২০০ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী চূড়ান্ত : ঘোষণা এ মাসেই

জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৪৮ এএম
ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ২০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। চলতি মাসেই এ আসনগুলোতে অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে। বাকি আসনগুলোর একটি অংশে সমমনা ও জোট শরিক দলের প্রার্থীদের জন্য ছেড়ে দেবে। বাকি আসনগুলোতে দলের প্রার্থী ঠিক করতে একটু সময় লাগবে। ওই আসনগুলোতে দলের অধিক সংখ্যক প্রার্থী নির্বাচন করতে চাইছেন। দলীয় সূত্র জানায়, দু’একটি ছাড়া নভেম্বরে ৩০০ আসনেই দল এবং জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চূড়ান্ত প্রার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে বলে বিএনপি’র দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
ওদিকে চলতি মাসের মধ্যে প্রার্থী চূড়ান্ত এবং তাদেরকে নির্বাচনী গ্রিন সিগন্যাল দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। গত সোমবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেন, প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এখনো চূড়ান্ত হয়নি। খুব শিগগিরই দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্য থেকে অধিকাংশ আসনে একক প্রার্থী দেয়া হবে। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে নেতারা বলেন- দেশের প্রত্যেক আসনে একাধিক কিংবা কোন আসনে ১৫ থেকে ২০ জনের মতো করে প্রার্থী রয়েছেন। সেখান থেকে সর্বাপেক্ষা পরিচ্ছন্ন, জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং অপেক্ষাকৃত তরুণদের প্রার্থী বাছাইয়ে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। প্রায় চার কোটি ভোটারের মনোভাবকে কাজে লাগাতে এবং তাদের সমর্থন আদায়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ বাদ পড়তে পারেন বলে বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। তবে কোনো প্রকার কোন্দল যাতে সৃষ্টি না হয় সেদিকেও কড়া নজর রাখার বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। ইতিমধ্যে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলীয় মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এখন অনানুষ্ঠানিকভাবে শুধুমাত্র প্রার্থীকে জানিয়ে দেয়া হবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সারা দেশে পাঁচটি জরিপ করেছে দলটি। প্রতিটি ওয়ার্ড এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে জরিপ চালিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে এই জরিপ করা হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সহযোগিতা নিয়ে মনোনয়নের প্রক্রিয়াটি তারেক রহমান নিজেই দেখভাল করছেন।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে প্রক্রিয়া চলছে। ‘চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে- নাকি শুধুমাত্র প্রার্থীকে জানিয়ে দেয়া হবে’- তা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে বলেও জানিয়েছেন খন্দকার মোশাররফ।
অন্যদিকে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ও মিত্রদের সঙ্গে আসন নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে বিএনপি। চলতি মাসেই সমমনাদের সঙ্গে এ বিষয়ে ফয়সালায় পৌঁছাতে চায় দলটি। এরই অংশ হিসেবে সেপ্টেম্বরে সমমনাদের কাছে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা চেয়েছে। দুই-একটি দল ও জোট ছাড়া প্রায় সবাই তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা বিএনপি’র কাছে দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এসব তালিকা নিয়ে এখন সমমনাদের সঙ্গে আলোচনা করবে দলটি। সম্প্রতি বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সমমনাদের ৫০টি আসন ছাড়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে সমমনাদের কতো আসন ছাড়া হবে তা তাদের সঙ্গে দর-কষাকষির সময় নির্ধারিত হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংসদ নির্বাচনে বিএনপি কতো আসন ছাড়বে, সেটা আলোচনার ও বিবেচনার বিষয়। প্রত্যেকটি আসনে আমাদের একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। অনেক আসনে ১০ থেকে ১২ জনের মতো প্রার্থী আছে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠক: জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তির জন্য সংসদ নির্বাচনের দিনে একইসঙ্গে গণভোট নেয়ার প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটি। তাদের ভাষ্য, গণভোটের ‘হা-‘না’ ফলাফলের ভিত্তিতে নির্বাচিত পরবর্তী সংসদ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে এবং তা বাস্তবায়ন করবে। রাজনৈতিক ঐকমত্য হওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলোর ভিত্তিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বিএনপি’র অঙ্গীকার।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সর্বশেষ বৈঠকের আলোচনার সারাংশ বৈঠকে তুলে ধরেন। স্থায়ী কমিটিতে সেটি নিয়ে বিশেষ করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সংসদ নির্বাচনের দিনে একইসঙ্গে গণভোট নেয়ার প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মনে করেন, গণভোটের জন্য এখন আর সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন নেই। রেফারেন্ডামের (গণভোট) যে আর্টিকেল ১৪২, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার সেটা উঠিয়ে দিয়েছিল, যেটা হাইকোর্টের রায়ের মধ্যদিয়ে প্রতিস্থাপন হয়েছে। ফলে সংবিধান বা অন্যান্য জাতীয় ইস্যুতে গণভোট করা যাবে না- এমন কোনো বিধান নেই। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তির জন্য গণভোটের যে আলোচনা বা প্রস্তাব এসেছে- সেটি যৌক্তিক। সরকার এখন অধ্যাদেশ জারি করে অথবা আরপিওতে সংশোধনী এনে গণভোট পরিচালনা করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতা দিতে পারে। নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একইসঙ্গে গণভোট করতে পারে। এতে একই আয়োজন, একই লজিস্টিকস এবং একই অর্থ ব্যয়ের সুবিধা পাওয়া যাবে।
ওদিকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জামায়াতে ইসলামী জাতীয় নির্বাচনের আগে পৃথকভাবে গণভোটের আয়োজন চায়। এ বিষয়টি নিয়েও স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। নেতারা মনে করেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের সম্মতি নিতে পৃথকভাবে গণভোট আয়োজনের অসুবিধা রয়েছে। সেটি হলো- আরেকটি সংসদ নির্বাচনের মতো বিশাল আয়োজনের জন্য দেশকে প্রস্তুত করতে হবে। নির্বাচনকে বিলম্বিত করা এর একটি উদ্দেশ্য হতে পারে। একইদিনে দুটি ব্যালট দিলে জনগণ বিভ্রান্ত হতে পারে বলে অনেকের যে ধারণা, সেটির সঙ্গেও ভিন্নমত পোষণ করে বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম। এ ছাড়া বৈঠকে সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেয়া তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার নিয়েও আলোচনা হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা একযোগে তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারটির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।