Logo
Logo
×

রাজনীতি

এবার মিত্রদের যে ৪০ আসনে ছাড় দিতে পারে বিএনপি

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৫৫ পিএম

এবার মিত্রদের যে ৪০ আসনে ছাড় দিতে পারে  বিএনপি

বিএনপির মিত্রদের আসন ছাড় নিয়ে এখন চলছে দরকষাকষি ও আলোচনা। তবে বিএনপি এবার মিত্রদের সর্বোচ্চ ৪০ আসন ছাড় দিতে পারে। সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

সূত্র থেকে জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত মিত্ররা ২১৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা জমা দিয়েছে দলটির কাছে। এর মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ ১৩৮, ১২ দলীয় জোট ২১, এগারো দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ৯, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি ১৩, জাতীয় পার্টি-বিজেপি ৫, গণফোরাম ১৫, লেবার পার্টি ৬ ও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম ১০টি আসনে তাদের প্রার্থীর নাম দিয়েছে। তবে কৌশলের অংশ হিসাবে কোনো কোনো দল সরাসরি লন্ডনে দেখা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা দিয়েছে। 

সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরিকদের ৫৮ আসনে ছাড় দিয়েছিল বিএনপি। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীকে ২২ আসন ও অন্যদের ৩৬ আসন ছাড় দেয় দলটি। সূত্রমতে, এবার জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট বা সমঝোতা করবে না দলটি। তাই অন্য মিত্র দলগুলোর নেতাদের নিজ আসনে জনপ্রিয়তা কেমন-সেই খোঁজ নিচ্ছে দলটির একাধিক টিম। এর মধ্যে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে শরিকদের (জামায়াত ছাড়া) ছাড় দেওয়া আসনগুলোর বেশির ভাগই এবারও ছাড় দেওয়া হতে পারে। কয়েকজনকে মৌখিকভাবে নিজ আসনে কাজ করার জন্য ইতোমধ্যে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে বলা হয়েছে। তবে মিত্রদের মধ্যে যাদের এবার মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হবে না, তাদের সংসদের উচ্চকক্ষে মূল্যায়নের চেষ্টা করবে বিএনপি।

এদিকে মিত্রদের আসন ছাড় দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মিত্রদের সঙ্গে নিয়েই নির্বাচন ও রাষ্ট্র গঠনের কথা বলেছেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘প্রায় ৬৪টি রাজনৈতিক দল বিগত স্বৈরাচারের সময় যার যার অবস্থান থেকে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে। আমাদের সঙ্গে রাজপথের আন্দোলনে যে দলগুলোকে পেয়েছি, আমরা চাই সবাইকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে। সবার মতামত নিয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে চাই। কমবেশি সবাইকে নিয়ে রাষ্ট্র গঠন করতে চাই।’

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মিত্রদের কত আসন ছাড়বে, সেটা আলোচনা ও বিবেচনার বিষয়। আমরা এমন আসনেই শরিকদের প্রার্থী দেব, যেসব আসনে জয়লাভের বাস্তব সম্ভাবনা রয়েছে। আলোচনায় সেই দিকটিই আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।’

আরও পড়ুন
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মিত্রদের কয়টি আসন ছাড় দেবে বিএনপি তা চলতি মাসেই জানা যাবে। যাদের ছাড় দেবে তাদের বিএনপির হাইকমান্ড থেকে ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়া হবে। পরবর্তী সময়ে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর প্রার্থী মনোনয়নের যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। তবে সূত্র জানায়, মিত্ররা অনেক আসন চাইলেও বিএনপি তা দিতে পারবে না। কারণ এবার বিএনপির নিজেদের প্রার্থী অনেক। মিত্ররা বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত আসন চাইলে নাও পেতে পারেন। আসন ভাগাভাগি নিয়ে মিত্রদের সঙ্গে বিএনপির মতবিরোধ হওয়ারও আশঙ্কা দেখছেন কেউ কেউ।

সূত্র জানায়, পাঁচটি জরিপ ও নিজস্ব উইং থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পিরোজপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, লক্ষ্মীপুর-১ আসনে বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ঢাকা-৬ আসনে অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ঢাকা-১৩ আসনে এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, ঢাকা-১৭ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, চট্টগ্রাম-১৪ আসনে এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক, কুমিল্লা-৭ আসনে দলটির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, নড়াইল-২ আসনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদকে শিগগিরই সবুজ সংকেত দিতে পারেন। অবশ্য এর মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে আগেই কয়েকজনকে মৌখিকভাবে নিজ আসনে গণসংযোগ চালানোর কথা বলা হয়েছে।

মিত্রদের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা: বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে ১৩৮টি আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নাম ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। এই তালিকা বিএনপির কাছে পাঠানো হয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে তালিকায় রয়েছেন নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না (বগুড়া-২ ও শরীয়তপুর-১), শহীদুল্লাহ কায়সার (চাঁদপুর-১), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক (ঢাকা-৮), গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) তানিয়া রব (লক্ষ্মীপুর-৪), শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন (ফেনী-৩), ভাসানী জনশক্তি পার্টির শেখ মো. রফিকুল ইসলাম বাবলু (জামালপুর-৫), রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম (কিশোরগঞ্জ-৫)।

হাসনাত কাইয়ূম জানান, তারা ৩০০ আসনের পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা প্রণয়ন করছেন। পাশাপাশি বৃহত্তর নির্বাচনি জোট গঠনের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নতুনভাবে গণতন্ত্র মঞ্চসহ যে কোনো নির্বাচনি জোট হতে পারে। এমনকি এই জোটের আরও বৃহত্তর জোটের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হতে পারে।

২১টি আসন চেয়ে বিএনপির কাছে তালিকা দিয়েছে ১২ দলীয় জোট। এর মধ্যে পিরোজপুর-১ আসন থেকে মনোনয়ন চান জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার। লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবীব লিংকন (কুষ্টিয়া-১), নবাব আলী আব্বাস (মৌলভীবাজার-২), কাজী মো. নাহিদ (কুমিল্লা-১১), সেলিম মাস্টার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪), জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহিউদ্দিন ইকরাম (কুমিল্লা-৬), রশিদ বিন ওয়াক্কাস (যশোর-৫), সৈয়দ তালহা আলম (সুনামগঞ্জ-৩), ন্যাশনাল লেবার পার্টির লায়ন ফারুক রহমান (বরগুনা-২), কল্যাণ পার্টির (একাংশ) সামসুউদ্দিন পারভেজ (নোয়াখালী-৫), বাংলাদেশ এলডিপির তমিজউদ্দিন টিটু (ঢাকা-৫), এমএ বাশার (ময়মনসিংহ-৮), ইসলামী ঐক্যজোটের অ্যাডভোকেট আবদুর রকিব (সিলেট-৬), অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম (ঢাকা-১২), আমিনুল ইসলাম (পিরোজপুর-২), হাফেজ রশিদ আহমাদ, (সুনামগঞ্জ-১), মাওলানা শেখ শরিফ উদ্দীন খাঁ (সিলেট-৪) রয়েছেন।

১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছিলাম। এবারও বিএনপির হাইকমান্ড আমাকে পূর্ণাঙ্গ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। কিভাবে কাজ করব সে বিষয়েও কিছু পরামর্শ দিয়েছে। সেভাবেই এলাকায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেই কাজ করছি।’

১৫ জনের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করেছে গণফোরাম। দু-একদিনের মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে জমা দেবে দলটি। সেক্ষেত্রে আসন সংখ্যা দু-একটি কমবেশি চাইবে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, সম্ভাব্য প্রার্থীর এই তালিকায় রয়েছেন, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী (ঢাকা-৬), ডা. মিজানুর রহমান (মাগুরা-১), একেএম জগলুল হায়দার আফ্রিক (নরসিংদী-৩), অ্যাডভোকেট এসএম আলতাফ হোসেন (ঢাকা-৫), অ্যাডভোকেট সেলিম আকবর (চাঁদপুর-৫), মোস্তাক আহমেদ (কুমিল্লা-৩), অ্যাডভোকেট সুরাইয়া বেগম (বরগুনা-২), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রওশন ইয়াজদানী (ঢাকা-৩), লতিফুল বারী হামিম (ময়মনসিংহ-৯), প্রকৌশলী শ্রাবণী মোস্তফা (ঢাকা-৭), প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মুহাম্মদ উল্লাহ মধু (পটুয়াখালী-৩), সাংগঠনিক সম্পাদক রণজিৎ সিকদার (চট্টগ্রাম-১৬), আলী নুর খান বাবুল (সাতক্ষীরা-২), মামুনুর রশীদ (জয়পুরহাট-২), মির্জা হাসান (গাইবান্ধা-২), অ্যাডভোকেট বিশ্বজিৎ গাঙ্গুলী (ফরিদপুর-৩)।

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট চেয়েছে ৯টি আসন। এ তালিকার রয়েছেন জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ (নড়াইল-২), মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা (কিশোরগঞ্জ-২), জাগপার একাংশের সভাপতি খন্দকার লুৎফর (বগুড়া-১), গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের ডা. সৈয়দ নূরুল ইসলাম (মানিকগঞ্জ-২), বাংলাদেশ মুসলিম লীগের ব্যারিস্টার নাসিম খান (ঢাকা-১৭), বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টির এসএম শাহাদাত (বাগেরহাট-১), ডেমোক্রেটিক লীগের মাহবুব আলম (দিনাজপুর-২) ও এনডিপির আব্দুল্লাহ আল হারুন (ফেনী-৩ আসন)।

বিএনপির কাছে ৬টি আসন চেয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ লেবার পার্টি। ঝালকাঠি-১ আসন থেকে মনোনয়ন চান দলটির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। এছাড়াও তালিকায় রয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতা এসএম ইউসুফ আলী (গাজীপুর-৫), অ্যাডভোকেট জোহরা খাতুন জুঁই (ঢাকা-৭), রাকেশ রহমান (ঢাকা-৬), খন্দকার মিরাজুল ইসলাম (ফরিদপুর-১) ও সৈয়দ মো. মিলন (ঝালকাঠি-২)।

এছাড়া খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির কাছে ১৩ প্রার্থীর নাম দিয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। দলটির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ এ তালিকা লন্ডনে সরাসরি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে দিয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থসহ (ঢাকা-১৭ ও ভোলা-১) ৫টি আসন ও এনডিএমের ববি হাজ্জাজ (ঢাকা-১৩) ও মোহাম্মদ মমিনুল আমিনসহ (রাজবাড়ী-২) ১০টি আসন চেয়ে বিএনপির কাছে প্রার্থীর তালিকা দিয়েছেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার