নির্বাচনে যে আসনে লড়বেন তারেক রহমান
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৪৯ পিএম
প্রায় দুই দশক ধরে দল ও নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকলেও তিনি কখনও সরাসরি ভোটের মাঠে প্রার্থী হননি। তবে এবার নিজেই নির্বাচনে দাঁড়ানোর ইচ্ছা পোষণ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
অক্টোবরের শুরুতে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, জি, ইনশাআল্লাহ।
তারেক রহমান কোন আসনে প্রার্থী হবেন-সে বিষয়ে বিএনপি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা দেয়নি। তবে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ধারণা করা যায়, বাবার বাড়ির এলাকা বগুড়া থেকেই তিনি নির্বাচনে দাঁড়াবেন।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়া বিএনপির 'ঘাঁটি' হিসেবে পরিচিত দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ১৯৯১ সাল থেকে বগুড়ার দুটি আসনে নির্বাচন করে আসছেন। বগুড়া-৬ (সদর) ও বগুড়া-৭ (গাবতলী ও শাহজাহানপুর) আসনে তিনি কখনও পরাজয়ের মুখ দেখেননি।
বগুড়া-৭ আসনে বিগত ১২টি নির্বাচনের মধ্যে বিএনপি ছয়বার (খালেদা জিয়া পাঁচবার), জাতীয় পার্টি তিনবার, আওয়ামী লীগ দুবার ও স্বতন্ত্র (বিএনপির সমর্থনে) প্রার্থী একবার জয়ী হয়েছে।
তারেক রহমান বগুড়ার কোন আসনে প্রার্থী হবেন-তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে বগুড়া-৭ আসনে তাকে প্রার্থী হিসেবে পেতে চান দলের তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী। বগুড়ায় বিএনপির তৃণমূল নেতাদের অনেকের কাছেই তারেক রহমান ‘ভাইয়া’ হিসেবে পরিচিত।
খালেদা জিয়া চারবার বগুড়া-৬ আসনে নির্বাচন করে জয়লাভ করেছেন। বগুড়া-৭ আসনে চারবারের মধ্যে একবার (২০০৮ সালের উপ-নির্বাচনে) মওদুদ আহমদ ও বাকি তিনবার (১৯৯১, ১৯৯৬-জুন ও ২০০১ সালে) হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু জয়ী হন।
সাবেক সংসদ সদস্য লালু বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান বগুড়া-৭ আসন থেকেই নির্বাচন করবেন। আমরা তার পক্ষে নিরবচ্ছিন্ন প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। আমি ম্যাডামকেও (খালেদা জিয়া) এই বিষয়ে অনুরোধ করেছি।
গত ১১ অক্টোবর ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বগুড়ার সাতটি আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন তারেক রহমান। সভায় ২২ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উপস্থিত এক নেতা বলেন, সভার তিন দিন পর পাঁচজন নেতাকে ফোন করে নির্বাচনি প্রচার জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দী-সোনাতলা) আসনে রফিকুল ইসলাম, বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) মীর শাহে আলম, বগুড়া-৩ (আদমদিঘী-দুপচাচিয়া) মজিদ তালুকদার, বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দিগ্রাম) মোশাররফ হোসেন এবং বগুড়া-৫ জি এম সিরাজকে ফোন করা হয়েছে।
তবে বগুড়া-৬ (সদর) ও বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাহজাহানপুর) আসনের ব্যাপারে কাউকে কিছু না বলায় নেতাকর্মীরা ধারণা করছেন, হয়তো বগুড়া-৬ আসনে খালেদা জিয়া ও বগুড়া-৭ আসনে তারেক রহমান প্রার্থী হবেন।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি মো. রেজাউল করিম বাদশা বলেন, ওই সভার তিন দিন পর পাঁচ নেতাকে ফোন দিয়ে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে এবং মনোনয়ন প্রত্যাশী সবাইকে নিয়ে মাঠে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করতে বলেছেন। বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসন বিষয়ে কোনো কিছু কাউকে বলা হয়নি। দুটি আসন থাকবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের জন্য।
২০১৮ সালে খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের কারণে বিএনপি বগুড়া-৭ আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি। তখন স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম বাবলুকে সমর্থন দিয়ে বিএনপি, যিনি জয়লাভও করেছিলেন।
গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোর্শেদ মিল্টন বলেন, আমরা মাঠে-ময়দানে তারেক রহমানের জন্য কাজ করছি। তারেক রহমানের পক্ষে ধানের শীষে ভোট চেয়ে যাচ্ছি। তিনি আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী হবেন-এটা আমাদের বগুড়া তথা গাবতলীর গৌরব।
গাবতলী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক নুতন বলেন, আমরা ভাইয়ার পক্ষে ধানের শীষে ভোট চাইতে দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছি। মানুষের আগ্রহ দেখে মনে হচ্ছে অন্য প্রার্থীর জামানত থাকবে না।
গাবতলী উপজেলার মহিষাবান এলাকার ভ্যানচালক জসিম উদ্দিন বলেন, এখানে সবসময় জিয়া পরিবারের প্রাধান্য রয়েছে। যদি ভালোভাবে নির্বাচন হয়, তাহলে হয়তো এখানে সেই পরিবারের কেউ প্রার্থী হবেন।
স্থানীয়রা মনে করেন, সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি বগুড়ায় বড় ব্যবধানে জয়ী হবে।