আ.লীগের রাজনীতি ও জামায়াতের জোট নিয়ে যা বললেন তারেক রহমান

জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:০৯ পিএম

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর কোনো গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এতে তিনি আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির ও বিবিসি বাংলার সিনিয়র সাংবাদিক কাদির কল্লোল।
জামায়াতের সম্ভাব্য জোট নিয়ে উদ্বেগ নেই
জামায়াতে ইসলামীতের প্রশ্নে তারেক রহমান বলেন, বিষয়টা হচ্ছে যে দেখুন বাংলাদেশের স্বীকৃত যে নিয়ম, আইন-কানুন আছে, এগুলোর ভেতরে থেকে যদি কেউ রাজনীতি করে অবশ্যই করতে পারে।
দেশের যে আইন কানুন আছে তার ভেতরে থেকে যারা রাজনীতি করবে, অবশ্যই সবার রাজনীতি করার অধিকার আছে। এবং আমরা তো চাই সবাই রাজনীতি করুক। বহুদলীয় রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ২০২৪ সালে স্বৈরাচার যেই হত্যাগুলো করেছে দেশ স্বাধীনের পরে যখন তারা সরকার গঠন করেছিল ক্ষমতায় ছিল তখনও যেসব লুট তারা করেছে, খুন-গুম তারা করেছে। বিগত ১৭ বছর গুম খুন যারা করেছে, এর জবাব যেরকম তাদেরকেই দিতে হবে, ঠিক একইভাবে ৭১ সালে কোনো রাজনৈতিক দল যদি তাদের কোনো বিতর্কিত ভূমিকা থেকে থাকে, তাহলে তাদের জবাব তারাই দেবেন। ওটা তো আর আমি দিতে পারব না। আমারটা আমি দিতে পারব। অন্যেরটা তো আমি দিতে পারব না।
তারেক রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রসঙ্গে কথা বলেছেন।
জুলাই গণভুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ব্যাপারে বিএনপির অবস্থানের বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, দেখুন, আমি ১৭ বছর ধরে প্রবাস জীবনে আছি। ওয়ান ইলেভেন, তথাকথিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় যেই শারীরিক নির্যাতন আমার উপরে হয়েছিল তারপরে চিকিৎসার জন্য আমি এ দেশে আসি। আমি যখন এখানে আসি, আমার ভাইকে আমি রেখে এসেছিলাম ছোট ভাইকে। আমি যখন এ দেশে আসি আমার সুস্থ মাকে আমি রেখে এসেছিলাম। একটি ঘর রেখে এসেছিলাম। যেই ঘরে আমি এবং আমার ছোট ভাই বড় হয়েছি। যেই ঘরে আমার বাবার স্মৃতি ছিল। যেই ঘরে আমাদের দুই ভাইয়ের সন্তানরা জন্মগ্রহণ করেছিল। যেই ঘরে আমার মায়ের বহু স্মৃতি ছিল। সেই স্মৃতিগুলোকে ভেঙে চুড়ে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে ভাইকে আমি রেখে এসেছিলাম সেই ভাই এখন আর নেই। যেই সুস্থ মাকে রেখে এসেছিলাম সেই সুস্থ মা এখন সুস্থ নেই। শুধু অসুস্থই নন, উনার উপরে মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনও করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি আমার পরিবারের যেই কাহিনী আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। এটিকে আপনারা কাহিনী বলুন, বা সংগ্রাম বলুন যেটাই বলুন না কেন, এটি শুধু আমার কাহিনী না, বা আমার পরিবারের কাহিনী না। এরকম কাহিনী বাংলাদেশের শত না, হাজার হাজার পরিবারের।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, যে পরিবারের বাবা, যে পরিবারের ভাই, যে পরিবারের স্বামী তার ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, হ্যান্ডকাফ পারা অবস্থায় হাসপাতালের বারান্দায় মারা গিয়েছে, তা না হলে হ্যান্ডকাফ পারা অবস্থায় জেলের ভেতরে মারা গিয়েছে, সহায় সম্পত্তি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে- এসব অন্যায়, এসব হত্যা, এসব নির্যাতনের জন্য যারা দায়ী, যারা এসবের হুকুম দিয়েছে, তাদের প্রত্যেকের বিচার হতে হবে। এটি প্রতিশোধের কোনো বিষয় নয়। এটি ন্যায়ের কথা। এটি আইনের কথা। অন্যায় হলে তার বিচার হতে হয়। কার সম্পর্কে কী মনোভাব সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়।
আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নে তারেক রহমান বলেন, দল হিসেবে তারা যদি অন্যায় করে থাকে তাহলে দেশের আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে। দেশের আইন সিদ্ধান্ত নেবে।
তিনি আরও বলেন, দল হিসেবে যদি অন্যায় হয়ে থাকে তাহলে তাই হবে। সোজা কথায় অন্যায়কারীর বিচার হতে হবে। তো সেটি ব্যক্তি হোক, সেটি দলই হোক। যারা জুলুম করেছে তাদের তো বিচার হতে হবে। সেটি ব্যক্তিও হতে পারে। সেটি দলও হতে পারে।
আওয়ামী লীগের কি বাংলাদেশের রাজনীতিতে থাকা উচিত কিনা প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার মনে হয় আপনার কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তরে আমি মনে হয় বলেছিলাম যে- আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্য। আমরা বিশ্বাস করি এবং বিভিন্ন সময় বলিও আমরা বিএনপি যারা করি আমাদের রাজনৈতিক সব ক্ষমতার উৎস জনগণ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং বিশ্বাস করতে চাই- যে দলের ব্যক্তিরা বা যে দল মানুষ হত্যা করে, মানুষ গুম করে, মানুষ খুন করে, দেশের মানুষের অর্থসম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে- জনগণ তাদেরকে সমর্থন করতে পারে বলে আমি মনে করি না। জনগণ যদি সমর্থন না করে কোনও রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক সংগঠনকে তাদের টিকে থাকার তো কোনো কারণ আমি দেখি না। যেহেতু জনগণের শক্তিতে আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের সিদ্ধান্তে আমরা বিশ্বাস করি। জনগণের সিদ্ধান্তের উপরে আমরা আস্থা রাখতে চাই। এ বিষয়ে সবচেয়ে বড় বিচারক আমি মনে করি জনগণ।