Logo
Logo
×

রাজনীতি

৩৯ বছর আগে হারানো মসনদ ফেরাতে যাদের মনোনয়ন দিল বিএনপি

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৩১ এএম

৩৯ বছর আগে হারানো মসনদ ফেরাতে যাদের মনোনয়ন দিল বিএনপি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নামের সম্ভাব্য তালিকা ঘোষণা করেছে বিএনপি। এ তালিকায় ৩৯ বছর আগে হারানো রংপুরের সংসদীয় ছয়টি আসন পুনরুদ্ধারে ধানের শীষ প্রতীকে লড়বেন স্থানীয় ছয় নেতা। 

সোমবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রংপুর-১ আসনে (গংগাচড়া-সিটি কর্পোরেশন আংশিক) অংশ নেবেন গংগাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের তিনবারের সাবেক চেয়ারম্যান এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সদস্য মোকাররম হোসেন সুজন। তিনি দলের প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে গংগাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। সর্বশেষ বিগত পতিত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ২০২৪ সালের দলের নির্দেশনা উপেক্ষা করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। সম্প্রতি দল তার বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করে।

গঙ্গাচড়া ও সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ৮ নাম্বার ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত রংপুর-১ আসন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রার্থী মশিউর রহমান যাদু এই আসনে জয়লাভ করেন। পরে তার মৃত্যুতে ছেলে শফিকুল গনি স্বপন উপ-নির্বাচনে ওই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এবার ৪০ বছর পর হারানো এই আসনটি উদ্ধারে একাধিক নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশা করলে দল থেকে মোকাররম হোসেন সুজনকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

জানতে চাইলে মোকাররম হোসেন সুজন বলেন, বিএনপি স্থানীয় পর্যায়ে সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ। যদি কোনো রকম ষড়যন্ত্র ছাড়া নির্বাচন হয় এবং সাধারণ মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পায় তাহলে বিএনপির জয় শতভাগ নিশ্চিত।

রংপুর-২ আসনে (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) লড়বেন সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকার। তিনি ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে লাঙ্গল প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে ভোট করেছিলেন। পরে বিএনপিতে যোগ দেন।

জেলার বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে রংপুর-২ আসন গঠিত। ১৯৭৯ সালে এই আসনে বিএনপি প্রার্থী মোহম্মদ ইলিয়াছ বিজয়ী হন। এবার এই আসনে আশার আলো দেখছে বিএনপি।

রংপুর-৩ আসনে (সিটি কর্পোরেশন-সদর উপজেলার আংশিক) ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করবেন সামসুজ্জামান সামু। তিনি রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক।

রংপুর সিটি করপোরেশনের ৯ থেকে ৩৩ নাম্বার ওয়ার্ড ও সদর উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রংপুর-৩ আসন। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে এই আসনে বিএনপি শুধুমাত্র একবার জয় পেয়েছে। তাও আবার ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে। এখানে ধানের শীষ প্রতীকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন প্রয়াত অ্যাডভোকেট রেজাউল হক সরকার রানা।

এবার এই আসনে নিজেদের অবস্থান বেশ শক্ত মনে করছে বিএনপি। দল থেকে প্রার্থী ঘোষণার পর অনুভূতি জানিয়ে সামসুজ্জামান সামু বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার লক্ষে বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছি। সবদিক বিবেচনা করে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আশা করছি, আগামী নির্বাচনে রংপুরে বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে।

রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) আসন থেকে লড়বেন কাউনিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা। তার মাধ্যমে এবার হারানো আসনটি উদ্ধারে সুবর্ণ সুযোগ দেখছে বিএনপি।

কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত রংপুর-৪ আসন। ১৯৭৯ সালে এই আসনে বিএনপি প্রার্থী রহিম উদ্দিন ভরনা জয় পেয়েছিল। এছাড়া বাকি নির্বাচনগুলোতে জেলার অন্যান্য আসনগুলোর মতো এখানে কোমর সোজা করতে পারেনি বিএনপি।

জানতে চাইলে এমদাদুল হক ভরসা বলেন, জিয়াউর রহমানের শাসনামলে আমার বাবা রহিম উদ্দিন ভরসা বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর আসনটি জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। দীর্ঘসময় ধরে এই আসনের মানুষ কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। আগামী নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয় তাহলে এই আসন পুনরুদ্ধার হবে বলে জানান তিনি।

রংপুর-৫ আসনে (মিঠাপুকুর) ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মিঠাপুকুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক গোলাম রব্বানীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী অধ্যুষিত এ আসনটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন সাধারণ ভোটাররা।

মিঠাপুকুর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রংপুর-৫ আসন। স্বাধীনতার পর অধিকাংশ সময় এই আসন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। বিএনপি থেকে ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার গোলাম মোস্তফা বাটুল একবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। 

এবার সেই হারানো আসন পুনরুদ্ধারে চমক দেখাতে চান অধ্যাপক গোলাম রব্বানী। প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই আসন দীর্ঘদিন ধরে পতিত আওয়ামী সরকার ও তার দোসরদের দখলে ছিল। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে অন্যায়ভাবে তারা এতদিন ক্ষমতা দখল করে ছিল। দলের কর্মী হিসেবে আমি এ আসন থেকে মনোনীত হয়েছি। আশা করছি, এবার সম্মিলিতভাবে আমরা ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে পারব।

রংপুর-৬ আসনে (পীরগঞ্জ) নির্বাচন করবেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম। এ আসনে দীর্ঘদিন ধরে তিনি প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্য দলের প্রার্থীদের তেমন তৎপরতা নেই।

পীরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন-৬। এই আসনে রয়েছে ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা। নানা কারণে এ আসনটি রংপুর অঞ্চলের মধ্যে বেশ আলোচিত। দল গঠনের পর থেকে টানা দুই দশক আসনটি দখলে ছিল জাতীয় পার্টির। এরপর ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দখলে ছিল এই আসন। এই আসনেও বিএনপি শুধু একবারই বিজয়ী হয়েছিল। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে এখানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন মতিয়ার রহমান চৌধুরী। 

জানতে চাইলে রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন। মানুষ ভোট প্রদানের সুযোগ পেলে যারাই প্রতিদ্বন্দ্বী হোক না কেন আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার