জামায়াতের তিনশ আসনের একটিতে মনোমালিন্য

জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:১৯ এএম

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী বাছাই ও ঘোষণা শুরু করেছে। তবে এক্ষেত্রে একধাপ এগিয়ে আছে জামায়াতে ইসলামী। ইতোমধ্যেই দলটি ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনে দলটির কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত চরমভাবে নির্যাতনের শিকার হলেও জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এই স্বল্প সময়ে তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। নানা হিসাবের যোগফল মেলাতেই তরুণ নেতৃত্বকেই সামনে আনতে চায় দলটি।
এবার জামায়াতের মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের আধিক্য দেখা যায়। তালিকায় সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, সেক্রেটারি ও নেতারা যেমন রয়েছেন, তেমনি জেলা পর্যায়ের ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাও মনোনয়ন পেয়েছেন। দলটির একটি সূত্র জানায়, অন্তত ৫০ জন তরুণ প্রার্থীকে সবুজ সংকেত দেয়া হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে শিক্ষা, সমাজসেবা ও উদ্যোক্তা কার্যক্রমে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে নিজ নিজ এলাকায় তারা পরিচিত মুখ। ইতোমধ্যেই এসব তরুণ সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে নেমে গেছেন।
জামায়াতের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলছেন, তরুণদের জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে, বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে। তরুণরা পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতৃত্ব তৈরি করছে, যেখানে পুরনো বিতর্ক বা অভিযোগের জায়গা নেই।
প্রবীণদের সরিয়ে দিয়ে তরুণদের সুযোগ করে দেয়ায় অনেক নেতাই বিষয়টি সহজেই মেনে নিতে পারেননি। তবে দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সরে যেতে বাধ্য হন। ৩০০ আসনে জামায়াত মনোনীত যে কয়েকটি আসনে মতপার্থক্য তৈরি হয়ে তা এক পর্যায়ে সমাধান হলেও একমাত্র ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনের সমাধানটি সহজেই সম্ভব হয়নি। অতীতে একাধিকবার এই আসন থেকে নির্বাচন করেছেন জেলা জামায়াত আমির অধ্যাপক জসিম উদ্দিন। এবার মনোনয়ন না পেয়ে দলের সঙ্গে দূরত্ব শুরু হয়। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত না মানা ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে এক পর্যায়ে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। যা জামায়াতের রাজনীতিতে বিরল ঘটনা।
জামায়াতের প্রার্থী বাছাই ও মনোনয়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, আমরা প্রার্থী যাচাইয়ের ক্ষেত্রে দুইভাবে জরিপ করি। প্রথমটি হলো তৃণমূলে যার গ্রহণযোগ্যতা বেশি, আর দ্বিতীয়টি সাধারণ ভোটারদের মধ্যে। এই দুটি জরিপের ফল বিশ্লেষণ করেই আমরা প্রার্থী ঘোষণা করি। ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে প্রার্থী বাছাই করার প্রক্রিয়াটিও একইভাবে করা হয়েছে।
তরুণ প্রার্থীদের গুরুত্ব দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী তরুণ প্রার্থীসহ আমাদের সব প্রার্থীই বিজয়ী হবেন। সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও তরুণদের নিয়ে ইতিবাচক সাড়া ও উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেজন্যই জামায়াত এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে।
ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে মনোনয়ন পাওয়া জামায়াতের তরুণ প্রার্থী জেলা নায়েবে আমির কামরুল হাসান মিলন বলেন, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। এটি সংগঠনের সিদ্ধান্ত এবং আমি সেই দায়িত্ব পালন করছি। তবে এলাকায় আগে থেকেই সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড, শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে উদ্যোগ এবং এলাকার উন্নয়নমূলক কাজে সক্রিয় ছিলাম। ফলে আমাকে প্রার্থী করার বিষয়ে এলাকাবাসী আশাবাদী ছিলেন। আর দলও সেই বিষয়টি মূল্যায়ন করেছে বলেই আমি মনে করি।
তিনি বলেন, সাবেক জেলা আমিরকে মনোনয়ন না দেয়ার বিষয়টি সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার অংশ। কিছু জায়গায় জসিম উদ্দিন সাহেবের সমর্থকরা বিক্ষোভ করেছেন এমন খবর পেয়েছি, তবে সেখানে আমাদের দায়িত্বশীল সংগঠনের কেউ অংশ নেননি। মূলত বাইরের কিছু মানুষ বা স্থানীয় আত্মীয়-স্বজনই এতে জড়িত ছিলেন।
কামরুল হাসান মিলন বলেন, গত ২০ বছরে ময়মনসিংহ শহর ও ফুলবড়িয়া উপজেলায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উন্নয়নে যেসব কাজ করেছি তা বিবেচনায় নিয়ে মানুষ বিপুল ভোটের মাধ্যমে আমাকে জয়ী করবে বলে আশা করি। গত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী আচরণে মানুষ এখন বুঝতে শুরু করেছে অন্য রাজনীতির সঙ্গে জামায়াতের পার্থক্য কোথায়। মানুষের বিবেকের বিবেচনাতেই এবার দাঁড়িপাল্লায় গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। মাঠ ঘুরে দেখা গেছে যারা কখনোই জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দেয়নি, এবার তারাও দাঁড়িপাল্লার পক্ষে ভোট দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাধারণ জনগণ, সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী চায় পরিবর্তন।