আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার ৯ নম্বর আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা। দলটির প্রাথমিক খসড়া প্রার্থী তালিকায় তার নাম রয়েছে বলে এনসিপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
দলীয় সূত্র জানায়, যদিও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়নি, তবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সংশ্লিষ্ট আসনে জনসংযোগ ও নির্বাচনি প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর এনসিপি আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবে।
রোববার রাজধানীর দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেব। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, জুলাই সনদ নিয়ে জটিলতা কাটলেও যথাসময়ে নির্বাচন হবে কিনা, সে বিষয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
দলীয় খসড়া তালিকা অনুযায়ী, আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ঢাকা-১১ আসনে, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ঢাকা-১৮ আসনে, যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব ঢাকা-১৪ আসনে, আকরাম হুসেইন ঢাকা-১৩ আসনে, খান মুহাম্মদ মুরসালীন ঢাকা-৬ আসনে, ইমরান হোসেন ঢাকা-২ আসনে এবং সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা লড়বেন ঢাকা-৯ আসনে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন এক এনসিপি নেতা যুগান্তরকে বলেন, কৌশলগত কারণে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা এখনই প্রকাশ করা হচ্ছে না। সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বিএনপি তাদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। দলটির মনোনয়নবঞ্চিতরা এনসিপিতে যোগ দিয়ে মনোনয়ন চাইতে পারে। ইতোমধ্যে এমন দুই ডজনেরও বেশি বিএনপি নেতা মনোনয়নের বিষয়ে এনসিপির হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
জানতে চাইলে এনসিপির আরেক নেতা বলেন, দলগুলো প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করলেও আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বড় ধরনের শঙ্কা এখনো রয়ে গেছে। কারণ দলগুলো জুলাই সনদের বিষয়ে পরস্পর দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। দ্বন্দ্ব নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দেওয়া হলেও এতে হয়তো তেমন কোনো কাজ হবে না। এছাড়া প্রতিবেশী একটি দেশের পক্ষ থেকেও এখানে নির্বাচন বিলম্বিত করতে নানা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
সরকারের একটা অংশ নির্বাচন ভন্ডুল করতে চায়-এনসিপি : সরকারের ভেতরের কোনো একটা অংশ নির্বাচনকে ভন্ডুল করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব অনুযায়ী জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করেনি সরকার। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ দিতে হবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেই।
সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি নেতারা এসব কথা বলেন। তারা অভিযোগ করেন, গণভোটসহ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকার নিজেরা উদ্যোগ না নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ঠেলে দিয়েছে, যা বাস্তবসম্মত নয়।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, সরকার সনদ নিয়ে সাপলুডু খেলছে। এমনকি জুলাই সনদ নিয়ে সরকারের ভেতরেই একটি পক্ষ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা চালাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থী তালিকা হতাশাজনক। অধিকাংশই গডফাদার। আমরা আশা করেছিলাম, গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে তারা কিছু ভালো প্রার্থী দেবে। কিন্তু দেখা গেল কৌশলে ছাত্রদল ও যুবদলসহ তরুণদের খারিজ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারেক রহমান দেশে আসছেন, শুনে খুশি হলাম। আরও আগেই আসা উচিত ছিল। আমরা একসঙ্গে বসতে চাই। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাকেও অভিনন্দন জানাই। গণ-অভ্যুত্থান না হলে হয়তো তিনি নির্বাচন করার সুযোগ পেতেন না।’ সংস্কার বাস্তবায়নে তাকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে সম্প্রতি বিএনপি নেতার করা মামলাকে মিথ্যা মামলা অভিহিত করে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে এনসিপি’র যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তি কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি।
সোমবার জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম এবং সদস্য সচিব ডা. জাহেদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর সর্বদা সত্য ও যুক্তিনির্ভর রাজনীতির পক্ষে অবস্থান নিয়ে আসছেন। তার বক্তব্য জনগণের অধিকার ও রাজনৈতিক শুদ্ধতার প্রতি দায়বদ্ধতার প্রকাশ। কিন্তু মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে গ্রেফতার ও হেনস্তার চেষ্টা করা হচ্ছে। তরুণদের রাজনীতিকে ভয় দেখানোর একটি অপচেষ্টা।