাপ দিলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। সর্বশেষ জোটের ভারসাম্য রক্ষায় এই দুটি আসনই ইসলামপন্থি দুটি দলকে ছাড় দিতে পারে বিএনপি।
সিলেট-৬ আসনের প্রার্থী এমরান আহমদ চৌধুরী মনোনয়ন প্রাপ্তির পর দলের সিনিয়র নেতা ও একই আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীসহ অন্যান্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছে ছুটে যান এবং দোয়া চান। তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান, প্রার্থী নয়, প্রতীক ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে অবশ্যই সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। এজন্য সবার পরামর্শ চান তিনি।
সিলেট-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে ঢাকায় ডেকে নেওয়া হয় সাবেক মেয়র ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরীকে। মঙ্গলবার সকালে তিনি জরুরি তলবে ঢাকায় যান এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিকল্প প্রস্তাব দিলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
আরিফুল হক বলেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, এর বাইরে আমার কোনো মন্তব্য নেই। তিনি জানান, তিনি ‘সিলেটের আরিফ’ হয়েই বাঁচতে চান। আরিফুলের ঘনিষ্ঠরা জানান, দীর্ঘদিন প্রচার চালানোয় তিনি মনোনয়ন নিয়ে আশাবাদী ছিলেন, তাই বঞ্চনায় হতাশ হয়েছেন। সিলেট-৪ আসনে প্রার্থী হওয়ার পরামর্শ দিলেও তিনি তা নাকচ করেছেন।
জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, অভিজ্ঞতা ও পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্যের কারণে সিলেট-১ আসনে আবারও মনোনয়ন দেওয়া হয় খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরকে। তিনি ২০১৮ সালেও একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
অপরদিকে, সিলেটে মনোনয়ন বঞ্চিত বিএনপি নেতার অনুসারীরা বাসে আগুন দিয়েছে এমন একটি ভিডিও প্রচার হওয়ায় তোলপাড় হয়েছে। ‘সিলেটে মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপি প্রার্থীর অনুসারীরা বিআরটিসি বাসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে’ শীর্ষক ক্যাপশনসহ ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি অনুসন্ধানে জানা গেছে, আলোচিত ভিডিওটির সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো ঘটনার সম্পর্ক নেই। ভিডিওটি ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছিল। ভিডিওটির ক্যাপশন অনুযায়ী, সিলেট নগরীর মালনীছড়া সড়কে একটি যাত্রীবাহী বিআরটিসি বাসে হঠাৎ আগুন ধরে যাওয়ার। সেটাকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক রূপ দিয়ে প্রচার করা হয়েছে।
স্থানীয় রাজনীতিকরা বলছেন, বিএনপি এবার সিলেট বিভাগে মাঠে নামছে সংগঠন পুনর্গঠন ও ঘুরে দাঁড়ানোর কৌশল নিয়ে। মনোনয়নপ্রাপ্তদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়াতে ও সংগঠনের ভেতরে ঐক্য ধরে রাখতে। দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, আমরা জানি, বঞ্চিতরা কষ্ট পেয়েছেন, তবে তাদের যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে, যেন মাঠে নিরুৎসাহ না হন।